চুয়াডাঙ্গায় করোনা ভাইরাস সংক্রমণের হার বেড়েছে : একদিনে নমুনা দিয়েছেন ১১২ জন

নতুন শনাক্ত ১১ জনের মধ্যে ৬ জনই দামুড়হুদা উপজেলার

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় আবারও করোনা ভাইরাস সংক্রমণের হার বেড়েছে। যেমন বেড়েছে সর্দি কাশি জ¦রে আক্রান্তের সংখ্যা, তেমনই বেড়েছে নমুনা পরীক্ষার হার। একই সাথে করোনা ভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যাও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে পৌছুনোর উপক্রম হয়েছে। বিশেষ করে জেলার দামুড়হুদা উপজেলার সীমান্তবর্তি এলাকায় কোভিড-১৯ সংক্রমন বাড়ছে।
রোববার ৪১ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১১ জন নতুন করোনা ভাইরাস সংক্রমিত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬ জনের বাড়ি দামুড়হুদা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। শনিবার সীমান্তবর্তি কুতুপুরের একজনের পর একই গ্রামে গতকাল রোববার আরও ২ জন শনাক্ত হয়েছে। রোববার চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগ নতুন ১শ ১২ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য কুষ্টিয়া পিসিআর ল্যাবে প্রেরণ করেছে। সোমবার এদের রিপোর্ট পাওয়া যেতে পারে।
চুয়াডাঙ্গায় রোববার যে ১১ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে এদের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদরের দুজনের একজনের বাড়ি জেলা শহরের পলাশপাড়ায় অপরজনের বাড়ি কুন্দিপুরে। জীবননগর উপজেলার শনাক্ত একজনের বাড়ি লক্ষ্মীপুরে। আলমডাঙ্গা উপজেলার দুজেনর মধ্যে একজনের বাড়ি জেহলায় অপরজনের বাড়ি মাদারহুদায়। দামুড়হুদা উপজেলার ৬ জনের মধ্যে দুজনের বাড়ি কুতুবপুরে, এছাড়া মদনা, পরীপুর কুল্লা, মুক্তারপুর ও সুবলপুরে একজন করে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯শ ৬৭ জন। রোববার আরও ১ জন সুস্থ হয়েছেন। এ নিয়ে মোট সুস্থ হলেন ১ হাজার ৮শ ১৭ জন। মারা গেছেন ৬৭ জন। দেশে শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত ১৪ হাজার ২শ ৭৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১ হাজার ৪শ ৪৪ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ সময়ে সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৩শ ৯৭ জন। মারা গেছেন ৩৪ জন। মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৫শ ৮৩ জন।
এদিকে চুয়াডাঙ্গা জেলায় বর্তমানে স্থানীয়দের মধ্যে করোনা ভাইরাসে আক্রন্ত হয়ে বর্তমানে আইসোলেশনে রয়েছেন ৮৪ জন। এর মধ্যে সদর উপজেলার ২৬ জনের মধ্যে হাসপাতালে ৪ জন, বাড়িতে ২২ জন, আলমডাঙ্গা উপজেলার ৮ জনের মধ্যে ৮জনাই বাড়িতে, দামুড়হুদা উপজেলার ৩৬ জনের মধ্যে ১৮ জন হাসপাতালে, ১৮ জন বাড়িতে এবং জীবননগর উপজেলার ১৪ জনে রমধ্যে ১৩ জন বাড়িতে ১জন হাসপাতালে আইসোলেশনে রয়েছেন।
কার্পাসডাঙ্গা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় ছড়াচ্ছে করোনাভাইরাস। করনোভাইরাস প্রতিরোধে স্বাস্থবিধি মানছে কেউ। যার ফলে এলাকার জনগোষ্ঠীর মধ্যে অতিমাত্রায় জ্বরসহ করোনাভাইরাসের উপসর্গ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অনেকে নমুনা পরীক্ষা করছে না। ফলে তাদের সবাই আক্রান্ত কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যেমন যাচ্ছে না। তেমনই ভারত থেকে অবৈধভাবে দেশে অনুপ্রবেসের কারণে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠছে কিনা তাও নিশ্চিত হতে পারছেন না এলাকার স্বাস্থ্য সচেতনমহল। বিশেষ করে কুুতুবপুর -মুন্সিপুর, কার্পাসডাঙ্গা, আরামডাঙ্গা, বাঘাডাঙ্গাসহ কয়েকটা গ্রামে করোনা উপসর্গে ভোগা রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে বলে এলাকার একাধীকসূত্র জানিয়েছেন। এদিকে ২৩ মে শনিবার দিনগত রাতে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের বাঘাডাঙ্গা গ্রামের মৃত আক্কাস আলীর ছেলে রেজাউল করিমের মৃত্যু হয়। করোনা পরীক্ষায় তার পজিটিভ আসে। ২৭ মে কুড়ুলগাছি ইউনিয়নের চন্ডিপুর গ্রামের আলম শেখের স্ত্রী আমেনা বেগম করোনা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে হলুদ জোনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ২৯ মে কার্পাসডাঙ্গা গ্রামের মৃত আনোয়ার হোসেনের ছেলে আব্দুল মান্নান হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় করোনায় তার মৃত্যু হয়। এদিকে গত ২৫ মে শিবনগর গ্রামের শরীফুল নামের এক চুল ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়। এলাকায় গুঞ্জন ওঠে সে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করেছে। ২৯ মে দিনগত রাতে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরামডাঙ্গা গ্রামের লুৎফর রহমান মন্ডলের স্ত্রী মারা যান। কয়েকদিন ধরে তিনি জ্বরে ভুগছিলেন বলে স্থানীয় এক চিকিৎসক জানান। এবং গ্রামে গুঞ্জন ওঠে তিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। কার্পাসডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান ভুট্টুর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, এলাকায় স্বাস্থবিধি কেউ মানছে না। করোনা ভাইরাসকে মানুষ হাস্যকর মনে করছে। মানুষের মাঝে জ্বর, সর্দিকাশির উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। অধিকাংশকেই নমুনা দিয়ে পরীক্ষা করার বিষয়ে আন্তরিক হচ্ছেন না। অবশ্য এদের অনেকেই সুস্থ হয়ে উঠছেন। ইউপি সদস্য আসলাম উদ্দিন জানান ঈদের পর থেকে আমাদের শিবনগর গ্রামে অনেকের জ্বরের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। কার্পাসডাঙ্গা গ্রামের নারী উদ্যোক্তা নিশাত শারমিন সোনিয়া ফেসবুকে পোস্ট করে জানান, এলাকায় করোনা ভাইরাসে অনেকে আক্রান্ত হচ্ছে। কিন্তু কেউ কোনো নিয়ম মানছেনা। মাক্স নেই, সামাজিক দূরত্ব বজাই রাখার বালায় নেই। বর্ডারের পাশের গ্রামগুলো জ্বর, সর্দিকাশিতে ভোগা রোগীর সংখ্যা বাড়ছেই। এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিলারা রহমানে’র কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, জনগনকে স্বাস্থ্য সচেতন হতে হবে। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ করতে হলে আগে নিজেকে স্বাস্থবিধি মেনে চলতে হবে। ওই এলাকার বিষয়ে আমি শুনেছি। কি করণীয় সেজন্য আমি উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথাও বলেছি। এবিষয়ে সোমবার উপজেলায় সভা অনুষ্ঠিত হবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More