চুয়াডাঙ্গায় তরতর করে নামছে তাপমাপা যন্ত্রের পারদ : বেড়েছে শীতের তীব্রতা

মরসুমের প্রথম শৈত্যপ্রবাহ শুরু : ভয়ানক ভাইরাস করোনা ছড়ানোর ভয়সহ পানবরজ ও বরো বীজতলা ক্ষতির শঙ্কা

রেলওয়ে স্টেশন ও হাতিকাটা আবাসনে অসহায় দুস্থদের মাঝে জেলা প্রশাসনের কম্বল বিতরণ
স্টাফ রিপোর্টার: পৌষের শুরুতেই তীব্র শীতে কাপছে দেশের অধিকাংশ এলাকার প্রাণিকূল। গতকাল শনিবার চুয়াডাঙ্গায় তাপমাপার যন্ত্রের পারদ নেমে আসে ৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। গতরাতে শীতের তীব্রতা আরও বেড়েছে। দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা গতকাল শনিবার রেকর্ড করা হয়েছে রাজারহাটে ৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো টেকনাফে ২৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চলতি সপ্তাহ জুড়েই তীব্র শীতের প্রকোপ থাকবে। এদিকে গতরাতে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার রেলওয়ে স্টেশন ও হাতিকাটা আবাসনে অসহায় দুস্থদের মাঝে কম্বল বিতরণ করেছেন।
আবহওয়া বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য এতোদিন মেঘ আর কুয়াশার সাথে শীতের অনেকটা লুকোচুরি চলছিল। দক্ষিণের বাষ্পীয় ভারি বাতাসকে হটিয়ে শেষ পর্যন্ত উত্তরের শীতল বাতাস অধিপত্য বিস্তার করছে। ফলে শীত জেঁকে বসছে। শুক্রবার থেকে তাপমাত্রা দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। শনিবার থেকে দেশের অধিকাংশ এলাকায় মরসুমের প্রথম শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত থাকবে এর প্রভাব।
পুরো মরসুমে তিনটি শৈত্যপ্রবাহের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ বলেছেন, শনিবার থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে মরসুমের প্রথম শৈত্যপ্রবাহ হয়েছে। এই শৈত্যপ্রবাহ কয়েকদিন স্থায়ী হতে পারে। আবহাওয়াবিদ আবদুল মান্নান বলেছেন, শীতের তীব্রতার কারণে এই সময়কে মাঘের মতোই মনে হবে। কুয়াশার প্রাবাল্য থাকবে, আছে হালকা বৃষ্টিরও সম্ভাবনা। উত্তরাঞ্চল ছাড়িয়ে পশ্চিমাঞ্চলেও তথা চুয়াডাঙ্গা কুষ্টিয়া যশোরেও শৈত্যপ্রবাহের বিস্তার ঘটছে। চুয়াডাঙ্গায় এক লাফে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে ৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ঠেকেছে। চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তামপাত্রাও হ্রাস পেয়ে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। শৈত্যপ্রবাহে দুর্ভোগ বেড়েছে ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের মানুষের। রোগ-বালাইও বাড়ছে। করোনা মহামারী আরো সংকটে ফেলতে পারে। শীতের প্রকোপ বাড়লে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাবে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। তাদের মতে, শীতকালে এদেশের মানুষের একসঙ্গে জড়সড়ো হয়ে বসার প্রবণতা এই সংক্রমণ আরো ত্বরান্বিত করবে। ঠা-া আবহাওয়ায় অ্যাজমা, সিওপিডিসহ ফুসফুসের রোগের তীব্রতা বেড়ে যায়। করোনা ভাইরাসের মূল টার্গেটই যেহেতু ফুসফুস, সেক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই শরীরে অল্প পরিমাণ ভাইরাস প্রবেশ করেই বেশি ক্ষতি করতে পারে। তাপমাত্রার সঙ্গে করোনা ভাইরাসের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক না থাকলেও শীতে এর প্রকোপ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইতোমধ্যে তার আলামতও দেখা যাচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক এবং অণুজীব বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. সানিয়া তাহমিনা বলছেন, যে তাপমাত্রায় এই ভাইরাসটি বাড়ে, সহজে সংক্রমিত করতে পারে বা নিজের দ্রুত বিস্তার ঘটাতে পারে, শীতকাল সেটার জন্য আদর্শ। এ কারণেই ধারণা করা হচ্ছে, তীব্র শীতে এই ভাইরাসের বিস্তার বেশি হতে পারে। এই সময়ে বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকায় হাঁচি, কাশি দেয়া হলে বাতাসে জীবাণুর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা অনেকক্ষণ ধরে ভেসে থাকে। গরমের সময় সেটা যখন দ্রুত ধ্বংস হয়ে যায়, কিন্তু শীতের সময় অনেকক্ষণ ধরে বাতাসে থাকে। ফলে মানুষের সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকিও বেশি থাকে। ফলে সকলকে মাস্ক পরাসহ শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। অপরদিকে তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় বোরো বীজতলাসহ শীতকালীন শাকসবজির ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। উত্তরাঞ্চলের কৃষকরা বলছেন, টানা কুয়াশা, শীত ও হালকা বৃষ্টির কারণে মাঠে থাকা বোরো ধানের বীজতলা, সবজি, সরিষা ও গমের অপরিণত চারা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ও আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, শৈত্যপ্রবাহের সাথে কুয়াশা থাকলে বোরো বীজতলার ক্ষতি হতে পারে। পানবরজও ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। ফলে শীতে বীজতলা ও পানসহ অন্যান্য আবাদ রক্ষায় করণীয় সম্পর্কে কৃষি অধিদফতরের মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তাদরে পরামর্শ নিতে হবে। কৃষি কর্মকর্তাদেরও তৃণমূলে কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে হবে।
আবহওয়া অধিদফতর গতকাল পর্বাভাসে বলেছে, উপ-মহাদেশীয় উচ্চ চাপ কলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গে ও তৎসলগ্ন এলাকার উত্তর পশ্চিামাংশে অবস্থান করছে। মরসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপগারে অবস্থান করছে। সারা দেশের আবহওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকার পর্যন্ত দেশের নদী অববাহিকার কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘণ কুয়াশা এবং দেশের অন্যত্র এলাকায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। ময়মনসিংহ, রাজশাহী ও রংপুর বিভাসহ টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল, যশোর, কুষ্টিয়া, বরিশাল এবং ভোলা অঞ্চলসমূহের ওপর দিয়ে মৃদু থৈকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তা অব্যাহত থাকতে পারে।
এদিকে, শীতার্ত মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ শুরু করেছে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন। গতকাল শনিবার রাতে চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশন ও সদর উপজেলার হাতিকাটা আবাসনে ২’শ জন অসহায় দুস্থদের মাঝে কম্বল বিতরণ করেছেন জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার। কম্বল বিতরণের পাশাপাশি তীব্র শীতের মধ্যেও অসহায় ও দুস্থ মানুষের সার্বিক খোঁজখবর নেন জেলা প্রশাসক। এ সময় জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে শীতার্ত মানুষের জন্য এ পর্যন্ত ২০ হাজার ৭০০ কম্বল ও নগদ ২৪ লাখ টাকা আর্থিক সহযোগিতা পাওয়া গেছে। এগুলো জেলার চার উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের অনুকূলে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে যা বিতরণ করা হচ্ছে। প্রয়োজনে আরও চাহিদা পাঠানো হবে। তিনি আরও বলেন, ভৌগলিক কারণে চুয়াডাঙ্গায় শীতের সময় বেশি শীত ও গরমের সময় বেশি গরম অনুভূত হয়। এখন শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। তাপমাত্রা আরও কমে গেলে খুব কষ্টে থাকবে অসহায় মানুষগুলো। তাই এই কঠিন সময়ে প্রশাসনের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানসহ স্বচ্ছল ব্যক্তিদের অসহায় ও দুস্থ মানুষের সহযোগিতায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। কম্বল বিতরণকালে উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ সাদিকুর রহমান, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইসরাত জাহান, জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর আমজাদ হোসেনসহ অন্যরা।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More