চুয়াডাঙ্গার উজলপুরে বজ্রপাতে কিশোরের মৃত্যু

ভারী বর্ষণ : চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন সড়কসহ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হাটু পানি

স্টাফ রিপোটার: কয়েক ঘণ্টার ভারী বর্ষণে চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন সড়ক, মার্কেটসহ ফসলের মাঠে জমেছে হাটু পানি। বৃষ্টির সাথে বজ্রপাত সাধারণ মানুষদের আতঙ্কিত করে তোলে। নষ্ট হয়েছে বৈদ্যুতিক ট্রান্সমিটার। বৃষ্টির সাথে বজ্রপাতে চুয়াডাঙ্গার উজলপুরে এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও দুজন। এদিকে, টানা কয়েক ঘণ্টার ভারী বর্ষণের কারণে চুয়াডাঙ্গা শহরের কোনো কোনো স্থানে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন সড়কে রয়েছে হাটু সমান পানি। সাধারণ মানুষ বলছেন, ড্রেনেজ ব্যবস্থা নাজুক ও সড়কগুলোর বেহালদশার কারণে অল্প বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায়। আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, কয়েক বছরের মধ্যে অল্প সময়ে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে। ৬ ঘণ্টায় জেলায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১৫৭.৬ মিলিমিটার। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৩.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল শনিবার দুপুর থেকে জেলায় ভারী বর্ষণ শুরু হয়।
আবহাওয়া অফিসসূত্রে জানা যায়, গতকাল শনিবার সকাল থেকে আকাশ মেঘলা ছিলো। দুপুর ৩টার আগে থেকেই বজ্রপাত ও ভারী বর্ষণ শুরু হয়। বেলা ৩টা থেকে ৬টা পর্যন্ত ১৩০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। রাত ৯টা পর্যন্ত ৬ ঘণ্টায় জেলায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১৫৭.৬ মিলিমিটার। অল্প সময়ে কয়েক বছরের মধ্যে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির সাথে সাথে হয়েছে বজ্রপাত। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৩.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৬.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়ার পূর্বাভাস থেকে জানা যায় আগামী ১৪ জুলাই বৃষ্টির সম্ভবনা রয়েছে।
বজ্রপাতে চুয়াডাঙ্গার বেগমপুর ইউনিয়নের উজলপুর গ্রামে স্বাধীন (১২) নামের এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে গ্রামের বিলে শিপ দিয়ে মাছ ধরতে যায় গ্রামের বিলপাড়ার মজিবার শিকদারের ছেলে স্বাধীন (১২) ও ইনতাজের ছেলে তরিকুল ইসলাম (১০)। হঠাৎ মুসূলধারে বৃষ্টি এবং বজ্রপাত শুরু করে। এক পর্যায় বজ্রপাতে ঘটনায় নিহত হয় কোটালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র কিশোর স্বাধীন। আহত হয় সাথে থাকা তরিকুল ইসলাম এবং বিলের পাহারাদার আকুব্বারের ছেলে মকবুল হোসেন (৫০)। পারিবারিকসূত্রে জানা যায়, আহত তরিকুলের শরীরের বিভিন্ন অংশ পুড়ে গেছে। সেই সাথে পাহারাদার মকবুল বেশ সময় ধরে বধি হয়ে পড়ে থাকেন। কানের পাশে থালা বাজিয়ে তার জ্ঞান ফেরায় প্রতিবেশীরা। এদিকে কিশোর স্বাধীনের মৃত্যুতে পরিবারজুড়ে চলে শোকের ছায়া। অপরদিকে, বজ্রপাতের কারণে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার গুলশানপাড়ায় বৈদ্যুতিক ট্রান্সমিটার পুড়ে গেছে। যার কারণে ওই এলাকার বেশকিছু বাড়িতে বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা শহরের বিভিন্ন এলাকায় ড্রেনেজ ব্যবস্থা চরম নাজুক এবং পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় হালকা বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। গতকালের ভারী বর্ষণে তলিয়ে গেছে শহরের বিভিন্ন সড়ক। বৃষ্টির সময় চুয়াডাঙ্গা-দামুড়হদা প্রধান সড়কেও হাটু পানি জমে যায়। এছাড়া শহরের বিভিন্ন এলাকার সড়কসহ অলিগলি এখনও পানির নিচে রয়েছে। যার ফলে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছেন সাধারণ মানুষদের। শহরের গুলশানপাড়া, মাঝেরপাড়া, দক্ষিণ হাসপাতালপাড়া, একাডেমি মোড়, সবুজপাড়া, কেদারগঞ্জপাড়াসহ শহরের বিভিন্ন সড়কে প্রায় হাটু সমান পানি দেখা যায়। আবার অনেকের বাড়িতেও পানি ঢুকে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। নোংরা পানির মধ্যে বাধ্য হয়ে চলাচল করতে হয় সাধারণ মানুষের। চুয়াডাঙ্গা বড়বাজার এলাকার নিউ মার্কেটের ভেতরে জমে গেছে বৃষ্টির পানি। মার্কেটের বেশকয়েকটি দোকানের মধ্যেও ঢুকে যায় পানি। যার ফলে ব্যবসায়ীরা ভোগান্তি ও ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। চুয়াডাঙ্গা সদর, আলমডাঙ্গা, দামুড়হুদা ও জীবননগর উপজেলায় সড়কে বৃষ্টির পানি জমে যায়। এছাড়া ফসলের জমিতে জমেছে পানি। জলাবদ্ধতার কারণে ফসলের ক্ষতি হতে পারে।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছামাদুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন পর চুয়াডাঙ্গায় ভারী বর্ষণ হয়েছে। অল্প সময়ের ১৫৭.৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এ মাসজুড়েই বৃষ্টির সম্ভবনা রয়েছে। এবার বৃষ্টির সাথে বজ্রপাত বেশি হচ্ছে। বৃষ্টি ও বজ্রপাতের সময় সকলকে নিরাপদ স্থানে থাকতে হবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More