চুয়াডাঙ্গায় করোনা ও উপসর্গ নিয়ে দুজনের মৃত্যু : আরও ৪৫ জন আক্রান্ত

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় নতুন করে আক্রান্তের দিনে জেলায় করোনা ভাইরাস রোগীর সংখ্যা দঁভড়ালো এক হাজার ৫৮ জনে। আলমডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রম সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা আহসান মৃধা করোনায় ও জীবননগর উপজেলার দোপাখালী গ্রামের যুবলীগ নেতা দরবেশ দফাদার করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। গত রোববার জিনতলা মল্লিকপাড়ার হামিদুল হকের (৭০) নমুনায় গতকাল সোমবার পজেটিভ এসেছে। এছাড়াও নমুনা পাঠানো ৮৪ জনের মধ্যে ফলাফল এসেছে ৭৭ জনের। এরমধ্যে পজেটিভ ৪৫ জন ও ৩২ নেগেটিভ।
চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন অফিসসূত্রে এ তথ্য জানা যায়, সোমবার রাতে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পিসিআর ল্যাব থেকে এ তথ্য আসে। চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. এএসএম মারুফ হাসান সোমবার রাত ১০ টায় এ তথ্য নিশ্চিত করেন। আক্রান্ত ৪৫ জনের মধ্যে সদর উপজেলার ২৭জন, আলমডাঙ্গা উপজেলার ১৪জন ও দামুড়হুদা উপজেলার দুজন রয়েছেন। সদর উপজেলার আক্রান্তদের মধ্যে ওয়াপদাপাড়ার একজন, বোয়ালমারী গ্রামের একজন, ফার্মপাড়ার একজন, পলাশপাড়ার একজন, মোমিনপুর গ্রামের একজন, প্রাণিসম্পদ অফিসের স্টাফ দুজন, রেলপাড়ার একজন, শেখপাড়ার দুজন, বোয়ালিয়া গ্রামের একজন, মাঝেরপাড়ার একজন, সিঅ্যান্ডবিপাড়ার একজন, গুলশানাড়ার দুজন, ইসলামপাড়ার একজন, কাথলী গ্রামের একজন, পোস্টঅফিসপাড়ার দুজন, সবুজপাড়ার একজন, হাটকালুগঞ্জের একজন, পিডাব্লুডি অফিসের একজন, রেলপাড়ার একজন ও যশোর চৌগাছার এক জনবাসিন্দা তিনি চুয়াডাঙ্গা সদর থেকে নমুনা দিয়েছেন। আলমডাঙ্গা আক্রান্তদের মধ্যে বাঁশবাড়িয়া গ্রামের দুজন, মুন্সিগঞ্জ গ্রামের ৮ জন, রোয়াকুলি গ্রামের একজন, মাদারহুদা গ্রামের একজন, গোবিন্দপুর গ্রামের একজন ও আসমানীখালী গ্রামের দুজন রয়েছেন। দামুড়হুদা গ্রামের আক্রান্তদের মধ্যে দশমিপাড়ার একজন, রামনগর গ্রামের দুজন ও দর্শনা পৌর এলাকার একজন রয়েছেন।
জেলায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে ৫৬ জন ও হোম আইসোলেশনে ৪৩৪জন চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৫২৬ জন। এ পর্যন্ত মোট মৃত্যু বরণ করেছেন ২১ জন।
আলমডাঙ্গা ব্যুরো জানিয়েছে, করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন আলমডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রম সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা আহসান মৃধা। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৭০ বছর। গতকাল সোমবার ভোর ৬টার দিকে যশোর সিএমএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
জানা গেছে, মুক্তিযোদ্ধা আহসান মৃধা (৭০) আলমডাঙ্গা উপজেলার জামজামি ভোদুয়া গ্রামের মৃত আখের আলী মৃধার ছেলে। তিনি সেনাবাহিনীর সার্জেন্ট হিসেবে অবসর নেন। তারপর আলমডাঙ্গা কলেজপাড়ায় বসবাস শুরু করেন। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রম ও জনশক্তি বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। সম্প্রতি তিনি করোনা ভাইরাস উপসর্গ নিয়ে যশোর সিএমএম হাসপাপতালে ভর্তি হন। পরে পজেটিভ হলে চিকিৎসাধীন থাকলেও যশোর সিএমএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার ভোর ৬টার দিকে মৃত্যুবরণ করেন। বিকেলে প্রথমে যশোর সেনাবাহীনির একটি টিম তাকে গার্ড অফ অনার প্রদান করেন। এরপর চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের একটি টিম মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গার্ড অনার প্রদান ও জানাজা শেষে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দারুস সালাম কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। গার্ড অফ অনার প্রদানকালে আলমডাঙ্গার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. হুমায়ন কবীর উপস্থিত ছিলেন। মৃত্যুকালে মরহুম আহসান মৃধা স্ত্রী, এক ছেলে ও মেয়েসহ অসংখ্য গুণাগ্রাহী রেখে গেছেন। মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে সকলের নিকট দোয়া চেয়েছেন একমাত্র ছেলে আলমডাঙ্গা পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পারভেজ মিডেল।
জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, করোনা ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে জীবননগর বাজারের ফুল ব্যবসায়ী ও ধোপাখালী ওয়ার্ড যুবলীগের এক নেতার মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালের আইসোলেসনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সোমবার সকালে দরবেশ আলী দফাদারের (৩৮) মৃত্যু হয়। তিনি উপজেলার ধোপাখালী ব্যাপারীপাড়ার মৃত জাহাবক্স দফাদারের ছেলে। এদিকে গতকাল এ উপজেলায় মৃত দরবেশ আলীসহ ১৬ জনের করনো ভাইরাস পরীক্ষার জন্য নমুনা নেয়া হয়েছে।
এলাকাবাসীসূত্রে জানা যায়, জীবননগর শহরের কাজী টাওয়ারের ফুল ব্যবসায়ী নদীয়া ফুল ঘরের স্বত্ত্বাধিকারী দরবেশ আলী রোববার সন্ধ্যায় করোনা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, দরবেশ আলীকে হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিলো। গতকাল সকালে তার মৃত্যু ঘটে। এদিকে গতকাল জীবননগরে করোনায় উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণকৃত দরবেশ আলীসহ ১৬ জনের নমুনা নিয়ে পরীক্ষার জন্য কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে পাঠানা হয়েছে। এ নিয়ে এ পর্যন্ত ৫৭১ জনের নমুনা নেয়া হলো। এর মধ্যে ৫৫১ জনের রিপোর্ট পাওয়া গেছে। তার মধ্যে ১০৩ জনের করোনা ভাইরাস পজেটিভ এসেছে।
ইসলামী ফাউন্ডেশনের সুপারভাইজার আব্দুল হাকিম জানান, স্বাস্থ্যবিধি মেনে ইসলামী ফাউন্ডেশনের একটি টিম বেলা ১১টার দিকে ধোপাখালীতে নামাজে জানাজা শেষে তার দাফন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জুলিয়েট পারউইন মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, দরবেশ আলীর শরীরে জ্বর, হাঁচি-কাশি, ডায়রিয়া ও গলা ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। তার শরীরে করোনা ভাইরাসের সকল উপসর্গ থাকায় পরীক্ষার জন্য নমুনা নেয়া হয়েছে। এ উপজেলায় এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে একজনের মৃত্যু হয়েছে। তিনি তারানিবাসের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More