কৃষকের ফসলি জমি রক্ষায় চুয়াডাঙ্গায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ

জীবননগরে কৃষি জমি না দেয়ায় গ্রামবাসীর নামে মামলা দিয়ে গ্রেফতার ও হয়রানি

স্টাফ রিপোর্টার: কৃষি জমি রক্ষা, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেফতারকৃতদের মুক্তির দাবিতে চুয়াডাঙ্গায় মানববন্ধন এবং বিক্ষোভ মিছিল করেছেন চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামের শিশুসহ নারী-পুরুষরা। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা। পরে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের এমপি সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন বিক্ষোভকারীদের পক্ষ নিয়ে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, যেখানে পুরো চুয়াডাঙ্গা জেলা মাদকের ওপর ভাসছে; সেখানে পুলিশের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। অথচ কৃষকের জমিতে বিদ্যুৎ প্লান্ট বসানোর ব্যাপারে পুলিশ কেন এতো আগ্রহী।

অভিযোগকারীরা জানান, চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামে সিঙ্গাপুর ভিত্তিক একটি কোম্পানি সৌরবিদ্যুৎ প্লান্ট স্থাপনের জন্য কৃষি জমি জোরপূর্বক কেনার চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু গ্রামবাসী কৃষি জমি না দেয়ায় তাদের ওপর প্রতিনিয়ত হামলা, মামলাসহ নানা ধরনের হয়রানি করছে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও পুলিশ প্রশাসন। কৃষি জমি না দেয়ায় গ্রামবাসীর নামে মামলা দিয়ে সম্প্রতি ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার ও হয়রানির প্রতিবাদে মঙ্গলবার বেলা ১টার দিকে জেলা শহরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন গ্রামবাসী। পরে জেলা শহরের বড় বাজারে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভকারীরা জানান, জীবননগরের কৃষ্ণপুর ও রায়পুর গ্রাম থেকে শতশত গ্রামবাসী মানববন্ধন ও বিক্ষোভের উদ্দেশে চুয়াডাঙ্গায় রওনা হলে সকাল থেকেই জীবননগর থানা পুলিশ গ্রামবাসীকে বেরিকেড দিয়ে রাখে। যেন গ্রামবাসী গ্রাম থেকে বের হতে না পারে। পুলিশের বেরিকেড উপেক্ষা করে গ্রামবাসী চুয়াডাঙ্গার উদ্দেশে রওনা হন। চুয়াডাঙ্গায় মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, নিরীহ গ্রামবাসীদের মামলা হামলা দিয়ে জমি আদায় করা যাবে না। মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলে কৃষ্ণপুর গ্রামের নারী-পুরুষ, শিশুসহ সব বয়সের মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

মানববন্ধনে গ্রামবাসীরা অভিযোগ করেন, চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য হাজি আলী আজগার টগরের ইন্ধনে নিরীহ গ্রামবাসীর ওপর মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। এমপি আলী আজগারের সহায়তায় রায়পুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ শাহ ও তার ছেলে জীবননগর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ইমরুল হাসান নয়ন গ্রামবাসীকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে চলেছেন। এ ব্যাপারে রায়পুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ শাহ্ বলেন, গ্রামবাসীরা আমাকে ভুল বুঝে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায়। সেজন্য আমি মামলা করেছি।

এদিকে বেলা ২টার দিকে বিক্ষোভকারীরা মিছিল নিয়ে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনের বাসভবনের সামনে গেলে সেখানে বক্তব্য রাখেন তিনি। এমপি ছেলুন জোয়ার্দ্দার বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্পষ্ট কথা ফসলি জমিতে স্থাপনা তৈরি হবে না। এ সময় তিনি কৃষ্ণপুর গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও হয়রানি না করার জন্য চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপারকে অনুরোধ করেন। তিনি চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলামকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গা জেলা মাদকের ওপর ভাসছে। সেদিকে আমাদের পুলিশ সুপারের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। তিনি চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের এমপির কথামতো মোটা টাকার বিনিময়ে নিরীহ গ্রামবাসীকে মিথ্যা মামলা ও ভয়ভীতি দেখিয়ে হয়রানি করছেন। এতে আপনার এতো ইন্টারেস্ট কেন? এ অন্যায় নিরীহ গ্রামবাসীসহ চুয়াডাঙ্গাবাসী নীরবে সহ্য করবে না। এ সময় তিনি, ফসলি জমি রক্ষাসহ গ্রামবাসীদের সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

এ প্রসঙ্গে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করেছেন তা মিথ্যা। আমি ব্যক্তিগতভাবে মাননীয় সংসদ সদস্যকে শ্রদ্ধা করি। আমি বা চুয়াডাঙ্গা পুলিশ প্রশাসন কৃষ্ণপুর গ্রামবাসীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছি না। কৃষ্ণপুরে সৌরবিদ্যুৎ প্লান্ট’র স্থাপনা কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় রায়পুর ইউপি চেয়ারম্যান কর্তৃক দুটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলা দুটির বিষয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামে ১৮০ একর জমিতে ৫০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সিঙ্গাপুর ভিত্তিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ‘সাইক্লেক্ট এনার্জি পিটিই লিমিটেড’।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ
2 মন্তব্য
  1. তন্বী বলেছেন

    পুলিশ সুপারের বক্তব্য সবথেকে হাস্যকর।উনার যদি ইন্টারেস্ট না থাকে কেনো সে এই মামলার জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর থেকে পুলিশ ফোর্স প্রীজনভ্যানসহ ৮ তারিখ রাতে গ্রামে পাঠিয়েছিলো?????

  2. নয়ন বলেছেন

    পুলিশ সুপার আর জীবননগর থানার ওসির ভূমিকা এখানে প্রশ্নবিদ্ধ। তাদের দুজনের অনেক ইন্টারেস্ট।চুয়াডাঙ্গায় এত ডাকাতি হচ্ছে সেসবের সুরাহা না করে কৃষ্ণপুরের জমি নিয়ে পড়ে আছে। তারা ওপেন বলেছে এদের এরেস্ট করতেই হবে।কালও ওসির পাহারায় গ্রামে তারা আবার স্থাপনা নির্মাণ গিয়েছিল। গ্রামের নারীদের প্রতিরোধের মুখে ফিরে গিয়েছে।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More