উৎসবের রং হৃদয়ে ধারণ করে ৩৩ বছরে পদার্পণ

দৈনিক মাথাভাঙ্গা’র আজ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী.....................

স্টাফ রিপোর্টার: উৎসবের রং গায়ে মেখে নয়, হৃদয়ে ধারণ করেই আজ দৈনিক মাথাভাঙ্গা পরিবার ৩২ পেরিয়ে ৩৩ বছরে পদার্পণ উল্লাসে মাতোয়ারা। ১৯৯১’র আজকের দিনে দৈনিক মাথাভাঙ্গা আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে। বহু চড়াই উৎরায় মাড়িয়ে বহু ঘেরাটোপ উপেক্ষা করে পাঠককূলকে পাশে নিয়ে দৃঢ়চিত্তে এগিয়ে চলেছে চুয়াডাঙ্গা থেকে প্রকাশিত আঞ্চলিক সংবাদপত্র দৈনিক মাথাভাঙ্গা। আজকের শুভ দিনে সকলকে সালাম ও শুভেচ্ছা।

মহাকালের কাছে সময়ের পরিক্রমায় ৩২ বছর তেমন কিছু না হলেও প্রহর কিম্বা দিনের গুনতিতে দীর্ঘপথ। বিশেষ করে চুয়াডাঙ্গার মত একটি জেলা থেকে ৩২ বছর আগে একটি দৈনিক পত্রিকা প্রকাশের হিম্মত হিমালয় জয়ের চেয়েও বেশিকিছু ছোঁয়ার মতোই ছিলো। তখন সাপ্তাহিক কয়েকটির ছাড়পত্র থাকলেও তা প্রকাশ পেতো, পেতো না অবস্থায় হাবুডুবু খেতো। সেই সময় চুয়াডাঙ্গা থেকে দৈনিক পত্রিকা প্রকাশ? ১৯৯১ সালের ২৬ মার্চ প্রথম প্রস্তাবিত সংখ্যা চুয়াডাঙ্গার পাঠককূলের সামনে মেলে ধরা হলে নানাজনে নানা অভিমত ব্যাক্ত করলেও বাধা বিঘœ পেরিয়ে ছাড়পত্র পাওয়ার পর ১০ জুন থেকে শুরু হয় নিয়মিত পথচলা। স্বত্ত্বাধিকারী, প্রকাশক, মুদ্রাকর সরদার আল আমিন তখন ২২ বছরের টগবড়ে যুবক। চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদ আঙিনায় বসে টুকটাক সাহিত্য চর্চার পাশাপাশি ৩ বন্ধুকে পাশে পেয়ে পত্রিকা প্রকাশের স্বপ্ন দেখেন। এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রথমে হামিদুল হক মুন্সিকে সম্পাদক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হলেও ছাড়পত্র পেতে বাধাপ্রাপ্ত হতে হয়। পরবর্তীতে সাইফুল ইসলাম পিনুকে সম্পাদক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে মেলে ছাড়পত্র। তখন তিনি ছিলেন সদর উপজেলা পরিষদের দ্বিতীয় বারের মত নির্বাচিত চেয়ারম্যান। ১০ জুন আনুষ্ঠানিক যাত্রার শুভ উদ্বোধন করেন তৎকালীন দাপুটে সাংবাদিক ভয়েস অব আমেরিকার প্রতিনিধি গিয়াস কামাল চৌধুরী। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন করে কুসংস্কার, সন্ত্রাস, দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনের লক্ষ্যে ন্যায় প্রতিষ্ঠার পক্ষে কলম ধরার প্রত্যয়ে দৈনিক মাথাভাঙ্গার পথচলা শুরু হয়। রক্তাক্ত জনপদ হিসেবে কলঙ্কের তিলকে চিহ্নিত চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুর ও ঝিনাইদহসহ কুষ্টিয়ার কিছু অংশের অসংখ্য পাঠককে পাশে নিয়ে দৈনিক মাথাভাঙ্গা পরিবারের যাত্রা ক্রমন্বয়ে তরান্বিত হয়। সন্ত্রাসীদের রক্তচক্ষুকে তোয়াক্কা না করে মাথাভাঙ্গা পরিবার এগিয়ে চলে মাথা উঁচু করে। একের পর এক খুনের নেপথ্য উন্মোচন করে খুনিদের যেমন আইনে সোপর্দ করতে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাসমূহের সহায়ক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় মাথাভাঙ্গার কলম যোদ্ধারা, তেমনই কুসংস্কারমুক্ত সমাজ গঠনে সর্বদা স্বোচ্চার হয়ে ওঠে। পাঠককূলের প্রত্যশা পূরণে দৈনিক মাথাভাঙ্গার সাহসী অবদান দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে আঞ্চলিক পত্রিকায় উন্নীত করে। ২০০৭ থেকে ইন্টারনেট সংস্কারণ শুরু হয়। খুলনা বিভাগের যে কোন সংবাদপত্রের ইন্টারনেট সংস্কারণে উন্নীত হওয়া ছিলো প্রথম।

পদ্মার অন্যতম শাখা নদী মাথাভাঙ্গা। ১৯৯১ সালে যখন চুয়াডাঙ্গা থেকে দৈনিক পত্রিকা প্রকাশের উদ্যোগ নেয়া হয় তখন দেশে ছিলো প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এ সরকার প্রধান তখন ঘোষণা দেন পত্রিকার ডিক্লারেশন জেলা প্রশাসকের নিকট থেকেই নেয়া যাবে। কাল বিলম্ব না করে সেই সুযোগটা কাজে লাগাতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া। চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুর ও কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার অন্যতম প্রাণ মাথাভাঙ্গা নদীর নামকরণের প্রস্তাবই গৃহীত হয়। মাথাভাঙ্গা নদীর উৎসমুখে জেগে ওঠা চরে গড়ে উঠেছ গ্রাম। তারপরও ধীরে বয়ে চলেছে মাথাভাঙ্গা। নিজের বুকে থাকা অসংখ্য ঝর্ণা থেকে উদগিরণ হওয়া স্বচ্ছপানির প্রবাহ কতদিন থাকবে তা অনিশ্চিত। এরপরও নদী রক্ষায় নেয়া হচ্ছে নানা উদ্যোগ। দৈনিক মাথাভাঙ্গা পরিবার যেমন চায় মাথাভাঙ্গা নদীর যৌবন পুনরুদ্ধার, তেমনই দৈনিক মাথাভাঙ্গার অগ্রযাত্রায় সর্বস্তরের পাঠক, শুভান্যুধায়ীসহ বিজ্ঞাপনদাতাদের সহযোগিতার ধারা অব্যাহত রাখতে। দৈনিক মাথাভাঙ্গার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভক্ষণে আবারও সকলকে সালাম ও শুভেচ্ছা।

দৈনিক মাথাভাঙ্গা’র যাত্রা শুরু হয় লেটারহ্যান্ড কম্পোজে। ছাপা হতো ট্যাডেল প্রেসে। ২০০০ থেকে আধুনিক ছাপাখানায় ছেপে ডিমাই সাইজ পাঠকের হাতে পৌঁছুতো। কয়েক বছরের মাথায় কলেবর বর্ধিত হয়। ২০/৩০ মাপের কাগজে ছেপে পাঠককূলের চাহিদা পূরণের সর্বাত্মক চেষ্টা করা হয়। ২০১২ থেকে নিজস্ব ছাপাখানায় আরও বেশি সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে দৈনিক মাথাভাঙ্গা। ২০১৮ থেকে ৪ রঙে সজ্জিত হতে শুরু করে। এক বছরে মাথায় কোভিড-১৯ এসে সেই উদ্যোগে ভাটা ফেলে। করোনা গেলেও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পরোক্ষ প্রভাবে হাঁপিয়ে উঠেছে দেশের সংবাদপত্র শিল্প। এরপরও দৈনিক মাথাভাঙ্গা অক্ষুণœ রেখেছে তার নিজস্ব গরিমা। প্রকাশনা অব্যাহত থাকলেও বাড়তি ব্যায় সংকুচনের কারণেই মূলত প্রতিষ্ঠাবাষির্কী উদযাপনে বাড়তি আয়োজন থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ফলে এবারও দৈনিক মাথাভাঙ্গার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ঘটা করে উৎসবের আয়োজন নেই। সে কারণে, হৃদয়ে উৎসবের আমেজ নিয়ে শুরু হচ্ছে ৩৩ বছরের পথে যাত্রা।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More