করোনায় আরও আক্রান্ত চুয়াডাঙ্গায় ৫ মেহেরপুরে ৪ ও ঝিনাইদহে ৩৭ জন 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় দুই নারীসহ নতুন করে আরও ৫ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। তারা সকলেই নিজ নিজ বাড়িতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ নিয়ে জেলায় ৩০৭ জন করোনায় আক্রান্ত হলেন। করোনার উপস্থিতি পরীক্ষার জন্য নতুন ৪০ জনের নমুনা প্রেরণ করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা জেলায় আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন আরও ৫ জন। এদিকে মেহেরপুরে পুলিশ কর্মকর্তা ও শিক্ষকসহ জেলায় আরও ৪ জন নতুন করে করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হয়েছেন। এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১০৮ জন। ঝিনাইদহে নতুন করে আরও ৩৭ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে ঝিনাইদহ জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ৪৫২ জন। কুষ্টিয়ায় একদিনে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে ৪৮ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে দাঁড়ালো এক হাজার ২২ জনে। কুষ্টিয়া পিসিআর ল্যাবসূত্রে জানা গেছে, সোমবার নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টে চুয়াডাঙ্গা জেলায় ৫ জন, ঝিনাইদহ জেলায় ৩৭ জন, নড়াইল জেলার ৩২ জন ও মেহেরপুর জেলায় ৪ জন নতুন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া চুয়াডাঙ্গা জেলায় ৩ জনের ফলোআপ রিপোর্ট পজেটিভ।
চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন অফিসসূত্রে জানা যায়, সোমবার রাতে কুষ্টিয়া পিসিআর ল্যাব থেকে চুয়াডাঙ্গার ২৯টি করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট আসে। এর মধ্যে ৫ জনের শরীরে করোনা পজেটিভ হয়েছে। আক্রান্ত ৫ জনের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার বেলগাছি ঈদগাপাড়ার এক ব্যক্তি করোনা পজেটিভ হয়েছেন। তিনি কয়েকদিন আগে জ্বরে আক্রান্ত হলে রোববার সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। নমুনা দেয়ার পর তার করোনা পজেটিভ রিপোর্ট আসে। তিনি বড়বাজারের নিচের বাজারে একটি কাঁচামালের আড়তে কাজ করতেন। পৌর এলাকার ইসলামপাড়ার ২৭ বছর বয়সী এক ব্যক্তি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। চুয়াডাঙ্গা একাডেমি মোড়ের ৪৬ বছর বয়সী এক নারী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। গত শুক্রবারে তার স্বামীর শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। তিনি মেহেরপুর যুব উন্নয়ন অফিসে কর্মরত আছেন। দর্শনার আশা অফিসের ১৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হলে এক ঋণ কর্মকর্তার করোনা শনাক্ত হয়েছেন। তিনি দর্শনায় ভাড়াবাড়িতে রয়েছেন। একই অফিসে কর্মরত এক সদস্যের স্ত্রী করোনা পজেটিভ হয়েছেন।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শামিম কবির বলেন, ঢাকা থেকে নতুন করে কিছু লোকজন চুয়াডাঙ্গায় আসতে শুরু করেছেন। শহরের লোকজনের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রবণতা বেশি। যার ফলে নতুন করে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে পৌর এলাকায় ৩ দিনে ১৪ জন। করোনা আক্রান্ত পরিবারের সদস্যরা লকডাউন মানছেন না। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে। মাস্ক না পরা, স্বাস্থ্য বিধি ও সামাজিক দূরত্ব না মানার কারণে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ সম্ভব নয়।
চুয়াডাঙ্গার চারটি উপজেলায় ৩০৭ জন করোনা পজেটিভ রোগী শনাক্ত হয়েছে। নতুন সুস্থ হয়েছেন ৫ জন। এ পর্যন্ত ২০১ জন রোগী সুস্থ হয়েছেন। হোম আইসোলেশনে রয়েছেন ৮৭ জন ও প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে রয়েছেন ১৪ জন রোগী।
গাংনী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মেহেরপুর সদর থানার এক পুলিশ অফিসার ও গাংনীর সন্ধানী স্কুলের দুই শিক্ষকসহ জেলায় আরও চারজন নতুন করে করোনা ভাইরাস সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন। গতকাল সোমবার রাত আটটা পূর্ব ২৪ ঘণ্টায় জেলার ১৪টি নমুনা পরীক্ষায় এ চারজন কোভিড-১৯ পজেটিভ বলে জানান সিভিল সার্জন। এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১০৮ জন। ২৪ ঘণ্টায় ৩ জন সুস্থতার মধ্যদিয়ে মোট সুস্থতার সংখ্যা ৬৩।
জানা গেছে, গাংনীর সন্ধানী স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুজন শিক্ষক গেলো বৃহস্পতিবার স্কুলে অনলাইনে পাঠদান করানোর সময় জ্বর অনুভব করছিলেন। এদের একজনের বাড়ি সদর উপজেলার উত্তর শালিকা গ্রামে ও অপরজন মুজিবনগর উপজেলার পুরন্দরপুর গ্রামের বাসিন্দা। নিজ নিজ বাড়ি ফিরে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহে তারা দুজন নমুনা প্রদান করেন। বর্তমানে তারা নিজ নিজ বাড়িতেই অবস্থান করছেন। এদিকে আক্রান্ত আরেকজনের বাড়ি গাংনী উপজেলার সহড়াতলা গ্রামে। ৩৭ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি কুষ্টিয়ার একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত। কুষ্টিয়া থেকে অসুস্থ অবস্থায় বাড়ি ফিরে নমুনা প্রদান করেন তিনি। আক্রান্ত অপরজন হচ্ছেন মেহেরপুর সদর থানার পরিদর্শক অপারেশন। স্বাস্থ্য বিভাগসূত্রে জানা গেছে, গাংনীর সহড়াতলা গ্রামের আক্রান্ত ওই ব্যক্তি কুষ্টিয়া থেকে করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারেন। তবে পুলিশের ওই কর্মকর্তা এবং সন্ধানীর দুই শিক্ষক স্থানীয়ভাবে আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির মাধ্যমে তারা সংক্রমিত তা নিশ্চিত হতে পারছেন না তারা নিজেরাই। জানতে চাইলে সন্ধানী স্কুল অ্যান্ড কলেজের একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক বলেন, যেহেতু আক্রান্ত দুই শিক্ষক বৃহস্পতিবার স্কুল থেকেই অসুস্থতাবোধ করছিলেন তাই এখানে কর্মরতরা ঝুঁকির মধ্যে। যদিও আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনেই অফিসের কাজ করেছি। তারপরেও যারা সেখানে ছিলেন তাদেরকে কোয়ারিন্টিন করানোর নির্দেশনা দিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা। নির্দেশনা অনুযায়ী সবাইকে কোয়ারিন্টিন করে নমুনা দেয়া হবে। প্রসঙ্গত, গত রোববারও জেলায় চারজন আক্রান্ত শনাক্ত ছিলেন। সোমবার আরও চার জন শনাক্তের মধ্যদিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা এখন ১০৮। এর মধ্যে সদরে ৫৬, গাংনী ৪২ ও মুজিবনগরে ১০। সুস্থ ৬৩ জনের মধ্যে সদরে ৩৬, গাংনী ২১ এবং মুজিবনগরে ৩জন। এ পর্যন্ত মোট মৃত্যু ছয়জন। যাদের একজন আক্রান্ত অবস্থায় বাকিরা মৃত্যুর পর নমুনা পরীক্ষায় কোভিড-১৯ পজেটিভ হন।
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঝিনাইদহে নতুন করে আরও ৩৭ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে ঝিনাইদহ জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ৪৫২ জন। ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন ডা. সেলিনা বেগম জানান, সোমবার সকালে কুষ্টিয়া ল্যাব থেকে ঝিনাইদহে ৮৪টি রিপোর্ট এসেছে। এর মধ্যে ৩৭টি পজেটিভ। আক্রান্তদের মধ্যে সদর উপজেলায় ২১ জন, কালীগঞ্জ উপজেলায় ৬ জন, শৈলকুপা উপজেলায় ৬ জন, হরিণাকুন্ডুতে একজন, কোটচাঁদপুরে একজন ও মহেশপুরে দুজন।
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ক্রমেই কুষ্টিয়া করোনার হটস্পট হয়ে পড়ছে। নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে ৪৮ জন। এ নিয়ে জেলাটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো এক হাজার ২২ জনে। গতকাল সোমবার কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের বরাত দিয়ে এ তথ্য প্রকাশ করে জেলা প্রশাসন। কুষ্টিয়ার মেডিকেল কলেজের তথ্যমতে, পিসিআর ল্যাবে গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ৩৫৭টি স্যাম্পল পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে কুষ্টিয়ায় ১২৮, চুয়াডাঙ্গায় ৩৫, ঝিনাইদহে ৯২, মেহেরপুরে ৪ ও নড়াইলে ৮৮। কুষ্টিয়া জেলার কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ৩৪ জন, দৌলতপুর উপজেলায় ৬ জন, কুমারখালি উপজেলার ৬ জন ও ভেড়ামারা উপজেলার দুজনসহ মোট ৪৮ জন নতুন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় আক্রান্ত ৩৪ জনের ঠিকানা হাউজিং বি ব্লক একজন, পূর্ব মজমপুর একজন, উপজেলা রোড একজন। থানাপাড়া ৩ জন, মজমপুর ১ জন, পশ্চিম মজমপুর ১ জন, কেজিএইচ ২ জন, কৃত্তিনগর ১ জন, জুগিয়া ১ জন, সাতবাড়ি লেন ১ জন, মতিমিয়া রেল গেট ১ জন, চৌড়হাস ১ জন, হরিপুর ৩ জন, মোল্লাতেঘরিয়া ১ জন, কমলাপুর ৪ জন, ছেউড়িয়া ১ জন, বটতৈল ১ জন, লক্ষীপুর ১ জন, তালিপাড়া ১ জন, আড়ুয়াপাড়া ১ জন, কুমারগাড়া ১ জন, জগতি ১ জন, বারখাদা ২ জন, মিলপাড়া ১ জন, আমলাপাড়া ১ জন। দৌলতপুর উপজেলায় আক্রান্ত ৬ জনের ঠিকানা জনতা ব্যাংক দুজন, লাউবাড়িয়া ১ জন, জয়রামপুর ১ জন, বোয়ালিয়া ১ জন, পেয়ারপুর ১ জন। কুমারখালী উপজেলার আক্রান্ত ৬ জনের ঠিকানা কুমারখালী থানা, অগ্রণী ব্যাংক, গোপগ্রাম, কয়া, ইউএফপিও অফিস, সারকান্দি। ভেড়ামারা উপজেলার আক্রান্ত দুজনের ঠিকানা কাজিপাড়া, কাছারিপাড়া। উল্লেখ্য খোকসার গোপগ্রামে একজন আক্রান্ত হলেও সেটি কুমারখালীর মধ্যে ধরা হয়েছে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More