একাধিক তীব্র শৈত্যপ্রবাহের পূর্বাভাস : ঘন কুয়াশায় দুর্ভোগে দেশের মানুষ 

ফেরির অপেক্ষায় অ্যাম্বুলেন্সে মারা গেলেন মেহেরপুরের নজরুল : গাংনীতে আগুনে দগ্ধ হয়ে বৃদ্ধের মৃত্যু

চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন স্থানে শীতার্ত মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ অব্যাহত

স্টাফ রিপোর্টার: ঋতুচক্রে প্রকৃতিতে শীতকাল এসেছে পক্ষকালের বেশি আগে। দেশবাসী শীতের তীব্রতা টের পেতে শুরু করেছে পৌষের মাঝে এসে। চুয়াডাঙ্গাসহ উত্তরাঞ্চল কাঁপছে শীতের দাপটে। রাজধানী ঢাকাতেও ক্রমশ জেঁকে বসতে শুরু করেছে শীত। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে চুয়াডাঙ্গা, পঞ্চগড়, রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ ও নীলফামারী জেলার ওপর দিয়ে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। নতুন বছরের শুরুতে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে বাড়বে শীতের দাপট। জানুয়ারি মাস জুড়ে তিন থেকে চারটি শৈত্যপ্রবাহের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। গতকাল রোববার চুয়াডাঙ্গাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার সড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীরে ধীরে যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে। রোববার রাতে কুয়াশার ঘনত্ব বেড়ে গেলে নৌ-দুর্ঘটনা এড়াতে রাত আড়াইটা থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেয় ঘাট কর্তৃপক্ষ। এ সময় দৌলতদিয়া প্রান্তে শতাধিক যানবাহন ফেরি পারের অপেক্ষায় ঘাট এলাকায় আটকা পড়ে। এদিকে পাটুরিয়ায় ফেরি বন্ধ থাকায় পারাপারের অপেক্ষায় থাকা একটি অ্যাম্বুলেন্সে এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। রোববার সকাল ৬টার দিকে পাটুরিয়ার ৪ নম্বর ঘাটে এ ঘটনা ঘটে। অন্যদিকে,  মেহেরপুরের গাংনীতে আগুন পোহানোর সময় দগ্ধ হয়ে জামেলা খাতুন নামে এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। গতকাল রোববার সকালে বাড়ির উঠানে আগুন পোহানোর সময় তিনি দগ্ধ হন। এদিকে, গতকাল রোববার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো তেতুলিয়া ও শ্রীমঙ্গলে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো ১৩ ডিগ্রি এবং সর্বোচ্চ ছিলো ২৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো ১৪ ডিগ্রি সিলসিয়াস এবং সর্বোচ্চ ছিলো ২৪ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো টেকনাফে ২৯ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিকে চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন স্থানে শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ  অব্যাহত রয়েছে।

আবহাওয়া দপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেন, এমন তাপমাত্রা আরো তিন দিন স্থায়ী হবে। ৩-৪ জানুয়ারির পরে গিয়ে তাপমাত্রা একটু বাড়বে। তবে আবার সেটি কমে যাবে। জানুয়ারি শীতলতম মাস। এই মাসে তাপমাত্রা অনেক কমে যায়। এই মাসেও মৃদু থেকে মাঝারি মানের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাবে সারাদেশে। কোথাও কোথাও তীব্র হতে পারে। তবে উত্তরবঙ্গে তাপমাত্রার পারদ বেশি নামতে পারে।

এদিকে, মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ফেরিঘাটে ঘন কুয়াশায় আটকা পড়ে প্রাণ গেলো নজরুল ইসলাম (৬৫) নামের এক রোগীর। হাসপাতালফেরত ওই রোগী অ্যাম্বুলেন্সে করে ফেরি পারের অপেক্ষায় ছিলেন। শনিবার রাত ৩টার দিকে ৪ নম্বর ঘাটে এ ঘটনা ঘটে। নজরুল ইসলাম মেহেরপুর সদর উপজেলার মৃত নবী ম-লের ছেলে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয়ের মহাব্যবস্থাপক শাহ মোহাম্মদ খালেদ নেওয়াজ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

খালেদ নেওয়াজ জানান, ঘনকুয়াশার কারণে দিবাগত রাত আড়াইটা থেকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়। রাত সাড়ে ৩টার দিকে নজরুল ইসলামকে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সটি পাটুরিয়া ঘাটে পৌঁছায়। নজরুল ইসলাম ঢাকার বক্ষব্যাধি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা শেষে গ্রামের বাড়ি মেহেরপুরে যাচ্ছিলেন। তিনি জানান, ঢাকায় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তার অবস্থা দেখে চিকিৎসকরা গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু বাড়িতে পৌঁছানোর আগে পাটুরিয়া ঘাটে অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে তার মৃত্যু হয়। তার মৃত্যু নিয়ে পরিবারের সদস্যরা কোনো অভিযোগও করেনি। তাছাড়া কুয়াশা প্রাকৃতিক দুর্যোগ এ বিষয়ে কারো হাত নেই বলে জানান তিনি।

চুয়াডাঙ্গায় ‘মানুষ মানুষের জন্য’ এ প্রতিপাদ্যে শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল রোববার বিকেলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ব্যাটমিন্টন গ্রাউন্ডে ওই কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে চুয়াডাঙ্গা লেডিস ক্লাব। চুয়াডাঙ্গা লেডিস ক্লাবের সভাপতি ও জেলা প্রশাসক পত্নী মেহেনাজ খান বাঁধন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে শীতার্তদের মধ্যে কম্বল বিতরণ করেন। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা লেডিস ক্লাবের সহসভাপতি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সাজিয়া আফরিন, লেডিস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পত্নী মাহফুজা আক্তার মুন্নী ও কোষাধ্যক্ষ সহকারী কমিশনার নুর পেয়ারা বেগমসহ জেলা প্রাশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তার সহধর্মীনিবৃন্দ। পরে শতাধিক অসহায় ও দুস্থ শীতার্ত মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়।

ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, আলমডাঙ্গার কুমারী ইউপি চেয়ারম্যান পিন্টুর উদ্যোগে গরিব অসহায় ও দুস্থদের মাঝে শীতবস্ত্র হিসেবে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল বেলা ১০টার দিকে ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান পিন্টু তার নিজ এলাকায় গরিব দুঃখী, শীতার্ত অসহায় ১৫০ পরিবারের মধ্যে একটি করে কম্বল বিতরণ করেন। অনুষ্ঠানে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আবু সাঈদ পিন্টু। বিশেষ অতিথি ছিলেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি শামীম, সাধারণ সম্পাদক রহমত ম-ল, ইলিয়াস হোসেন, মোশারফ হোসেন, আব্দুল লতিফ, আলিহীম, ডালিম, আব্দুর রশিদ, শাজেদুল হক, আইনাল হক, ইনামুল হক, শুকুর আলী, মহত, রবিউল হক, শহিদুল, আলেক ম-ল, আনোয়ার হোসেন, ইউপি সদস্য জাহানারা বেগম, রুকসানা, নুপুর প্রমুখ।

কার্পাসডাঙ্গা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গায় অসহায় ও দুস্থ শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল রোববার বিকেল ৪টায় কার্পাসডাঙ্গা এমএম ইটভাটা প্রাঙ্গনে কার্পাসডাঙ্গা ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জাব্বার খাবলীর নিজ উদ্যোগে অসহায় ও দুস্থদের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কার্পাসডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আতিয়ার রহমান, ইউপি হিসাবরক্ষক ও কম্পিউটার অপারেটর মো. হাসিব, মো. মেসবাহুর রহমান, শাহেদ আলী, ইকরামুল, স¤্রাট, জাহিদ প্রমুখ।

জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, সারা বাংলা ৮৮ সুখে দুখে পাশাপাশি এ স্লোগান নিয়ে গতকাল রোববার জীবননগরে সারা বাংলা ৮৮ চুয়াডাঙ্গা প্যানেলের উদ্যোগে শীতার্ত ও হতদরিদ্রদের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। জীবননগর উপজেলা চেয়ারম্যান হাজি হাফিজুর রহমান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে অর্ধশতাধিক শীতার্তদের হাতে এ শীতবস্ত্র তুলে দেন। সারা বাংলা ৮৮ চুয়াডাঙ্গা প্যানেলের সহকারী কো-অর্ডিনেটর সাংবাদিক এম আর বাবুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও প্যানেলের সহকারী কো-অর্ডিনেটর আব্দুস সালাম ঈশা ও উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আয়েশা সুলতানা লাকি। প্যানেলের সহকারী কো-অর্ডিনেটর মোমিন উদ্দিন মাস্টার, সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক যাদব কুমার প্রামাণিক, এনজিও কর্মকর্তা হাসানুজ্জামান খান পলাশ, সহকারী অধ্যাপক সাজ্জাদ হোসেন, ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম সহিদ, ইকবাল উদ্দিন একরাম, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম ও আবু বাক্কা প্রমুখ এসময় উপস্থিত ছিলেন।

গাংনী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মেহেরপুর গাংনীর চেংগাড়া গ্রামে তীব্র শীত নিবারণে আগুন পোহানোর সময় দগ্ধ হয়ে জামেলা বেগম (৭০) নামে এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। রোববার দুপুরে ১২টার দিকে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। জামেলা বেগম উপজেলার চেংগাড়া গ্রামের বনর উদ্দিনের স্ত্রী।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সকালে ঘুম থেকে জেগে বৃদ্ধা জামেলা খাতুনের বাড়ির উঠানে খড়কুটো দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে পোহানোর সময় তার পরনের কাপড়ের আঁচলে আগুন লাগে। এ সময় তার চিৎকারে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। কর্তব্যরত চিকিৎসক বৃদ্ধার অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দগ্ধ জামিলা বেগমের মৃত্যু হয়।

গাংনী থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক জানান, জামেলা বেগম নামে এক বৃদ্ধা আগুন পোহানোর সময় দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন বলে শুনেছি। তার মরদেহ হাসপাতাল থেকে বাসায় নিয়ে এসেছে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More