চুয়াডাঙ্গার গ্রামাঞ্চলে করোনায় শনাক্ত ও মৃত্যুর হার দুটোই বেড়েছে

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে করোনায় শনাক্ত ও মৃত্যুর হার দুটোই বেড়েছে। বিশেষ করে ভারত সীমান্তবর্তী দামুড়হুদা উপজেলায় তা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ১৫ জুন থেকে সেখানে টানা ১৪ দিনের লকডাউন ঘোষণা করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
এদিকে জীবননগর সীমান্ত দিয়ে হঠাৎ করেই ভারত থেকে অবৈধপথে বাংলাদেশিদের অনুপ্রবেশের ঘটনা করোনার সংক্রমণ নিয়ে নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে। সমস্যা সমাধানে জেলা প্রশাসক মো. নজরুল ইসলাম সরকার ও পুলিশ সুপার মো. জাহিদুল ইসলাম গতকাল বৃহস্পতিবার জীবননগর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ, বিজিবি, জনপ্রতিনিধি ও স্বাস্থ্য বিভাগীয় স্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। করোনা প্রতিরোধে দায়িত্ব পালনকারী সবাইকে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়।
জেলা প্রশাসক মো. নজরুল ইসলাম সরকার বলেন, সীমান্তে অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে মামলা করতে হবে। কারাগারে পাঠানোর আগে তাদের বাধ্যতামূলকভাবে ১৪দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখতে হবে। ওই উপজেলায় সন্ধ্যা সাতটার পর সব দোকানপাট বন্ধ রাখতে হবে। করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের আইসোলেশনে থাকতে হবে। হোম কোয়ারেন্টিন বা আইসোলেশনে থাকাকালীন কেউ ঘোরাঘুরির চেষ্টা করলে তাদের বাধ্যতামূলক প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে পাঠানো হবে।
সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় বৃহস্পতিবার ৬৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৪৩ জন কোভিড-১৯ পজিটিভ হয়। ফলে শনাক্তের হার ৬৭ দশমিক ১৯ শতাংশ। বৃহস্পতিবার আরও ২ জন সুস্থ হয়েছেন। এদিন জেলার আরও ১৪৮ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পিসিআর ল্যাবে প্রেরণ করা হয়েছে। নতুন ৪৩ জনকে নিয়ে জেলায় মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪শ ৪৭ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন এক হাজার ৯শ ৩১ জন। মারা গেছেন ৭৪ জন। নতুন শনাক্তকৃত ৪৩ জনের মধ্যে সদর উপজেলার ২৯ জন, আলমডাঙ্গা উপজেলার ১২ জন, দামুড়হুদা উপজেলার ৬ জন ও জীবননগর উপজেলার ৬ জন। শুরু থেকে এ পর্যন্ত করোনায় মারা গেছেন ৭৮ জন। তাঁদের মধ্যে সদর উপজেলায় ২৯, দামুড়হুদায় ২৩, আলমডাঙ্গায় ১৮ ও জীবননগর উপজেলায় ৪ জন মারা গেছেন।
তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত বছর জুন মাসে করোনার প্রথম ঢেউ চলার সময় জেলায় ১ হাজার ৫ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১২৫ জনের করোনা পজিটিভ পাওয়া যায়। শনাক্তের হার ১২ দশমিক ৪৩ শতাংশ। ওই মাসে মারা যায় একজন। সেখানে দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর চলতি জুন মাসের অর্ধেক সময়ে অর্থাৎ প্রথম ১৬ দিনে জেলার ৪টি উপজেলায় ১ হাজার ২৫১ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৪১৮ জনকে করোনা পজিটিভ বলে শনাক্ত করা হয়। এই ১৬ দিনে করোনায় মারা গেছেন ৬ জন। এ ছাড়া করোনার উপসর্গ নিয়ে গতকাল বুধবার মারা গেছেন আরও চারজন।
গত বছরের এপ্রিল থেকে চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত সর্বাধিক আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনা ছিল যথাক্রমে আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে। আগস্ট মাসে জেলার চারটি উপজেলায় ১ হাজার ৬৪০ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৬৩৯ জনকে করোনা পজিটিভ বলে শনাক্ত করা হয়। সেপ্টেম্বরে সারা জেলায় ১৯ জন করোনা রোগী মারা যান। এরপর গত বছরের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত এই সাত মাসে জেলায় করোনায় মোট মারা যান ২৪ জন। মে মাসে করোনা শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ৮০ শতাংশ হলেও এ মাসে ১২ জন মারা যান। তবে জুন মাসে করোনা স্বরূপে হাজির হওয়ায় শনাক্ত ও মৃত্যুর হার অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে বলে স্বাস্থ্য বিভাগ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন।
চুয়াডাঙ্গায় সদর হাসপাতালের ১৫০ শয্যার সম্প্রসারিত ভবনকে শুরু থেকেই করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। এই ডেডিকেটেড হাসপাতালে ১৯৫ শয্যার পাশাপাশি জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৪টি কেবিন ও ১৫টি সাধারণ শয্যা, দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২টি কেবিন ও ১৩টি সাধারণ শয্যা এবং আলমডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৭টি শয্যা চালু আছে। কিন্তু জনবল সংকটে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের হোম আইসোলেশনে উৎসাহিত করছেন।
স্বাস্থ্য বিভাগের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, জেলায় বর্তমানে বর্তমানে সক্রিয় রোগী ছিলেন ৪৪২ জন। এর মধ্যে হাসপাতালে ৪০ জন। রেফার্ড করা হয়েছে ৪ জনকে। বাড়িতে রয়েছেন ৩৯৮ জন। সদর উপজেলার ১৩৮ জনের মধ্যে বাড়িতে ১১৮ জন। হাসপাতালে ১৯ জন, রেফার্ড একজন, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৪৯ জনের মধ্যে ৪১ জন বাড়িতে, ৭জন হাসপাতালে এক জন রেফার্ড করা হয়েছে। দামুড়হুদা উপজেলার ১৬৮ জনের মধ্যে হাসপাতালে ১২ জন, রেফার্ড ২ জন। জীবননগর উপজেলার ৮৭ জনের মধ্যে ৮৫ জন বাড়িতে, দু’জন হাসপাতালে আইসোলেশনে রয়েছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের চিকিৎসা কর্মকর্তা (রোগনিয়ন্ত্রণ) আওলিয়ার রহমান জানান, কোয়ারেন্টিন ও আইসোলেশনের পাশাপাশি টিকা দেয়ার বিষয়ে নতুন করে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গতকাল চীনের তৈরি ৪ হাজার ৮০০ ডোজ টিকা পাওয়া গেছে, যা ১৯ জুন থেকে দেয়ার পরিকল্পনা আছে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More