গাংনী পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে চাকুরি প্রত্যাশী নারীর অনশন

১৫ লাখ টাকা গ্রহণের অভিযোগ ॥ মেয়র জানালেন ভিন্ন কথা

গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুর গাংনী উপজেলা পরিষদ শহীদ মিনারে অনশন করেছেন মৌমিতা পলি নামের এক নারী। গাংনী পৌরসভায় সহকারী কর আদায়কারী পদে পৌর মেয়র আশরাফুল ইসলাম ১৫ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে নিয়োগ দেননি বলে অনশনে এমন অভিযোগ করেছেন মৌমিতা। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে বারটার দিকে মৌমিতা ও তার মা হোসনে আরা শহীদ মিনারে বসে অনশন শুরু করেন। মৌমিতা পলি গাংনী পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড শিশিরপাড়া গ্রামের শাহাবুদ্দীন আহম্মেদ বাহাদুরের মেয়ে। তবে অভিযোগ মিথ্যা বলে জানান পৌর মেয়র আশরাফুল ইসলাম। তিনি বলেন, মৌমিতার পিতার বাড়ি সংলগ্ন তার মালিকানাধীন ৫ কাঠা জমি ক্রয়ের জন্য টাকা দিয়েছিলো। এর সাথে চাকরির কোনো সম্পর্ক নেই। মৌমিতার স্বামীর সাথে বিচ্ছেদের জের ধরে তাদের পারিবারিক ঝামেলা মেয়রের ওপরে চাপানোর অপচেষ্টা চলছে।
অনশনরত মৌমিত পলি অভিযোগে বলেন, গাংনী পৌরসভার সহকারী কর আদায়কারী পদে চাকরির জন্য তিনি আবেদন করেন। ২০১৮ সালের ১৯ মে পৌরসভায় নিয়োগ পরীক্ষার অংশগ্রহণের জন্য পত্র পান মৌমিতা। নিয়োগ পরীক্ষায় তিনি অংশগ্রহণ করেন। এর আগেই চাকরি দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মেয়র আশরাফুল ইসলাম তার কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণ করেন। সহকারী কর আদায়কারী পদে ঘুষের বিনিময়ে চাকরির জন্য মৌমিতা ও মেয়রের মধ্যে মৌখিক গোপন চুক্তি হয়।
টাকা দেওয়ার বিষয়ে মৌমিতা বলেন, পরিবারের লোকজন সাথে নিয়ে আশরাফুল ইসলামের হাতে নগদ ৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা দেন ২০১৭ সালের শেষের দিকে। পরবর্তীতে মেয়রের স্ত্রী শাহানা ইসলামের নামীয় ইসলামি ব্যাংক মেহেপুর শাখায় একাউন্টে ৮ লাখ ১০ হাজার টাকা দেন তিনি। এর মধ্যে ২৪ জানুয়ারি ৫ লাখ ৭০ হাজার, ২৫ জানুয়ারি ৫০ হাজার এবং ৫ ফেব্রুয়ারি ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা। টাকা জমা দেয়ার পৃথক তিনটি রশিদ দেখান মৌমিতা ইসলাম।
ঘুষের অভিযোগ প্রসঙ্গে মেয়র আশরাফুল ইসলাম জানান, নাটোরের এক ব্যক্তির সাথে মোবাইলে প্রেমের মাধ্যমে বিয়ে করেন মৌমিতা। পিতার বাড়ি ছেড়ে মৌমিতার পিতার বাড়িতে চলে আসার কথা ছিলো তার স্বামীর। এজন্য পিতার বাড়ির পাশে একটি বাড়ি নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন মৌমিতা ও তার স্বামী। মৌমিতার পিতার বাড়ি লাগোয়া মেয়রের নিজ নামীয় ৫ কাঠা জমি কেনার জন্য বায়না দেন তারা। যা মেয়রের স্ত্রীর ব্যাংক হিসেবে দেন মৌমিতা। এক পর্যায়ে সম্পর্কের অবনতি হলে মৌমিতার স্বামী তার শ্বশুরবাড়িতে আসেননি। দুজনের মধ্যে সম্পর্ক না থাকায় জমি কেনার টাকা ফেরত নেন মৌমিতার স্বামী।
এদিকে অনশনের এক পর্যায়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন মৌমিতা। এসময় তিনি বলেন, টাকা নেয়ার পর মেয়র তাকে পৌরসভায় দিন হাজিরা ভাতায় (মাস্টাররোলে) চাকরি দেন। বেশ কিছুদিন মাস্টাররোলে কাজ করেন। সহকারী কর আদায়কারী পদে নিয়োগপত্র না পেয়ে তিনি হতাশ হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে পৌরসভায় যাওয়া বন্ধ করে দেন। বার বার মেয়রের কাছে ধরনা দিয়েও চাকরি কিংবা টাকা না পেয়ে অনশন ছাড়া আর কোনো উপায় নেই বলে জানান দরিদ্র পরিবারের মেয়ে মৌমিতা পলি। টাকা আদায় না হওয়া পর্যন্ত তিনি অনশন করবেন বলে উপস্থিত সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন গতকাল বিকেলে।
এ বিষয়ে গাংনী পৌর মেয়র আশরাফুল ইসলাম বলেন, মৌমিতা মাস্টাররোলে প্রায় ছয় মাসের কর্মকালীন সময়ে পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে অসদাচরন করেন। এতে বাধ্য হয়ে তাকে বাদ দেয়া হয়। এতে ক্ষিপ্ত হন মৌমিতা। অপরদিকে সামনে পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ মৌমিতার এ ক্ষোভ পুঁজি করে অনশনে বসিয়েছে বলে দাবি করেন পৌর মেয়র।
এদিকে দুপুর থেকে রাত প্রায় দশটা পর্যন্ত নানা নাটকীয় পরিবেশের পর অনশন থেকে সরে বাড়িতে যান মৌমিতা। এর আগে বিকেলে ঘটনাস্থলে গিয়ে মৌমিতার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ উত্থাপন করেন পৌর মেয়র আশরাফুল ইসলাম। জমি কেনার জন্য টাকা গ্রহণ ও মৌমিতার স্বামীকে উপস্থিত হয়ে বিষয়টির সুরাহার দাবি করেন পৌর মেয়র। এসময় মৌমিতা ও মেয়রের মধ্যে এক উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে মেয়র ঘটনাস্থল ছেড়ে গেলেও অনশনে অনড় ছিলেন মৌমিতা। বিষয়টি নিয়ে আইন-শৃংখলার অবনতির আশঙ্কায় সন্ধ্যার পর ঘটনাস্থলে পৌঁছান গাংনী থানার ওসি ওবাইদুর রহমান। ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মিজানুর রহমান ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর ফিরোজা খাতুনের সহযোগিতায় রাত দশটার দিকে মৌমিতার অনশন ভাঙাতে সক্ষম হয় পুলিশ।
এ বিষয়ে ওয়ার্ড কাউন্সিলর মিজানুর রহমান রাত সাড়ে দশটার দিকে গাংনী প্রেসক্লাবের সামনে সাংবাদিকদের জানান, আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় বিষয়টি নিয়ে মেয়র, কাউন্সিলর, মৌমিতার পরিবার ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে একটি সভা করা হবে। সেখানে বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধানের আশ্বাসে মৌমিতা অনশন থেকে আপাতত সরে গেছেন। সামাজিক দায়িত্ব হিসেবে বিষয়টি আমরা সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছি।
গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওবাইদুর রহমান বলেন, মৌমিতা বা তার পরিবার থানায় এ বিষয়ে লিখিত বা মৌখিত কোনো অভিযোগ দেননি। তবে অনশনকে কেন্দ্র করে আইন-শৃংখলার কোনো অবনতি যাতে না হয় সে বিষয়ে আমরা সজাগ ছিলাম। কাউন্সিলরা বিষয়টি বসে সুষ্ঠু সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন। যে আশ্বাসে মৌমিতা অনশন থেকে বাড়ি ফিরে গেছেন। এ বিষয়ে যাতে কোনোপ্রকার বিশৃংখলা না হয় সে বিষয়ে সতর্ক রয়েছে পুলিশ।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More