গরিবের কোটি নিয়ে উধাও স্বর্ণালী সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি

গাংনী প্রতিনিধি: যতো সঞ্চয় ততো মুনাফা এমন সেøাগানে বিভোর এলাকার মানুষ। এক লক্ষ টাকায় প্রতি মাসে দেয়া হবে এক হাজার ৬শ টাকা লাভ। এতেই ঝাঁপিড়ে পড়েন অনেকে। গরু, ছাগল আর সম্পদ বেচে টাকা তুলে দেন স্বর্ণালী সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির সভাপতির হাতে। চতুর সভাপতি কিছুদিন লাভ দিয়ে আরও মানুষকে যুক্ত করতে থাকেন। অবশেষে অফিস ফেলে লাপাত্তা। এলাকার দরিদ্র মানুষের প্রায় কোটি টাকা এভাবে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে বলে জানান ভুক্তভোগীর।
জানা গেছে, মেহেরপুরের গাড়াবাড়ীয়া বাজারে স্বর্ণালী সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি নামে সাইনবোর্ড দিয়ে ভাড়া বাসায় কার্যালয় চালু করে প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি গাংনী উপজেলার মটমুড়া গ্রামের মাহিরুল ইসলাম। ফাঁদ পেতে এলাকার মানুষের টাকা নিয়ে তিনি আত্মগোপন করেছে বলে মনে করছেন সঞ্চয় প্রদানকারীরা।
অভিযোগে জানা গেছে, এই প্রতিষ্ঠানটিতে ঋণ কার্যক্রম চলমান ছিলো অথচ মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির কোনো অনুমোদন ছিলো না। সমবায় দপ্তর থেকে সনদ নিয়ে আইনের চরম লঙ্ঘনের মধ্য দিয়ে এ কার্যক্রম চলেছে কয়েক বছর ধরে। অথচ সমবায় অধিদপ্তর ও এবং জেলা উপজেলা প্রশাসন বিষয়টি কানে নেয়নি। যখন টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়েছে তখন ভুক্তভোগীদের মুখ খোলাতে সকলেইর টনক নড়েছে।
স্থানীয়রা জানান, মটমুড়া গ্রামের মৃত ইসমাইল হোসেনের ছেলে মাহিরুল ইসলাম বছর দুই আগে স্বর্ণালী সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি নামের ওই প্রতিষ্ঠানটি কার্যক্রম শুরু করে। গাড়াবাড়িয়া গ্রামের আলাউদ্দীনের বাড়ি ভাড়া নিয়ে সেখানে স্বর্ণালী সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি নামে সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়। স্থানীয় কয়েকজন নারী পুরুষকে কর্মী হিসেবে নিয়োগ দিয়ে এলাকার মানুষের বিশ^াস অর্জন করে। কর্মীরা দরিদ্র শ্রেণির মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সঞ্চয় অফার দিতে থাকে। স্থায়ী আমানতের পাশাপাশি সঞ্চয়ের বিপরিতে ঋণ দেয়ার প্রলোভন দেখানো হয়। দুই বছর ধরে এলাকার মানুষের মাঝে অল্প পরিমাণ ঋণ দিয়ে বিশ^াস আরও বাড়ানো হয়। এরপর শুরু হয় স্থায়ী আমানত সংগ্রহের পালা। এক লাখ টাকা জমা থাকলে তার বিপরীতে প্রতি মাসে দেয়া হবে এক হাজার ৬০০ টাকা। লোভনীয় এই অফারে মাতে এলাকার মানুষ। অনেকে সহায় সম্পদ বিক্রি করে টাকা তুলে দেন প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি মাহিরুলের হাতে। এভাবে এলাকার শত শত মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হয় প্রায় কোটি টাকা।
ভুক্তভোগীদের মধ্যে গাড়াবাড়িয়া গ্রামের মাছ ব্যবসায়ী সবুর আলী বলেন, আমি ছয় লাখ টাকা ডিপোজিট করেছিলাম। কয়েক মাস ধরে লাভ দিয়েছে। গত মাস থেকে লাভ দেয়া বন্ধ করায় মঙ্গলবার অফিসে খোঁজ নিতে গিয়ে দেখি তালাবদ্ধ। পরে জানতে পারি টাকা নিয়ে মাহিরুল পালিয়ে গেছে। সম্পদ বিক্রি করা টাকা হারিয়ে এখন কোন পথে হাটবেন তা ভেবে দিশেহারা বলে জানান সবুর আলী।
এদিকে একই গ্রামের রবিউল ইসলাম ৩ লাখ ৭০ হাজার, ফিরোজ হোসেন সাড়ে ৩ লাখ, জারাফত আলী ২ লাখ, জলিল মন্ডল ৪ লাখ ৩০ হাজার, তোজাম্মেল হক ১ লাখ, আব্দুস সাত্তার ৪ লাখ, হানুফা বেগম ৬০ হাজার টাকা স্থায়ী আমানত হিসেবে জমার দেয়ার কাগজপত্র দেখান এই প্রতিবেদককে। এদের মতো শত শত মানুষ প্রতিদিনই ভিড় করছেন প্রতিষ্ঠানটির সামনে। প্রতিষ্ঠানের সভাপতি মাহিরুল ইসলামের মোবাইলফোন বন্ধ। স্থানীয় যারা কর্মী ছিলেন তারারও পড়েছেন বিপাকে। মাহিরুলের সাথে যেমন যোগাযোগ করতে পারছেন না তেমনই গ্রাহকদের সব চাপ এখন তাদের উপরেই।
প্রতিষ্ঠানটির মাঠকর্মী হিসেবে কাজ করা গাড়াবাড়ীয়া গ্রামের সাহারুল ইসলাম বলেন, আমারা টাকা আদায় করে তো সাহারুলের কাছে জমা দিয়েছি। তিনি এভাবে পালিয়ে যাবেন এটা বুঝতেই পারিনি।
জানা গেছে, স্বর্ণালী সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি নামে মেহেরপুর জেলা সমবায় কার্যালয় থেকে ২০১৩ সালে নিবন্ধন পেয়েছে। গত অডিট রিপোর্টে তাদের সঞ্চয় দেখানো হয়েছে ১০ লাখ ৩৪ হাজার ৬৮০ টাকা। ঋণ দেখানো হয়েছে ১৪ লাখ ৪ হাজার ২৮৬ এবং শেয়ার দেখানো হয়েছে ৩৫ হাজার ৬শ টাকা। সদস্য সংখ্যা ১১৮ জন। এর বাইরে আর কোন তথ্য নেই বলে জানালেন মেহেরপুর জেলা সমবায় কর্মকর্তা প্রভাষ চন্দ্র বালা।
গ্রাহকদের দুর্দশার বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী খানম জানান, বিষয়টি শুনেছি। তবে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে থেকে কেউ লিখিত বা মৌখিকভাবে কোন অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে ওই প্রতিষ্ঠানে বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মেহেরপুর জেলা সমবায় অফিসার প্রভাষ চন্দ্র বালা আরও বলেন, এসব দেখার দায়িত্ব উপজেলা সমবায় অফিসারের। তবে যারা টাকা রেখেছেন তাদেরও খোঁজ নেয়া দরকার ছিলো। গাংনী উপজেলা সমবায় অফিসারকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলা হয়েছে।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More