চুয়াডাঙ্গায় করোনা ও উপসর্গ নিয়ে ঝরলো আরও চারজনের প্রাণ

সক্রিয় রোগীর মধ্যে বাড়িতে ১৮১৬ : হাসপাতালে ১২০ জন চিকিৎসাধীন
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় গত দুদিনে মৃত্যুর সংখ্যা কমেছে। গত ২৪ ঘন্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে এবং উপসর্গ নিয়ে চারজন মারা গেছেন। এর মধ্যে তিনজন করোনা ভাইরাস পজিটিভ। অপরদিকে গতকাল সোমবার নতুন ৪৮৭ জনের নমুনা নেয়া হয়েছে। এদিন পূর্বের ৫২৫ জনের রিপোর্ট পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১৩৬ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। ১৩৬ জনের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদরে ৫০জন, আলমডাঙ্গায় ৩৩জন, দামুড়হুদায় ২৪ জন এবং জীবননগরে ২৯ জন রয়েছেন। এদিকে গতকাল চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার সিনেমা হলপাড়ার এক বাসিন্দা করোনা আক্রান্ত হয়ে বাড়িতে আইসোলেশনে থাকাকালীন অসুস্থবোধ করলে হাসপাতালে নেন পরিবারের সদস্যরা। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে ভর্তি না করে বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, করোনা ইউনিটে আসনের তুলনায় রোগী বেশি হওয়ায় যাদের স্যাচুরেশন ৯৫ এর কম তাদেরকেই ভর্তি করা হচ্ছে। আর যাদের ৯৫ এর বেশি তাদেরকে বাড়িতে আইসোলেশনে থাকার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। চুয়াডাঙ্গায় সংক্রমনের হার দিন দিন বেড়েই চলেছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। চুয়াডাঙ্গার বেশির ভাগ মানুষই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। খোদ সদর হাসপাতালেই মানছে না স্বাস্থ্যবিধি। টিকাদান কেন্দ্রে এবং বহির্বিভাগে রোগীদের উপচেপড়া ভীড় হলেও তাদের মাঝে নেই সামাজিক বা শারীরিক দূরত্ব। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে জনশক্তির অভাবে সামাজিক বা শারীরিক দূরত্ব কার্যকর করা সম্ভব হচ্ছে না। চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২৯ জুন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার গোষ্টবিহার গ্রামের তাজের আলী শেখের ছেলে ওলিয়ার রহমান (৬০) করোনা আক্রান্ত হয়ে সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ভর্তি হয়। সোমবার (১২ জুলাই) দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। আলুকদিয়া ইউনিয়ের রাজাপুর বালিয়াপাড়া গ্রামের আব্দুর রশীর (৫০) জ্বর, কাশি ঠান্ডাজনিত রোগে ভুগছিলেন। গত ৪ জুলাই তার নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয়। ওইদিনই তাকে সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ভর্তি করানো হয়। সোমবার (১২ জুলাই) দিবাগত রাত সাড়ে আড়াইটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রশির। তিনি রাজাপুর বালিয়াপাড়া গ্রামের মৃত.জুলমত ম-লের ছেলে।
অপরদিকে, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের মৃত. দীন মোহাম্মদের ছেলে আলফাজ হালিম (৭০) করোনা আক্রান্ত হয়ে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি ছিলেন। চিকিৎসকের বারণ থাকা সত্বেও গতকাল বিকেলে আলফাজ হালিমকে ঢাকায় রওনা হন পরিবারের সদস্যরা। ঢাকার নেয়ার পথের মধ্যেই তার মৃত্যু হয় বলে নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য মোজাফফর।
সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. ফাতেহ আকরাম বলেন, আলমডাঙ্গা উপজেলার ভাংবাড়িয়া ইউনিয়নের বড় বোয়ালিয়া গ্রামের তারা চাঁদ ম-লের ছেলে আকবার ম-ল (৭০) বেশ কিছুদিন ধরে সর্দি কাশি জ্বরে ভুগছিলেন। তিনি গতকাল সোমবার সকালে ১০ টার দিকে হলুদ জোনে ভর্তি হন। বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে গতকাল সোমবার চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগ নতুন ৪৮৭ জনের নমুনা সংগ্রহ করেছে। এদিন পূর্বের ৫২৫ জনের নমুনা পরীক্ষার ফলাফল আসে। এর মধ্যে ১৩৬ জনের দেশে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট ৪ হাজার ৮১৩ জন করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। বর্তমানে চুয়াডাঙ্গায় শনাক্তকৃত সক্রিয় রোগীর মধ্যে হাসপাতালে ১২০ জন। নিজ নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে রয়েছেন ১ হাজার ৮শ ১৬ জন। সিভিল সার্জনের দেয়া তথ্য মতে চুয়াডাঙ্গায় এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১৪২ জন। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গাতে মারা গেছেন ১২৬ জন এবং জেলার বাইরে ১৬ জন মারা গেছেন। এ দিকে করোনা আক্রান্ত রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি না নেয়ার প্রসঙ্গে কথা হয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. ফাতেহ আকরামের সাথে। তিনি বলেন, সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটে বেডের তুলনাই আক্রান্তে রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এ জন্য যাদের স্যাচুরেশন ৯৫ এর উপরে তাদেরকে বাড়িতে আইসোলেশনে থাকার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। কারণ ৯৫ এর অধিক স্যাচুরেশন হলে আমরা ওই রোগীকে স্বাভাবিক ও সুস্থ আছে বলে ধরে নিই। আমরা চাই রোগীরা হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নেন। তবে ওই রোগীর স্যাচুরেশন ৯৫ এর বেশি হওয়ায় বাড়িতে আইসোলেশনে থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More