চুয়াডাঙ্গাসহ সীমান্তবর্তী কোনো জেলা হাসপাতালে নেই আইসিইউ

ভেঙে পড়েছে চিকিৎসা ব্যবস্থা : সুচিকিৎসার অভাবে মারা যাচ্ছে অনেক রোগী
স্টাফ রিপোর্টার: ভারতীয় সীমান্তবর্তী জেলাগুলোয় করোনা চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় নানা সঙ্কট রয়েছে। রাজধানীতে কিংবা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসাসেবায় যে ব্যবস্থাপনা রয়েছে, সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে তা নেই। বিরাজ করছে ব্যাপক বৈষম্য। চুয়াডাঙ্গাসহ সীমান্তবর্তী কোনো জেলা সদর হাসপাতালে আইসিইউ নেই। এছাড়া জেলা সদর হাসপাতালগুলোতে জনবল সঙ্কটসহ নানা অব্যবস্থাপনা বিরাজ করছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরও অভাব। ঘুষ ও তদবিরের মাধ্যমে এক শ্রেণির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা রাজধানীতে থেকে যান। এমন অবস্থার মধ্যে ভারত সীমান্তবর্তী দেশের জেলাগুলোতে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ হঠাৎ ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ায় সংশ্লিষ্ট জেলায় করোনা চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা অনেকটা ভেঙে পড়েছে। করোনার সংকটাপন্ন রোগীদের বিভাগীয় শহর, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কিংবা রাজধানীতে নিয়ে যাওয়ার আগেই রাস্তায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। অর্থাৎ সময়মতো আইসিইউ সাপোর্ট পাচ্ছে না করোনাপ্রবণ সীমান্তবর্তী জেলার করোনা রোগীরা। গুরুতর করোনা রোগীদের আইসিইউ সাপোর্টের প্রয়োজন হয়। এ কারণে গত বছরের ২ জুন একনেকের সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিটি জেলা হাসপাতালে আইসিইউ ইউনিট স্থাপনের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রতিটি হাসপাতালে ভেন্টিলেটর স্থাপন এবং উচ্চমাত্রার অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা বাড়াতে বলেন তিনি। এ জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কেনার নির্দেশও দেন। কিন্তু এত দিনেও জেলা পর্যায়ে আইসিইউ ইউনিট তৈরি না হওয়ায় স্বাস্থ্য বিভাগের গাফিলতিকে দায়ী করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ দেয়ার পর সব জেলা হাসপাতালে কেন আইসিইউ স্থাপন করা হয়নি? এটা স্বাস্থ্য বিভাগের চরম ব্যর্থতা। স্বাস্থ্য বিভাগের এক শ্রেণির কর্মকর্তারা শুধু কেনাকাটা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। প্রসঙ্গত, সরকারি নীতি অনুযায়ী, প্রতিটি জেলা সদর হাসপাতালে ১০ থেকে ২০ বেডের আইসিইউ বেড থাকা বাধ্যতামূলক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী, ১০০ বেডের হাসপাতালে কমপক্ষে ১০ বেডের আইসিইউ থাকতে হবে। অধিক সংক্রমিত ভারত সীমান্তবর্তী জেলাগুলো হলো চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, নাটোর, সাতক্ষীরা, যশোর, রাজশাহী ও চুয়াডাঙ্গা। এর অধিকাংশ জেলায় করোনা চিকিৎসা সেবার পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থা নেই।
চুয়াডাঙ্গা জেলা সদর হাসপাতালটি ১০০ বেডের। সিভিল সার্জন এএসএম মারুফ হাসান বলেন, করোনা রোগীদের জন্য আলাদা একটি ভবন আছে ১৫০ বেডের। তবে জনবলের সংকট। আইসিইউ নেই। গুরুতর রোগীকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কিংবা পার্শ্ববর্তী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালটি ২৫০ বেডের। আইসিইউ নেই। ২০ বেডের কোভিড ইউনিট আছে। রোগীর অবস্থা খারাপ হলে অর্থাৎ আইসিইউ সাপোর্টের প্রয়োজন হলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নওগাঁ জেলা সদর হাসপাতালে ১০০ বেডের জনবল আছে। আইসিইউ নেই। ৩০ বেডের করোনা ইউনিট আছে, যেখানে অক্সিজেনের ব্যবস্থা রয়েছে। নাটোর জেলা সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিট ৩১ বেডের। তবে চার তলাবিশিষ্ট এই হাসপাতালে কোনো আইসিইউ নেই। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় গতকাল বিশেষ লকডাউন আরো সাত দিন বাড়ানো হয়েছে। দিনাজপুর জেলায় আবারও বাড়তে শুরু করেছে করোনা সংক্রমণ ও করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা। ভয়ানক পরিস্থিতি সৃষ্টির শঙ্কায় প্রস্তুতিও নিতে শুরু করেছে জেলা স্বাস্থ্যবিভাগ। সাতক্ষীরা করোনার হটস্পট হয়ে উঠেছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৬৬ জনের মধ্যে ৩৭ জনের শরীরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। সিভিল সার্জন হোসাইন সাফায়েত জানান, সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে কোনো আইসিইউ নেই। আইসিইউ না থাকায় করোনা রোগী নিয়ে বিপাকে পড়ছেন ভুক্তভোগীরা।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, করোনা রোগীদের চিকিত্সাসেবা দেয়ার জন্য দেশের সব জেলা সদর হাসপাতালে হাইফ্লো নেজাল ক্যানোলা পাঠানো হয়েছে। এটি থাকলে আর আইসিইউয়ের প্রয়োজন হয় না। তিনি বলেন, জেলা পর্যায়ে আইসিইউ আগে ছিলো না। বর্তমানে সব জেলায় আইসিইউ স্থাপনের কাজ চলছে। এদিকে করোনা মোকাবেলায় গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি সম্প্রতি অধিক সংক্রমিত সীমান্তবর্তী সাত জেলায় সর্বাত্মক লকডাউন দেয়ার সুপারিশ করেছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীও এ ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন।
জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির এক জন সদস্য জানান, করোনা মোকাবিলায় সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে কার্যকর লকডাউন দিতে হবে। একদিকে লকডাউন দেয়া হবে, অন্যদিকে গণপরিবহন চালু থাকবে, স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হবে এভাবে করোনা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।
বাংলাদেশ সোসাইটি অব অ্যানেসথেসিওলজিস্টের সভাপতি অধ্যাপক ডা. দেবব্রত বণিক বলেন, হাইফ্লো নেজাল ক্যানোলার পাশাপাশি আইসিইউ থাকতেই হবে। হাইফ্লো নেজাল ক্যানোলা দিয়ে এক মিনিটে ৭০ লিটার অক্সিজেন দেয়া যায়। কিন্তু এর সঙ্গে আইসিইউ সাপোর্ট থাকলে সাত জন রোগীকে সাপোর্ট দেয়া যেতো। হাইফ্লো নেজাল ক্যানোলা চালাতে সেন্ট্রাল অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়। কিন্তু অনেক জেলায় সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা নেই। হাইফ্লো নেজাল ক্যানোলা ও আইসিইউ পরিচালনায় অভিজ্ঞ জনবল থাকতেই হবে। আইসিইউ ছাড়া করোনা রোগীদের পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা সম্ভব নয়।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More