কনকনে ঠান্ডা বাতাসে থমকে গেছে জীবন : হাসপাতালে বাড়ছে রোগী

কুয়াশা ভেদ করে ঠিকমতো তাপ ছড়াতে পারছে না সূর্য : চরম শীত অনুভূত
স্টাফ রিপোর্টার: বাংলা দিনপঞ্জি অনুযায়ী গত শনিবার পয়লা পৌষ থেকে শীতকাল শুরু হয়েছে। কিন্তু চুয়াডাঙ্গায় তারও আগে থেকে ঘন কুয়াশা ও কনকনে ঠান্ডা বাতাসে জনজীবন অনেকটাই থমকে গেছে। অনেকেই শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়াসহ নানা ধরনের ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এসব রোগে শিশু ও বয়স্করা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। চুয়াডাঙ্গার পৌর এলাকার হাটকালুগঞ্জে অবস্থিত প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার গতকাল সোমবার জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কর্কটক্রান্তির রেখায় অবস্থিত এ জেলায় এর আগে শুক্রবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিলো ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা চলতি মরসুমে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান জানান, কুয়াশা ভেদ করে ঠিকমতো তাপ ছড়াতে পারেনি সূর্য। সেই সঙ্গে উত্তরের হিমেল হাওয়ার কারণে এদিনও চরম শীত অনুভূত হয়েছে। গত সোমবার থেকে তাপমাত্রা কমতে থাকায় ১০০ শয্যার সদর হাসপাতালসহ জেলার তিনটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বেসরকারি হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের চেম্বারে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত মানুষের ভিড় বেড়েছে। বিশেষ করে সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া, শিশু ও মেডিসিন ওয়ার্ডগুলোতে ধারণক্ষমতার কয়েক গুণ বেশি রোগীকে চিকিৎসা নিতে দেখা যায়। এদিন বহির্বিভাগ বন্ধ থাকায় জরুরি বিভাগের চিকিৎসকদের রোগী সামলাতে হিমশিম খেতে হয়। সরেজমিনে শিশু ওয়ার্ডে দেখা গেছে, সেখানে ১৪ শয্যার বিপরীতে ৪৬ শিশু চিকিৎসাধীন। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত এক বছর বয়সী শিশু বায়েজিদকে মা বিউটি খাতুন ও নানি মাছুরা খাতুন শান্ত করার চেষ্টা করছিলেন। কখনো মা, আবার কখনো নানি শিশুটিকে কোলে নিয়ে ওয়ার্ডের এমাথা থেকে ওমাথায়, আবার বারান্দায় নিয়েও থামাতে পারছিলেন না। ১০ মাস বয়সী স্নিগ্ধা ডান হাত দিয়ে বাঁ হাতের ক্যানুলা খুলে ফেলার চেষ্টা করলে সেখান থেকে রক্ত বের হয়ে যায়। তার কান্না থামাতে দাদি সুফিয়া ও মা ময়না খাতুন দিশাহারা। এমন অবস্থা আরও কয়েকটি শিশুকে দেখা যায়। শিশু ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফ নার্স রেহেনা পারভীন জানান, চলতি শীত মরসুমে কোনো কোনো দিন প্রায় ১০০ শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে। যাদের বেশির ভাগই নিউমোনিয়াসহ শাসকষ্টের সমস্যা। শিশু ওয়ার্ডের মতোই মেডিসিন ওয়ার্ডগুলোতে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীদের চাপ বাড়ছে। মহিলা (মেডিসিন) ওয়ার্ডে ১২ শয্যার বিপরীতে ৫৯ জন এবং পুরুষ (মেডিসিন) ওয়ার্ডে ১৩ শয্যার বিপরীতে ৭১ জনকে পাওয়া যায়। অর্থাৎ শিশু ও মেডিসিন ওয়ার্ডে ৩৯ শয্যার বিপরীতে এদিন ১৭৬ জনকে চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে। মহিলা (মেডিসিন) ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফ নার্স লতিফা খাতুন জানান, মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা অ্যাজমা, হাঁপানিসহ শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত। ১৬ ডিসেম্বর ছুটির দিন হওয়ায় তুলনামূলক রোগীর চাপ কিছুটা কম। বুধ ও বৃহস্পতিবার রোগীর ব্যাপক চাপ ছিলো, আজও চাপ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। দামুড়হুদা উপজেলার ইব্রাহিমপুর গ্রাম থেকে ভ্যানচালক জহরুল ইসলাম শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত বাবা আলী হোসেনকে নিয়ে শনিবার সদর হাসপাতালে আসেন। তিনি বলেন, ‘বাপের হাঁপাইনে রোগ। কদিন ধরে য্যারাম জার বাড়চে, বাপের স্যারাম হাঁপানিউ বাড়চে। সহ্য কত্তি পাচ্চেলো না। তাই বাদ্য হয়ি হাসপাতালি নি আসলাম। দেকি কী হয়।’ সদর হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীদের জন্য আলাদা কোনো শয্যা নেই। তবে শনিবার ৫৬ জন ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন। এই ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফ নার্স কহিনুর বেগমের ভাষ্যমতে, গত তিনদিনে ২০৮ জন শীতকালীন রোটাভাইরাসজনিত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। আক্রান্তদের বেশির ভাগই শিশু। আরএমও ডা. ওয়াহিদ মাহমুদ রবিন জানান, প্রতিবছরই শীতকালে বড়দের অ্যাজমা ও হাঁপানি এবং শিশুদের নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিসসহ শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দেয়। এ বছর বেশ আগেভাগেই এমন রোগী আসছে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More