চুয়াডাঙ্গায় কোরবানি ঈদে প্রস্তুত দেড় লাখ পশু

পদ্মাসেতু হয়ে রাজধানীর হাটে পৌঁছাবে পশুবাহী পরিবহণ

জহির রায়হান সোহাগ: পবিত্র ঈদুল আজহার আর ১৫ দিন বাকী। কোরবানী ঈদকে সামনে রেখে বিগত বছরগুলোর মতো এবারও গরু মোটাতাজাকরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন চুয়াডাঙ্গার নিয়মিত ও মৌসুমি খামারিরা।

জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এবার চুয়াডাঙ্গা জেলার চার উপজেলায় কোরবাণী উপলক্ষে ১ লাখ ৫০ হাজার ৫৭২টি পশু প্রস্তুত রয়েছে। এর মধ্যে গরু ৩১ হাজার ৮৭১টি, মহিষ ১৩৮টি, ছাগল ১ লাখ ১৭ হাজার ৩৬টি ও ভেড়া ১ হাজার ৫২৭টি। কোরবানি ঈদ উপলক্ষে এ বছর জেলার চার উপজেলার ১১ হাজার ১৬০ জন খামারি গরু লালন পালন করছেন। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বাইরের জেলায় পাঠানো হবে উদ্বৃত্ত কোরবাণীর পশু। দেশীয় পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজাকরণে খামারিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। সরকারিভাবে দেয়া হচ্ছে ওষুধপত্রও।

এ বছর জেলার সবচেয়ে বড় ও আকর্ষণীয় গরু স¤্রাট। প্রতিদিন পার্শ্ববর্তী জেলাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ক্রেতারা আসছেন স¤্রাটকে দেখতে। প্রায় ৪০ মণ ওজনের গরুটির দাম ধরা হয়েছে ২৫ লাখ টাকা। মহামারি করোনার কারণে গত দুই বছর আশানুরূপ দাম পাননি খামারিরা। তবে, এবছর কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকায় পশুহাটে ন্যায্যদামে গরু বিক্রি করে গত কয়েক বছরের লোকসান পুষিয়ে নেবেন বলে আশা জেলার খামারিদের। এদিকে, ফেরিঘাটে ভোগান্তি এড়াতে পদ্মাসেতু দিয়ে কোরবানির পশুবাহী পরিবহণ রাজধানীর পশুহাটে নেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন সংশিষ্টরা।

চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার পাটাচোরা গ্রামের কৃষক জালাল হোসেন। গত ৩ বছর ধরে নিজের সন্তানের মতো একটি গরু লালন পালন করছেন তিনি। শখের বসে নাম রেখেছেন স¤্রাট। দেখতে স¤্রাটের মতোই। এটি জেলার সবচেয়ে বড় ও আকর্ষণীয় গরুও বটে।

কৃষক জালাল হোসেন জানান, দেশীয় পদ্ধতিতে গরুটি লালন পালন করা হচ্ছে। হোলস্টাইন ফ্রিজিয়ান জাতের গরুটির ওজন প্রায় ৪০ মণ। সাদা কালো রঙের গরুটির উচ্চতা প্রায় ৭ ফুট। স্বভাবে শান্ত গরুটির দাম প্রাথমিকভাবে নির্ধারণ হয়েছে ২৫ লাখ টাকা। প্রতিদিন পার্শ্ববর্তী জেলাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ক্রেতারা আসছেন স¤্রাটকে দেখতে। এ পর্যন্ত ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত দাম হাকিয়েছেন ক্রেতারা। তবে, আশানুরূপ দাম পেলেই গরুটি বিক্রি করবেন বলে জানান তিনি।

এদিকে, কৃষক জালাল হোসেনের মতো দেশীয় পদ্ধতিতে গরু মোটা তাজাকরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলার অন্যান্য নিয়মিত ও মৌসুমী খামারিরা।

আলমডাঙ্গা উপজেলার হাঁপানিয়া গ্রামের খামারি সানোয়ার হোসেন জানান, মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে গত দুই বছর কোরবানির পশুর হাটগুলো বন্ধ থাকায় ন্যায্য দামে গরু বিক্রি করতে পারিনি। তবে, এবছর কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকায় গরু হাটে নিয়ে ভালো দামে বিক্রি করতে পারবো। তাছাড়া পদ্মাসেতু চালু হয়ে গেলে খুব সহজেই রাজধানীর পশুর হাটে গরু বিক্রি করতে যেতে পারবো। সেখানে ভালো দামও পাওয়া যাবে। কিন্তু ভারত থেকে গরু এলে দেশী গরুর দাম কমে যাবে। ভারতীয় গরু আসা বন্ধ থাকলে এবছর লাভ করতে পারবো বলে আশা করছি।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. গোলাম মোস্তফা জানান, দামুড়হুদা উপজেলার পাটাচোরা গ্রামের কৃষক জালাল হোসেনের গরুটি এ বছর জেলার সবচেয়ে বড় গরু। তাকে প্রাণিসম্পদ মেলায় প্রথম পুরস্কারও দেয়া হয়েছে। এছাড়া নিয়মনীতি মেনে গরু হৃষ্টপুষ্ঠ করতে অন্য খামারিদেরও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। উঠান বৈঠক করে দেশীয় পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজাকরণে খামারিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এছাড়া সরকারিভাবে প্রয়োজনীয় ওষুধও দেয়া হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে গত দুই বছর লকডাউনে বন্ধ ছিলো জেলার পশুহাটগুলো। এবছর নিষেধাজ্ঞা না থাকায় বেচা বিক্রি চলছে জেলার ৬টি পশুহাটে। এর পাশাপাশি অনলাইন পশুহাটও চালু করা হয়েছে। সেখানে কোরবানির পশু বিক্রি চলছে। সবকিছু ঠিক থাকলে এবছর লাভের মুখ দেখবেন খামারিরা। এছাড়া ফেরিঘাটে ভোগান্তি এড়াতে পদ্মাসেতু দিয়ে কোরবানির পশুবাহী পরিবহণ রাজধানীর পশুহাটে নিতে খামারিদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More