চুয়াডাঙ্গার গৌরবময় ঐতিহ্য তোমাদেরকেই ফিরিয়ে আনতে হবে

চুয়াডাঙ্গায় শেখ কামাল প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণকালে জেলা প্রশাসক

স্টাফ রিপোর্টার: জমকালো আয়োজনে চুয়াডাঙ্গায় শেখ কামাল আন্তঃস্কুল ও মাদরাসা অ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতা ২০২৩’র চুয়াডাঙ্গা জেলা পর্যায়ের ৩২টি ইভেন্টের প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় চুয়াডাঙ্গা পুরাতন স্টেডিয়ামে এ প্রতিযোগিতার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) নাজমুল হামিদ রেজার সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আরাফাত রহমান, সদ্য যোগদানকারী অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক কবীর হোসেন, চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র জাহাঙ্গীর আলম মালিক খোকন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাজহারুল ইসলাম, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসেন, শেখ মো. রাসেল, শাহেদ আলম, নূরে পেয়ারা বেগম, হুমায়ুন কবীর, সহকারী কমিশনার সায়মা জাহান সুমাইয়া, আব্দুর রহমান, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক নঈম হাসান জোয়ার্দ্দার, চুয়াডাঙ্গা জেলা ক্রীড়া অফিসার আমানুল্লাহ আহমেদ, চুয়াডাঙ্গা ডিএফ’র সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম লাড্ডু, জেলা ক্রীড়া সংস্থার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন বিশ্বাস, চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি মাহাব্বুর রহমান কাজল, চুয়াডাঙ্গা সদর ফাঁড়ি ইনচার্জ রইস উদ্দিন, সদর উপজেলা প্রিয় সংস্থার সাধারণ সম্পাদক নাসির আহাদ জোয়ার্দ্দার, দামাহোদা উপজেলা প্রিয় সংস্থার সাধারণ সম্পাদক এম নুরুন্নবীসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকম-লী ও প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী এথলেটবৃন্দ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুন্সি আবু সাইফ ও ইসলাম রকিব। পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে জাতীয় সংগীতের তালে তালে জাতীয় পতাকা অ্যাথলেটিকস পতাকা ও চার উপজেলার পতাকা উত্তোলন শেষে সিরিয়া ও তুরস্কের ভয়াবহ ভূমিকম্পে নিহতদের প্রতি শোক জানিয়ে রাষ্ট্রীয় শোক অনুযায়ী জাতীয় পতাকাসহ সকল পতাকা অর্ধনমিত করা হয়। এরপর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক শেখ কামাল আন্তঃস্কুল মাদরাসা অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতার জেলা পর্যায়ের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এরপর বেলুন ফেস্টুন উড্ডয়ন, ক্রীড়া শপথ পাঠ ও মশাল প্রজ্জলনের মধ্য দিয়ে প্রতিযোগিতার আনুষ্ঠানিকতা শুরু করা হয়। কিছুটা বিরতি দিয়ে ৩২টি ইভেন্টের শতাধিক প্রতিযোগী দিনব্যাপী বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। বিচারকদের সুদক্ষ পরিচালনায় বিকেল ৩টার মধ্যে সমস্ত ইভেন্টের প্রতিযোগিতা সম্পন্ন হয়। বিকেল সাড়ে ৩টায় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিযোগিতার সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন ইভেন্টের প্রতিযোগিতায় প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিজয়ীদের মধ্যে মেডেল ও সনদপত্র বিতরণ করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানেও বিশেষ উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মতই অতিথিবৃন্দ পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে সকল খেলোয়াড়দেরকে উৎসাহিত করেছেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান বলেন, ক্রীড়াঙ্গনে চুয়াডাঙ্গার গৌরবময় ঐতিহ্য ছিলো। একসময় বাংলাদেশ ফুটবলের তারকাখ্যাত ফুটবলারদের উর্বর ভূমি হয়ে উঠেছিলো চুয়াডাঙ্গার মাটি। যেখান থেকে জন্ম নিয়েছিলেন মামুন জোয়ারদার, লিটন, মানিক, বিনাসহ নামিদামি ফুটবল প্লেয়ার। চুয়াডাঙ্গা ক্রীড়াঙ্গনের সোনালী অতীত পর্যালোচনা করতে গিয়ে গিয়ে আরও কিছু গৌরবময় কথা উঠে আসে। যেমন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল ভারত সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় ও ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের খেলোয়াড়রা খেলা খেলে সেখান থেকে উপার্জিত অর্থ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সহায়তার পাশাপাশি বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের মুক্তি আন্দোলনের পক্ষে জনমত গঠন করেছে। সেই স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের গোলরক্ষক চুয়াডাঙ্গার একজন কৃতি সন্তান যার নাম আব্দুল মোমেন জোয়ার্দ্দার। শুনেছি চুয়াডাঙ্গার আরো কিছু কৃতি ফুটবলার যারা ওপার বাংলার বিভিন্ন প্রদেশে বাংলাদেশ থেকে গিয়ে বছরের পর বছর ধরে ভারতের মাটিতে ফুটবল খেলেছেন। যার মধ্যে অন্যতম চুয়াডাঙ্গা রেলপাড়ার মরহুম আশরাফ জোয়ার্দ্দার সাবু। শুধু ফুটবল নয় চুয়াডাঙ্গার ক্রীড়াঙ্গনে সব ধরনের খেলায় গতি ফিরিয়ে আনতে শেখ কামাল আন্তঃস্কুল ও মাদরাসা অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতা একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে। এ প্লাটফর্ম ব্যবহার করে চুয়াডাঙ্গা ক্রীড়াঙ্গনের গৌরবময় অতীতকে আবারো ফিরিয়ে আনতে হবে। চুয়াডাঙ্গার বেশ কিছু মেয়ে ফুটবলার তারা বিভাগ ও জাতীয় পর্যায়ে নাম করেছে। এছাড়া ক্রিকেটেও চুয়াডাঙ্গার একজন মেয়ে অনুর্ধ্ব-১৯ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সাউথ আফ্রিকায় খেলে এসেছে। এভাবে আস্তে আস্তে চুয়াডাঙ্গার খেলোয়াড়রাও জাতীয় পর্যায়ে ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজেদের উজ্জ্বলভাবে মেলে ধরবে। অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, যারা খেলাধুলা খেলে, তাদের দ্বারা সমাজের কোন মন্দ কাজ সহজে হতে পারে না। তাই তোমরা যারা নিয়মিতভাবে লেখাপড়ার পাশেই পাশাপাশি খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করছো, তোমাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটবে। তোমরা জানো যে, শেখ কামাল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সন্তান ছিলেন। শহীদ শেখ কামাল তার জীবদ্দশায় খেলাধুলা নিয়ে সবচাইতে বেশি সময় কাটাতেন। গড়ে তুলেছিলেন অনেক ক্লাব ও ক্রীড়া সংগঠন। আজ তোমরা সেই শেখ কামালের নামেই অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করছো। এটা অনেক বড় পাওয়া। অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতার বালক ও বালিকা বিভাগের সবচেয়ে আকর্ষনীয় দূরপাল্লার ১৫০০ মিটার দৌড়ে বালিকা বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার পূর্ণিমা খাতুন ও বালক বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার শান্ত আলী।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More