চুয়াডাঙ্গার হ্নদপিন্ড মাথাভাঙ্গা নদীটিকে বাঁচাতে দরকার সম্মিলিত উদ্যোগ

নদীর পার দখলমুক্ত করারসহ ৫ শতাধিক অবৈধ কোমর অপসারণ দাবি
রফিকুল ইসলাম: চুয়াডাঙ্গার হ্নদপিন্ড বলা হয়ে থাকে মাথাভাঙ্গা নদীকে। পদ্মার শাখা নদী মাথাভাঙ্গা কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার খলিশাকু-ু হয়ে আলমডাঙ্গা উপজেলার হাটবোয়ালিয়া গ্রাম দিয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলায় প্রবেশ করেছে খর¯্রােতা মাথাভাঙ্গা নদী। সেই দীর্ঘ ৫২ কিলোমিটার খর¯্রােতা মাথাভাঙ্গা নদীতে ৫ শতাধিক অবৈধ কোমর দিয়ে বর্তমানে মুষ্টিমেয় দুর্বৃত্তদের কবলে পড়ে এখন মৃত্যুর দিকে এগিয়ে চলেছে। মাথাভাঙ্গা নদীকে বাঁচাতে এখনই দরকার সম্মিলিত উদ্যোগ এমনটিই মনে করেন সচেতন মহল। জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, মৎস্য বিভাগ, জনপ্রতিনিধি এবং নদীর তীরবর্তীর জনগণের সার্বিক সহযোগিতায় পারে মৃত প্রায় এ নদীটিকে বাঁচাতে। নদী বাঁচলে বাঁচবে জীববৈচিত্র্য এবং রক্ষা পাবে পরিবেশ। বর্তমান জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার মাথাভাঙ্গা নদীকে বাঁচাতে ও দখলমুক্ত করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবেন বলে স্থানীয়রা মানে করেন।
মাথাভাঙ্গা নদীটি আলমডাঙ্গা উপজেলার হাটবোয়ালিয়া হয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর এবং দামুড়হুদা উপজেলার বারাদী সীমান্ত হয়ে ভারতে প্রবেশ করেছে। দীর্ঘ ৫২ কিলোমিটার নদীতে ৫ শতাধিক অবৈধ কোমর ও জোংলা সৃষ্টি করে নদীটিকে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে একশ্রেণির দুর্বৃত্তরা। তারা নদীতে বাঁশ দিয়ে কোমর সৃষ্টি করেছে এবং জোংলা তৈরী করে নদীর স্বাভাবিক গতিপথ রুদ্ধ করে দিয়েছে। এর ফলে নদীটি বর্তমানে মৃত প্রায়। এ নদীটি বাঁচাতে অতীতে জনপ্রতিনিধি সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপি, সাবেক জেলা প্রশাসক ভোলা নাথ দে, মো. দেলোয়ার হোসাইন, সায়মা ইউনুস, জিয়াউদ্দিন আহম্মেদ ও গোপাল চন্দ্র দাস আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন এবং কোমর উচ্ছেদ করতে পানিতে নেমেছেন। এ কাজে সহযোগিতা করেছেন চার উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাগণ, উপজেলা মৎস্য অফিসারবৃন্দ এবং নদীর তীরবর্তী স্থানীয় জনগণ। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ২০১০ সালে প্রথমবারের মতো মাথাভাঙ্গা নদী থেকে কোমর অপসারণে কাজ শুরু হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে কয়েকবার কোমর অপসারণে জেলা প্রশাসন দায়িত্ব পালন করেন। ২০১০ সালে মাথাভাঙ্গা নদী থেকে কোমর অপসারণের পুরস্কার হিসেবে খুলনা বিভাগীয় কমিশনার অফিস থেকে পরিবেশ পদক লাভ করেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক ভোলা নাথ দে। তবে, গত ২০১৯ সালের পর কোমর অপসারণে কোনো পরিকল্পনা না নেয়ায় বর্তমানে নদীটি মারা যেতে বসেছে। নদীটিকে বাঁচাতে জেলা প্রশাসনকে এখনই পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার।
মাথাভাঙ্গা নদীটিতে মাছের অভয়াশ্রম গড়ে তুলতে নিরাপদ জায়গা। কিছু অসাধু মানুষ নির্বিচারে মাছ নিধনে মেতে উঠেছে। আলমডাঙ্গা উপজেলার মুন্সিগঞ্জ, সদর উপজেলা এবং দামুড়হুদা উপজেলার সর্বত্র কিছু ব্যক্তি অবৈধ কোমর দিয়ে দেশের আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে। প্রশাসনের কাছে সাধারণ জনগণের প্রত্যাশা অবিলম্বে অবৈধ কোমর অপসারণ করে পানির গতি পথকে সচল রাখা এবং নদীর দু’পারে জমি দখলকারীদের উচ্ছেদ করে ড্রেজিং করার পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। না হলে এ অঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চুয়াডাঙ্গা জেলা আইনজীবী সমিতির সিনিয়র সদস্য অ্যাড. এসএম সাইদুজ্জামান গণি টোটন বলেন, মাথাভাঙ্গা নদীটি বর্তমানে ভূমিদস্যুদের কবল থেকে জমি উদ্ধার করতে হবে। নদীর দু’পার দখলমুক্ত করতে হবে। এক সময়ের খর¯্রােতা এ নদী দিয়ে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর বাণিজ্যিক জাহাজগুলো চলাচল করতো। কিন্তু নদীর অবৈধ দখলদাররা জমি দখল করে নদীটিকে মেরে ফেলতে উৎসবে মেতে উঠেছে। এ নদীটিকে বাঁচাতে হলে অবিলম্বে সরকারি উদ্যোগে ড্রেজিং করতে হবে এবং নদীর গতিপথ সচল রাখতে হবে। নদীর দু’ধারে অবৈধ দখলদারদের অবিলম্বে উচ্ছেদ করতে হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চুয়াডাঙ্গার ‘মাথাভাঙ্গা নদী বাঁচাও আন্দোলনের’ আহ্বায়ক অধ্যক্ষ হামিদুল হক মুন্সী বলেন, নদী রক্ষায় প্রশাসনের যেটুকু দায়িত্ব সেটুকু পালন করুক। সরকারি সু-নির্দিষ্ট নির্দেশনা আছে। জমির মাপজোপ করতে হবে। জনসাধারণকে সচেতন হতে হবে। নদীর ভেতর যেসকল বর্জ্য ফেলা হয় তা বন্ধ করতে হবে। এক্ষেত্রে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ মাইকিং করে জনগণকে সচেতন করতে পারে এবং বর্জ্য না ফেলার অনুরোধ করতে পারে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার পুলক কুমার ম-ল বলেন, আলমডাঙ্গা উপজেলা অংশে মাথাভাঙ্গা নদীর ওপর যে সকল অবৈধ কোমর দেয়া হয়েছে সেসব অপসারণে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিলারা রহমান বলেন, আমি মাথাভাঙ্গা নদী থেকে কোমর অপসারণে বেশ কয়েকবার অভিযান চালিয়েছি। বর্তমানে মহামারী করোনার কারণে অপসারণ বন্ধ থাকলেও আগামীতে কোমর অপসারণে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা দীপক কুমার পাল বলেন, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগের সম্মিলিত উদ্যোগের ফলে কাজটি করা যেতে পারে। এটি একটি ভালো কাজ। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More