কুষ্টিয়ায় গুলিতে প্রার্থীসহ আহত ৩০ : ইউপি নির্বাচনে দিশাহারা ইসি

সারা দেশে সংঘাত-সংঘর্ষ অব্যাহত : ভোটারদের নিরাপত্তা দিতে ডিসিদের চিঠি
স্টাফ রিপোর্টার: কুষ্টিয়ায় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীর মিছিলে গুলিবর্ষণ ও হামলা হয়েছে। এতে স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ ৩০জন আহত হন। এ ঘটনায় নৌকার প্রার্থীর কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়া কুমারখালীর পান্টি ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ভাতিজা আহত হয়েছেন এবং বাগুলাট ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থীর আহত এক কর্মী মারা গেছেন।
এদিকে, ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন নিয়ে দিশাহারা নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে তারা। প্রতিদিনই সংঘাত-সহিংসতা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। ইউপি নির্বাচনে এ পর্যন্ত ৮৪ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। আহত হয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। আসন্ন ইউপি ভোট নিয়ে আতঙ্কিত অবস্থায় রয়েছেন ভোটাররা। ভোটের কেন্দ্রে যেতে ভয় পাচ্ছেন তারা।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বটতৈল ইউনিয়নে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মিন্টু ফকিরের মিছিলে গুলিবর্ষণ ও হামলা হয়েছে। এতে মিন্টুসহ কমপক্ষে ৩০জন আহত হয়েছেন। এ সময় বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। মঙ্গলবার দুপুরে বটতৈলের দোস্তপাড়া বাজারে সংঘটিত হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় নৌকার প্রার্থী মোমিন ম-ল ও তার সমর্থকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। এ ঘটনার পর মিন্টুর সমর্থকরা কুষ্টিয়া-চুয়াডাঙ্গা মহাসড়ক অবরোধ করে। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সকালে কয়েকশ সমর্থককে নিয়ে যুবলীগ নেতা মিন্টু মোটরসাইকেলে প্রচারে বের হন। দোস্তপাড়া বাজারে তারা পৌঁছুলে প্রতিদ্বন্দ্বী মোমিনের সমর্থকরা হামলা চালায়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে মিন্টুর সমর্থকদের সঙ্গে মোমিনের সমর্থকদের সংঘর্ষ বেধে যায়। একপর্যায়ে মিন্টুর সমর্থকদের তাড়া খেয়ে মোমিনের সমর্থকরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। সংঘর্ষে মিন্টুসহ ৩০ জন আহত হন।
এরপর কুষ্টিয়া-চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক মহাসড়কে মিন্টুর কয়েক শ সমর্থক লাঠিসোঁটা নিয়ে অবস্থান নেন। এতে সড়কটিতে প্রায় দুই ঘণ্টারও বেশি সময় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। চালবোঝাই ট্রাকসহ অসংখ্য যানবাহন আটকা পড়ে। লাঠিচার্জ করে পুলিশ তাদের সড়ক থেকে সরিয়ে দিলে যানবাহন চলাচল আবার শুরু হয়।
মিন্টু ফকির জানান, নির্বাচনে নিশ্চিত পরাজয় জেনে মোমিন পরিকল্পিতভাবে হামলা করেছে। এতে তিনিসহ ৩০জন আহত হয়েছেন। হামলার বিচার দাবি করেন তিনি। এদিকে এ অভিযোগ অস্বীকার করে মোমিন ম-ল বলেন, ঘটনার সময় আমি এলাকায় ছিলাম না। দোস্তপাড়া মোড়ে আমার নির্বাচনি কার্যালয়ের সামনে মিন্টুর আজেবাজে কথা বলে ও হামলা করে। এ সময় আমার লোকজন তাদের প্রতিহত করে।
কুষ্টিয়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আতিকুর রহমান জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সড়কে যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে। অভিযোগ দিলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে সোমবার রাতে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার আব্দালপুর ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী হাসান আলীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা করে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের কর্মীরা। এতে হাসান ও তার দুই ভাইসহ কয়েকজন আহত হন।
হাসান আলীর অভিযোগ, নৌকার প্রার্থী আরব আলী ও যুবলীগ নেতা মিজানুর রহমান মিজুর নেতৃত্বে ৩০ থেকে ৪০ জন হামলা করে। এতে আমিসহ পাঁচজন আহত হয়েছি। তবে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আরব আলী।
কুমারখালী (কুষ্টিয়া): পান্টি ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থীর কর্মীদের হামলায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হাফিজুর রহমানের ভাতিজা মামুনুর রশিদ মঞ্জু (৫০) আহত হয়েছেন। সোমবার রাতে হামলায় আহত মঞ্জু রামদিয়া গ্রামের মনোয়ার হোসেনের ছেলে। বর্তমান চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা হাফিজুর রহমান জানান, সোমবার রাত ৮টার দিকে তার ভাতিজা মঞ্জুর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায় নৌকার প্রার্থী মান্নান মোল্লার ছেলে পিয়াসের নেতৃত্বে ১৫-১৬ জন। এতে মঞ্জু মারাত্মক আহত হন। তাকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। তার মাথায় ১৪টি সেলাই দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে নৌকার প্রার্থী মান্নান মোল্লা জানান, হাফিজের কর্মীরা মিছিল বের করে এবং তার কর্মীদের সঙ্গে অসদাচরণ করে। এ কারণে পরবর্তী সময়ে তাদের সঙ্গে গ-গোল হয়েছে। তবে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে মাথায় কোপ দেওয়ার বিষয়টি সত্য নয়।
এদিকে বাগুলাট ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থীর আহত কর্মী ছমির উদ্দিন বিশ্বাস (৬০) মারা গেছেন। সোমবার রাতে নিজবাড়িতে তিনি মারা যান। ২৪ অক্টোবর নৌকা প্রার্থীর তিন ছেলের আঘাতে ছমির মারাত্মক আহত হন। তার বাড়ি দমদমা গ্রামে। এ ব্যাপারে ছমিরের ছেলে সোহাগ জানান, তার বাবাকে নৌকা প্রার্থীর ছেলেরা মারধর করেছে। এতে তিনি মারাত্মক আহত হন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা গেছেন। কুমারখালী থানায় মামলা করতে গেলে তা নেয়া হয়নি বলে তিনি অভিযোগ করেন। কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুজ্জামান তালুকদার জানান, এ ঘটনায় আগেই মামলা হয়েছে। তিন আসামিকে আটকও করা হয়।
এছাড়া ময়মনসিংহের গৌরীপুরে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পাঁচটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দিয়েছে প্রতিপক্ষ প্রার্থীর লোকজন এবং মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার মনসুরনগরে আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। এদিকে চাঁদপুরের কচুয়ায় সাধারণ সদস্য প্রার্থীর মিছিলে প্রতিপক্ষ প্রার্থীর কর্মীদের হামলায় ২০ জন আহত হয়েছেন।
এদিকে আগামী ২৬ ডিসেম্বর চতুর্থ ও ৫ জানুয়ারি পঞ্চম ধাপের ইউপি নির্বাচনে ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) চিঠি দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। নির্বাচন বিশ্লেষকদের মতে, ইউপি ভোট নিয়ে নির্বাচন কমিশন দিশাহারা হয়েছে। নির্বাচনী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে ইসি। প্রশাসন তাদের কথা শুনছে না। ইউপি ভোটে প্রথম থেকেই ইসি কঠোর হলে সংঘাত-সহিংসতা কম হতো। সদ্য সমাপ্ত তিন ধাপের নির্বাচনে জাল ভোট, ব্যালট পেপার ছিনতাই, বোমা হামলা ও গোলাগুলির ঘটনাও ঘটেছে। অন্যান্য ধাপের নির্বাচন নিয়ে প্রতিদিনই সংঘর্ষ হচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়। ভাঙচুর চলছে বাড়িঘরে, নির্বাচনী ক্যাম্পে। হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের। পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করছেন আওয়ামী লীগ ও দলের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। মেম্বার প্রার্থীরাও নিজ নিজ এলাকায় আধিপত্য বিস্তারে সংঘাত করছেন। তাই ভোট নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এ ছাড়া বিনা ভোটে নির্বাচিতের সংখ্যাও নির্বাচনী রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। পাঁচ ধাপে ৩৭৪৪ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ১৫৫৫ জন জনপ্রতিনিধি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। প্রথম ধাপের ১৪১ জন, দ্বিতীয় ধাপে দ্বিতীয় ধাপে ৩৫৭ জন, তৃতীয় ধাপে ৫৬৯ জন, চতুর্থ ধাপে ২৯৫ জন ও পঞ্চম ধাপে ১৯৩ জন বিনা ভোটে নির্বাচিত হন। সব মিলিয়ে ইউপি ভোট নিয়ে কঠোর সমালোচনার মুখে রয়েছে ইসি।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More