চলতি অর্থ বছরে কেরুজ ডিস্টিলারি কারখানায় বিক্রি হবে প্রায় ৩শ কোটি টাকার স্পিরিট

দর্শনা চিনিকল প্রতিষ্ঠাকালের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করলো স্পিরিট উৎপাদন

দর্শনা অফিস: লাগাতার লোকসানের কারণে দেশের ১৫টি চিনিকলের মধ্যে বন্ধ রয়েছে ৬টি। বর্তমানে ৯টি চিনিকলের মধ্যে কেরুজ চিনিকল ছাড়া সবকটিতে লোকসান গুনতে হচ্ছে সরকারকে। কেরুজ চিনিকল এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক চালিকা শক্তি হিসেবে রয়েছে খ্যাতি। এছাড়া শিক্ষাসহ বিভিন্ন খাতে অর্থ বরাদ্দে সুনাম রয়েছে অক্ষুণœ। দীর্ঘ ৮৪ বছর আলোকিত করে রেখেছে এ অঞ্চল। কেরুজ চিনিকলের ৪টি বিভাগের মধ্যে চিনি কারখানায় মোটা অংকের টাকা লোকসান গুনতে হলেও তা পুষিয়ে দেয়া হয় অন্যান্য বিভাগের মুনাফা অর্জন থেকে। এবার প্রতিষ্ঠাকালের সকল রেকর্ড ভেঙেছে ডিস্টিলারি উৎপাদিত পণ্য বেশি উৎপাদন ও বিক্রিতে। যে কারণে প্রতি বছরের তুলনায় এ বছর ডিস্টিলারি বিভাগের লাভের অংকটা অনেক মোটা হতে চলেছে। তথ্যানুযায়ী গত ২০২০-২১ অর্থ বছরে ডিস্টিলারি বিভাগে স্পিরিট মজুত ছিলো ৫ লাখ ৪৩ হাজার ৮৯.২১ প্রুপ লিটার। ২০২১-২২ অর্থ বছরে মার্চ পর্যন্ত উৎপাদন করা হয়েছে ৪০ লাখ ৫৯ হাজার প্রুপ লিটার। ফলে সর্বমোট ৫৫ লাখ প্রুপ লিটারের বিপরীতে গত মার্চ পর্যন্ত ৪২ লাখ ৮০ হাজার প্রুপ লিটার ২৩৯ কোটি ১২ লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে (আইএপি)। ডিস্টিলারি বিভাগে সর্বচ্চ স্পিরিট বিক্রির রেকর্ড ভাংতে যাচ্ছে এ বছর। চিনিকল কর্তৃপক্ষের ধারণা চলতি অর্থ বছরের আগামী ২ মাসে মজুতকৃত ৫৫ লাখ প্রুপ লিটার স্পিরিট বিক্রি সম্ভব হবে। হিসাব মতে ৩শ কোটিরো বেশি টাকা স্পিরিট বিক্রির রেকর্ড গড়তে পারে। চিনি কারখানায় গত অর্থ বছরে মজুত ছিলো ৪৫০৯ মেট্রিকটন চিনি। ২০২১-২২ আখ মাড়াই মরসুমে ৫৩৬৯২ মেট্রিকটন আখ মাড়াই করে চিনি উৎপাদন করেছে ৩০২৩ মেট্রিকটন। গত মরসুমের তুলনায় এ মরসুমে চিনি আহরণের গড় হার ছিলো বেশি। গত ৭ এপ্রিল পর্যন্ত ৭৪ ও ৭৫ টাকা কেজি দরে ২৬৩৩ মেট্রিকটন চিনি বিক্রি করা হয়েছে ১৯ কোটি ৪৮ লাখ ৪ হাজার ২শ টাকায়। তবে আখচাষে কৃষকদের অনাগ্রহের কারণে স্মরণকালের কম আখ মাড়াই হয়েছে এ মরসুমে। ফলে চিনি কারখানার লোকসানের বোঝা গত মরসুমের তুলনায় বেশ ভারী হতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। আকন্দবাড়িয়া বায়ো ফাটিলাইজারে মার্চ পর্যন্ত জৈব সার উৎপাদন হয়েছে ১২০০ মেট্রিকটন। গত মরসুমের মজুত ছিলো ৯২২.২২ মেট্রিকটন। সর্বমোট ২১২২.২২ মেট্রিকটন সারের মধ্যে ১৮১৭.১৫ মেট্রিকটন বিক্রি করা হয়েছে ১ কোটি ৯৯ লাখ টাকায়। চিনিকলের নিজস্ব খামারের জমিতে স্বল্প মেয়াদি ফসল আলু, মশুরিসহ বিভিন্ন কৃষি পণ্য চাষের জন্য ৬ মাস মেয়াদি অলস জমি লিজ দেয়া হয়েছে ৭শ একর। এদীর্ঘ মেয়াদি আখচাষের জন্য ৬শ একর। বিগত বছরের তুলনায় এবার সর্বোচ্চ দরে এ জমি লিজ দেয়ায় চিনিকল কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত ১২ লাখ টাকা বেশি মুনাফা অর্জন করেছে।
এদিকে করোনা মহামারি প্রাদুর্ভাব কমে যাওয়ায় মুখ থুবড়ে পড়েছে হ্যান্ড সেনিটাইজার উৎপাদন। যে কারণে চাহিদা মোতাবেক উৎপাদন করা হয়ে থাকে। মার্চ পর্যন্ত ৬২২২ লিটার হ্যান্ড সেনিটাইজার উৎপাদন করে তা বিক্রি করেছে ৩১ লাখ ১১ হাজার টাকায়। চিনি কমপ্লেক্সের শ্রমিক-কর্মচারীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমান ব্যবস্থাপনা পর্ষদের দক্ষ পরিচালনা ও দুদর্শিতার কারণে বয়সের ভারে নুয়ে পড়া মিলটি মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শুরু করেছে। এভাবে চলতে থাকলে সরকারের মূল্যবান সম্পদটি যেমন রক্ষা হবে, তেমনি অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধি হবে এ অঞ্চল। এদিকে আখচাষে কৃষকরা যাতে আগ্রহী হয়, সেজন্যে আন্তঃমন্ত্রণালয়ে আখের মূল্য বৃদ্ধি করণে কমিটি গঠন করা হয়েছে ইতিমধ্যেই। কমিটির সুপারিশে অতিসত্ত্বর আখের মূল্য বৃদ্ধি করা হতে পারে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। এতে আখচাষিদের মধ্যে বাড়বে আগ্রহ। কেরুজ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোশারফ হোসেন বলেন, এ অঞ্চলের অন্যতম অর্থনৈতিক চালিকা শক্তি কেরুজ কমপ্লেক্স। সর্বক্ষেত্রে কেরুজ চিনিকলের রয়েছে অবদান। সরকারের এ মূল্যবান সম্পদ গর্বিত ও সমৃদ্ধ করেছে এ জেলা তথা দর্শনাকে। তাই এলাকার বৃহত্তর স্বার্থে এ প্রতিষ্ঠানকে টিকিয়ে রাখার জন্য অন্যতম কাচামাল আখচাষ বাড়ানো খুবই জরুরি। কেরুজ কমপ্লেক্সে যে যেখানে যে যে দায়িত্বে রয়েছেন, তাদেরকে নিষ্ঠা, আন্তরিকতার মধ্যদিয়ে কর্মদক্ষতার পরিচয় দিতে হবে। তাহলেই রক্ষা পাবে চিনি কারখানা, এ অঞ্চল ফিরে পাবে সোনালি অতীত। তাই আসুন কেরুজ চিনিকলকে বাচাই নিজেদের স্বার্থে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More