চুয়াডাঙ্গায় টানা তিনদিন দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড : বিপর্যস্ত জীবন

বিভিন্ন স্থানে হতদরিদ্র ছিন্নমূল ও শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ

স্টাফ রিপোর্টার: ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে দাপট দেখাচ্ছে শীত। চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈতপ্রবাহ। তিনদিন ধরে এ জেলায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। গত শুক্রবার এই মরসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল চুয়াডাঙ্গায় ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল শনিবার তা আরও কমে ৯ দশমিক ৪ এ এসে দাঁড়িয়েছে। এর আগে গত ৩ ডিসেম্বর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গাতে ১১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তিন দিন ধরে চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এর মধ্যে দুদিন ধরে চলা শৈত্যপ্রবাহের বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন।

এদিকে, তীব্র শীতে চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুরের বিভিন্ন স্থানে বসবাসকারী ছিন্নমূল মানুষের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ করেছে বিভিন্ন সংগঠন। চলতি সপ্তাহের শেষ দিকেই একটি মৃদু শৈত্যপ্রবাহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ওপর দিয়ে বইতে শুরু করতে পারে বলে আবহাওয়া অধিদফর জানায়।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রকিবুল হাসান বলেন, ‘শনিবার সকাল ৯টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শুক্রবার ছিল ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃহস্পতিবারও দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা পাওয়া গিয়েছিল এখানে।’ শুক্র ও শনিবার জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈতপ্রবাহ বইছে উল্লেখ করে এই আবহাওয়াবিদ বলেন, ‘হিমেল বাতাস থাকায় এখানে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। সকালে ও সন্ধ্যায় থাকছে তীব্র শীত। এ ছাড়া সারাদিনই শীত অনুভূত হচ্ছে।’ শৈত্যপ্রবাহে চুয়াডাঙ্গায় জনজীবন দুর্বিসহ হয়ে পড়েছে। কুয়াশা ঢাকা প্রান্তরে সূর্যের দেখা প্রায় মিলছেই না। এর মধ্যেই শ্রমজীবী মানুষকে কাজের সন্ধানে বের হতে হচ্ছে। তবে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে ছিন্নমূল মানুষ।

তীব্র শীত অব্যাহত থাকলে বীজতলা ও মরসুমি ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষক। সদর উপজেলার বেলগাছি গ্রামের কৃষক নবিছ উদ্দিন বলেন, ‘শীত ও কুয়াশায় ধানের বীজতলা নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয় আছে। অন্য ফসলেও পোকামাকড়ের আক্রমণ হতে পারে। কুয়াশা থাকলে খেজুরের রস ঘোলা হয়ে যায়। গুড়ের মান ভাল থাকে না। আলুক্ষেতে রোগবালাই দেখা দেয়।’

চুয়াডাঙ্গায় আবহাওয়া পরিবর্তনের পর থেকেই হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে বয়স্করা ঠা-াজনিত রোগে এবং শিশুরা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। ডায়রিয়ার প্রকোপও বাড়ছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার ৮নং ওয়ার্ডের বেলগাছি গ্রামে ১৫০ জন শীতার্তের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। শনিবার রাত ৭টায় বেলগাছি ঈদগাহ ময়দানে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক (ডিসি) আমিনুল ইসলাম খান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ উদ্বোধন করেন। উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামিম ভূইয়া, সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোস্তাফিজুর রহমান, উপজেলা প্রশাসনিক কর্মকর্তা আইনাল হক, ৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইফুল ইসলাম।

জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, জীবননগরে হতদরিদ্র, ছিন্নমূল ও শীতার্ত মানুষের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল শনিবার দুপুরে জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রোকুনুজ্জামান উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বসবাসকারী ছিন্নমূল মানুষের মধ্যে শীতবস্ত্র হিসেবে কম্বল বিতরণ করেছেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. মিজানুর রহমান।

এদিকে চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, শনিবার সকালে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে শুক্রবার জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তার আগে বৃহস্পতিবার জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। টানা ৩ দিনই দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করছে চুয়াডাঙ্গায়। গত ৩-৪ দিন ধরে তীব্র শীতে জীবননগর উপজেলায় জনজীবন একেবারে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ক্রমেই বাড়ছে শীতের প্রকোপ। দিন দিন তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় শীতের তীব্রতা অনুভূত হচ্ছে বেশি। দুর্ভোগ দুর্দশা বাড়ছে ছিন্নমূল মানুষের। কষ্টে পড়েছে বৃদ্ধ, শিশু এবং সকাল হলেই কর্মের সন্ধানে ছুটতে হয় এমন মানুষরা। শীতে মানুষের পাশাপাশি গোবাদি পশুপাখিও কাবু হয়ে পড়েছে। শীতের কারণে উপজেলার সাধারণ মানুষের মাথাব্যথা, কোল্ড ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসনালির প্রদাহ ও সর্দি-জ্বরসহ বিভিন্ন শীতজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। কনকনে শীতে সন্ধ্যায় বাজার-ঘাট প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়ছে। এলাকার ছিন্নমূল মানুষরা শীত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য খড়কুটা জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা চালাচ্ছেন। বাজারের পুরাতন কাপড়ের দোকানগুলোতে শীতবস্ত্র কেনার জন্য নিম্ন আয়ের ও ছিন্নমূল মানুষের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা যাচ্ছে।

মুজিবনগর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, সু-শান্তা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে মুজিবনগর উপজেলার অসহয় দুস্থ ও প্রতিবন্ধী শীতার্তদের মাঝে  শীত বস্ত্র কম্বল বিতরণ করা হয়। গতকাল শনিবার সকাল ১০টায় অত্র সংস্থার মুজিবনগর অফিস চত্বরে কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানে সু-শান্তা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার নির্বাহী পরিচালক সাফিয়া খাতুনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনিমেষ বিশ্বাস। এ সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম তোতা, ওই সংস্থার সদস্য আব্দুল করিম প্রমুখ।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More