কেরুজ পন্যাগারে এজেন্ট নিয়োগ মানে সোনার হরিণ পাওয়া 

বেতন যায় হোক বাড়তি আয়ের হিসাব নেই : রাতারাতি অঢেল সম্পদের মালিক

দর্শনা অফিস: কেরুজ ডিস্ট্রিলারীর অধীন সারা দেশে ১৩টি পণ্যাগার রয়েছে। এ পণ্যাগারের দায়িত্ব পাওয়া মানেই সোনার হরিণ পাওয়া। একজন পণ্যাগার এজেন্ট অর্থাৎ করণীক পদ মর্যাদার শ্রমিক খুব অল্প সময়েই কোটি টাকার মালিক হওয়ার সৌভাগ্য অর্জনে সক্ষম হন। কেরুজ চিনিকলের অন্যান্য বিভাগে কর্মরত অনেকেই এজেন্ট হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। আর এ স্বপ্ন পূরণের জন্য এক সময় গুনতে হতো লাখ লাখ টাকা। সে টাকা নিতেন কোন শ্রমিক নেতা কিংবা বড় বড় কোন কর্মকর্তা। জনশ্রুতি রয়েছে প্রায় বছর দুয়েক আগে ৩/৪ জনের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়েছিলো তা আবার মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে। তারা ছিলো ইক্ষু বিভাগের কর্মচারী। অবশেষে ভাগ্যদেবতা তাদের সে স্বপ্ন ভঙ্গ করে দিয়ে সেই পুরোনো কর্মস্থলে ফিরিয়ে এনেছে। কিন্তু তাদের দেয়া টাকা আজও ফেরৎ পায়নি। গতকাল বুধবার নতুন দুজন সহকারী এজেন্ট পদে অধিষ্ঠিত হয়েছে। তবে কোন হাতের পরশে সোনার হরিণ তাদের ভাগ্য পরিবর্তনে সহায়ক হলো তা নিয়ে কেরুজ এলাকা খানেকটা সরগরম। কেউ কেউ মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন সয়ং মন্ত্রী দেবতার আর্শীবাদে নাকি তাদের ভাগ্যের দুয়ারের দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে কোন সেলামীর প্রয়োজন হয়েছে কি না তা জানা যায়নি। দুজনের মধ্যে একজনকে সান্তাহার এবং অপরজনকে ঢাকা পণ্যাগারে সহকারী এজেন্ট হিসাবে যোগদান করেছেন। একজন ছিলো ইক্ষু উন্নয়ন বিভাগের পিয়ন রফিকুল ও অন্যজন কেরুজ ফুলবাড়ি বাণিজ্যিক খামারের ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জ রাকিবুল ইসলাম। প্রশ্ন উঠেছে ইতিপূর্বে যাদের ওই স্থলে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিলো তাদের অপরাধ কি ছিলো? তারা তো আর্থিকভাবে হতে হলো বহু ক্ষতিগ্রস্ত। বিষয়টি জিওপ্রাফি চ্যানেলের বাঘের শিকার ধরার মতই অবস্থা। বাঘ শিকারের গলা কামড়ে ধরে শ্বাসরদ্ধ করে হত্যা করছে আর ঠিক সে সময় হায়েনার দল এসে শিকারের পশ্চাৎদিক থেকে অর্ধেকটা ভক্ষন করে। বাঘ বেচারা যা পায় তাতে তার পেটে ক্ষুধা থেকেই যায়। পণ্যাগার এজেন্ট একটি লোভনীয় পদ। পদটি একজন করণীক পদ মর্যাদার হলেও তার যা উপার্জন তা প্রতিষ্ঠান প্রধানের বেতনের চাইতেও কয়েক গুন বেশি। যে কারনে ২০/৩০ বছর আগে যারা শ্রমিক নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন তাদের সন্তান বা নিকটাত্মীয়দের কেউ না কেউ ওই পদে রেখে গেছেন। এখনও সে ধারা অব্যাহত আছে। বর্তমান শ্রমিক নেতার এক ছেলেও সে পদে অধিষ্ঠ রয়েছে। কামায় রোজগারের হিসেব কশায় মুশকিল। এছাড়া কেরুজ সিবিএ নির্বাচনে নেতাদের যে বিশাল অংকের ব্যয় হয় অন্য কোনো চিনিকলে সিবিএ নির্বাচনে তার দশ ভাগের এক ভাগও হয় না। কেরুজ সিবিএ নির্বাচনে যে অর্থ ব্যয় হয় তার সিংহভাগ যোগান আসে ওই সব পণ্যাগার থেকে। সিবিএ নেতাদের সংগঠন চালানোর ব্যায় বহন মূলত পন্যাগারে দায়িত্বে থাকা বাবু মশাইরাই করে থাকেন। এভাবেই চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। তাছাড়া ১৩ টি পন্যাগার দুভাগেও রয়েছে ভাগাভাগি করা। কিভাবে এই অবৈধ অর্থ উপার্জন? কেরুজ ডিস্ট্রিলারী থেকে র’ অ্যালকোহল ড্রামে ভরে কেরুজ নিজস্ব পরিবহনে পণ্যাগারগুলোতে পাঠানো হয়। এসব পণ্যাগারে বিশেষভাবে নির্মিত মূল্যবান কাঠ দিয়ে তৈরি বিশাল বিশাল ভ্যাট রয়েছে। ড্রামের র’ এ্যালকোহল সেই ভ্যাটে ঢেলে সেখানে নির্দিষ্ট পরিমান পানি মিশিয়ে খাওয়ার উপযোগী করে লাইসেন্সধারীদের কাছে বিক্রি করা হয়। এক্ষেত্রে পানির পরিমান বেশি মিশিয়ে ডায়লেশন করা হয় আর অতিরিক্ত মেশানো পানি মদের দামেই বিক্রি হয়ে থাকে সেটাই এজেন্টদের অবৈধ আয়। তাদের সম্পদের কোন হিসাব অদ্যাবধি কোন সংস্থা নেয়নি। তাদের চলাফেরা রাজকীয়। অনেকে ঢাকায় একাধিক জমি বা ফ্লাটের মালিক বা চাকরির পাশাপাশি কারো কারো বড় বড় ব্যবসাও রয়েছে। তারা চলাচল করে থাকেন দামিদামি গাড়িতে। কারো কারো গাড়ির মূল্যতো মিল প্রধানের গাড়ির থেকেও মূল্যবান। তাদের মধ্যে আবার কেউ কেউ সন্তানদের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াচ্ছে মোটা অংকের টাকা খরচ করে। বিত্য বৈভবে তাদের জীবন চলে। এতো গেলো এজেন্টদের বাস্তবতা। সহকারী এজেন্ট রা সাধারণত কর্মস্থলে থাকে না, নিজ বাড়ি বা ব্যক্তিগত কাজেই তাদের দিন কাটলেও প্রতি মাসে একটা মোটা অংকের ভাগ এজেন্টরা তাদের কাছে পাঠিয়ে দেয়। মদ ভ্যাটে ডায়লেশনের জন্য আছে ওয়ার্কার। এদেরকেও বাড়তি টাকা দিয়ে খুশি রাখতে হয়। দুর্নীতি দমন বিভাগ এসব এজেন্টদের অবৈধ আয়ের কোনো তথ্য জানে কিনা তাতেও রয়েছে সন্দেহ। যে কারণে তাদের প্রকৃত সম্পদের খোঁজ তারা রাখে না বা অদ্যাবধি শোনা যায়নি কোনো এজেন্টকে দুর্নীতি দমন বিভাগের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছে কখনও।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More