চুয়াডাঙ্গাসহ খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় ইটভাটা ভাঙচুরের প্রতিবাদ ও কালো আইন বাতিলের দাবি

স্টাফ রিপোর্টার: ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ ও ২০১৯ বাতিল এবং জিগজ্যাগ ইট ভাটার ছাড়পত্র ও লাইসেন্স প্রাপ্তির দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ঝিনাইদহসহ খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় এ মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করে জেলা ইট প্রস্তুতকারক মালিক সমিতি।
মানববন্ধনে সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ বলেন, সারাদেশে অন্যায়ভাবে ইটভাটা ভাংচুর করছে পরিবেশ অধিদফতর। আমরা এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ২০১৩ সালের ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ আইনে জিগজ্যাগ ভাটা বৈধ উল্লে¬খ থাকলেও ওই আইনের ৮নং ধারার কারণে দেশের অধিকাংশ জিগজ্যাগ ইটভাটার মালিকরা ছাড়পত্র ও লাইলেন্স পাচ্ছেন না। এছাড়া ১২০ ফিট স্থায়ী উচ্চতার চিমনি ইটভাটার মালিকরা জিগজ্যাগ ভাটায় রূপান্তর করতে পারছেন না। বক্তারা আরও বলেন, আমরা বাংলাদেশের ইটভাটার মালিকগণ ৩০-৪০ বছর ধরে অনেক প্রতিকুলতার মধ্যদিয়ে ইটভাটার ব্যবসা পরিচালনা করে আসছি। আমরা দেশের রাস্তাঘাট, ঘরবাড়িসহ অবকাঠামো নির্মাণে ব্যবহৃত ইট সরবরাহ করে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখেছি। ২০১৩ সালের ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ আইনে জিগজ্যাগ ভাটা বৈধ পদ্ধতির উলে¬খ থাকলেও আইনের ৮ নং ধারার কারণে দেশের অধিকাংশ জিগজ্যাগ ইটভাটার মালিকরা ছাড়পত্র ও লাইসেন্স পাচ্ছেন না। আগামী ২০২৫ সালের পর থেকে সরকারি কাজে আর মাটির তৈরি ইট ব্যবহার করা বা ক্রয় করা হবে না। সরকারি কাজে যদি ইট ব্যবহার করা না হয় তাহলে আমাদের ইটভাটা বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ দেশের অধিকাংশ ইট সরকারি কাজে ব্যবহার করা হয়। ইতোমধ্যে পরিবেশ অধিদফতর হপম্যান, হাইব্রিড কিলনের ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ এলাকার দূরত্ব এক হাজার মিটারের মধ্যে থাকার বিষয়টি শিথিল করে ৪৫০ মিটার নির্ধারণ করেছে। এখানে তারাও মাটি দ্বারা ইট তৈরি করছে আর আমরাও পরিবেশ বান্ধব জিগজ্যাগ ইটভাটায় মাটি দিয়ে ইট তৈরি করছি। সুতরাং একই পদ্ধতিতে পরিচালিত ইটভাটা হওয়ায় আমাদের জিগজ্যাগ ভাটার জন্য নিষিদ্ধ এলাকার দূরত্ব ৪৫০ মিটারের আওতায় এনে আগামী ২০২৫ সাল পর্যন্ত লাইসেন্স ও ছাড়পত্র প্রদান করে বৈধ জিগজ্যাগ পদ্ধতির ইটভাটাগুলো পরিচালনার দাবি জানাচ্ছি। একই সাথে ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ ও ২০১৯ বাতিলের দাবি জানাচ্ছি। দাবিগুলো মেনে না নিলে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ।
চুয়াডাঙ্গায় ইটভাটা মালিক ও শ্রমিকরা ফুঁসে উঠেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে চুয়াডাঙ্গা টাউন ফুটবল মাঠে বিভিন্ন দাবির লেখা সংবলিত প্লে¬কার্ড নিয়ে জড়ো হন জেলার ৯৬টি ইট ভাটার শ্রমিকরা। সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন তারা। বিক্ষোভ মিছিল করে শহীদ হাসান চত্বরে এসে মানববন্ধনে অংশ নেন কয়েক হাজার শ্রমিক। আধাঘন্টাব্যাপী শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক বন্ধ করে অবস্থান কর্মসূচিও করেন তারা। এসময় জেলার তিনটি প্রধান সড়কের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কর্মসূচিতে জেলা ইট প্রস্তুতকারক মালিক সমিতির সভাপতি বজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোতালেবসহ সংগঠনটির অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। মানববন্ধনের সময় প্রায় আধাঘণ্টা জেলা শহরে সমস্ত যানবাহন বন্ধ হয়ে যায়। পরে ইটভাটা মালিক সমিতি জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দেন। কর্মসূচি শেষে পুলিশের অনুরোধে সড়ক ছেড়ে দেন আন্দোলনরত শ্রমিকরা। পরে আবারও বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে হাজির হন তারা। সেখানে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশ করেন সংগঠনটির নেতারা। স্মারকলিপিটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দেন জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঝিনাইদহে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন ইটভাটা মালিক ও শ্রমিকরা। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা মহাসড়কের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সামনে তারা এই কর্মসূচী পালন করে। এতে ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে জেলার ৬ উপজেলা থেকে আসা ইটভাটা মালিক ও শ্রমিকরা অংশ নেয়। এসময় বক্তব্য রাখেন, জেলা ইট প্রস্তুতকারক মালিক সমিতির সভাপতি মাহমুদুল ইসলাম ফোটন, সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান খান, সহ-সভাপতি কাইয়ুম শাহরিয়ার জাহেদী হিজল, নির্বাহী সদস্য মিজানুর রহমান মাসুমসহ অন্যান্যরা।
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন কুষ্টিয়ায় ২০১৯ সালের ইটভাটা আইন বাতিল ও ইটভাটায় প্রশাসনের অভিযান বন্ধের দাবিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেছেন কুষ্টিয়া জেলা ইটভাটা মালিক ও শ্রমিকরা। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে হাজার হাজার ইটভাটা শ্রমিক জড়ো হন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে। এসময় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়া জেলা ইট প্রস্তুতকারক মালিক সমিতির সভাপতি আক্তারুজ্জামান মিঠু, সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান জিয়া, কোষাধ্যক্ষ আব্দুল মান্নান, মিরপুর উপজেলা ইট প্রস্ততকারক মালিক সমিতির সভাপতি হাজি এনামুল হক, সহ-সভাপতি হাজি নুরুল ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ শাহিন আলী, সদস্য শরিফুল ইসলাম মুকুল, সদর উপজেলা ইট প্রস্ততকারক মালিক সমিতির সভাপতি জুয়েল আহম্মেদ প্রমুখ।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More