গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে ডানপন্থিদের উত্থান নিয়ে আলোচনা কেন

স্টাফ রিপোর্টার: অগাস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে ডানপন্থিদের উত্থানের বিষয়টি নিয়ে নানা আলোচনা তৈরি হয়েছে। সভা-সমাবেশে কিংবা সংস্কার ও নির্বাচনের মতো ইস্যুগুলোতে বেশ সক্রিয় ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে ইসলামপন্থিদের। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করতে দেখা গেছে রাজনীতিবিদসহ বিভিন্নজনকে। গত এক বছরে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিতর্কিত নানা কর্মকা-ে ডানপন্থিদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ শোনা গেছে। দক্ষিণপন্থিদের উত্থান নিয়ে বিএনপি মহাসচিবের উদ্বেগের বিষয়টি আলোচনায় এলে এর প্রতিক্রিয়া জানায় ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। লিখিত এক বিবৃতিতে তারা জানায়, বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভুল বার্তা দেবে। “আমরাও বাংলাদেশে রাজনীতি করছি। আমরা তো এমন কোনো শক্তির উত্থান দেখছি না,” বিবৃতিতে উল্লেখ করেন দলটির মহাসচিব ইউনুস আহমদ। অনেকটা একই কথা বলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। “দক্ষিণপন্থি বলতে আপনি কাকে মিন করবেন? উত্থান শব্দের ব্যাখ্যা কী? এখানে কোনো শক্তি এমন নেই যে নতুন করে এদেশে জন্ম নিয়েছে। কোনো আনক্সপেক্টেড পাওয়ারতো (অপ্রত্যাশিত শক্তিতো) এখানে আসেনি। এরাতো সবাই এদেশে ছিল, এদেশে রাজনীতি করতো,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন মি. পরওয়ার। “আপনি ১৫ বছর তাকে কথা বলতে দেননি। সে যদি আজকে বড় একটা সমাবেশ করে, আপনি তাকে কি বলবেন একটা শক্তির উত্থান? বরং সে অধিকার ফিরে পেয়েছে,” বলেন এই জামায়াত নেতা। এদিকে গণঅভ্যুত্থানে ইসলামপন্থি দলসহ বিভিন্ন শক্তির ভূমিকা থাকায়, দক্ষিণপন্থি ভাবাদর্শের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণে রাজনৈতিকভাবে এর ব্যবহার হচ্ছে বলে মনে করছেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। “সরকারের মধ্যেও বলি না অনেকগুলো সরকার কাজ করছে? কখনো প্রশাসনে, কখনো প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে, তারাও কিছুটা শক্তি সঞ্চার করতে সক্ষম হয়েছে,” বলেন এই বামপন্থি নেতা। অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া তরুণদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি- এনসিপি নিজেদের মধ্যপন্থি দল হিসেবে দাবি করলেও বিভিন্ন সময় ইসলামপন্থি দলগুলোর সাথে তাদের ঘনিষ্ঠতা দৃশ্যমান হয়েছে। নানা সময় দলগুলোর সমাবেশে উপস্থিত থেকে তাদের দাবি-দাওয়ায় সমর্থন দিতেও দেখা গেছে এনসিপির নেতাদের। সম্প্রতি বাংলাদেশের একটি দৈনিক পত্রিকায় দেয়া সাক্ষাৎকারে দক্ষিণপন্থিদের উত্থান নিয়ে দেশের অন্যতম প্রধান দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উদ্বেগ প্রকাশের পর বিষয়টি আবারও আলোচনায় আসে। কয়েকদিন আগে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ডানপন্থি রাজনৈতিক দলের উত্থান নিয়ে রাজনীতিবিদ ছাড়াও বিভিন্ন পেশার মানুষকে শঙ্কা প্রকাশ করতে দেখা গেছে। যদিও ‘হঠাৎ করে উত্থানের’ বিষয়টি একেবারেই নাকচ করে দিচ্ছে ইসলামপন্থি দলগুলো। তাদের দাবি, গত ১৫ বছর যে গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে তারা বঞ্চিত হয়েছে, ফ্যাসিবাদের পতনের পর তারা সেই অধিকার ফিরে পেয়েছে। অন্য অনেক রাজনৈতিক দল দৃশ্যপটে অনুপস্থিত থাকায় ডানপন্থি দলগুলোর কর্মকা- বেশি চোখে পড়ছে বলেও মনে করছেন কেউ কেউ। বিশ্লেষকরা বলছেন, অগাস্টের অভ্যুত্থানের পর দেশে যে রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরি হয়েছে সেটার সুযোগ নিচ্ছে ডানপন্থি দলগুলো। তবে এর প্রভাব কতদূর গড়াবে, তা নির্ভর করবে নির্বাচন পরবর্তী সরকার গঠনের ওপর।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More