চুয়াডাঙ্গায় নতুন আক্রান্ত জীবননগরের ৭ জনের মধ্যে ৬ জনই ব্যাংক কর্মকর্তা : তাদের অনেকেই মানছেন না নির্দেশনা

অফিস বন্ধ থাকায় গ্রামের বাড়িতে গেলেন করোনাভাইরাস আক্রান্ত ৩ ব্যাংকার
স্টাফ রিপোর্টার: ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড জীবননগর শাখার ৬ জনসহ চুয়াডাঙ্গায় নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৭ জন। এ নিয়ে ব্যাংকের ওই শাখায় কর্মরত ১১ জন আক্রান্ত এবং একজনের মৃত্যু হয়েছে। গত বুধবার ব্যাংকের নৈশপ্রহরীর মৃত্যুর পর থেকে ব্যাংকের অন্যান্যদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যাংকের ৩ জন সদস্য নমুনা দেয়ার পর জীবননগর থেকে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যান। যদিও নমুনা সংগ্রহের পর তাদের সকলকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার জন্য নির্দেশনা দিয়েছিলো স্বাস্থ্য বিভাগ। এর আগেও গত সোমবার স্বাস্থ্য বিভাগের বারণ সত্ত্বেও আক্রান্ত ৫ জনের মধ্যে দুজন অফিস করেন। এদিকে, জীবননগর পৌর এলাকার বাজারপাড়ার একটি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাব থেকে চুয়াডাঙ্গার ২০টি রিপোর্টের মধ্যে ৭ জনের পজিটিভ আসে। অপরদিকে, ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড জীবননগর শাখা লকডাউন থাকায় প্রায় ২৫ হাজার গ্রাহককে সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। কারণ তারা টাকা উত্তোলন ও জমা দিতে পারছেন না। শাখা ম্যানেজার বলছেন, আমাদের কিছু করার নেই এখন। স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কর্যক্রম চালাতে পারছিনা। চুয়াডাঙ্গায় এ পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ২০৩। পরীক্ষার জন্য নতুন নমুনা প্রেরণ করা হয়েছে ২৩টি। চুয়াডাঙ্গায় নমুনা পরীক্ষার শতকরা ১০ ভাগ করোনা শনাক্ত হচ্ছে।
সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার সকালে করোনা উপস্থিতি পরীক্ষার জন্য ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড জীবননগর শাখার ১৩ জন কর্মকর্তা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নমুনা দেন। জেলায় মোট আক্রান্ত ৭ জনের মধ্যে রয়েছেন ব্যাংকেরই ৬ জন। আক্রান্তদের তালিকায় ব্যাংকের ম্যানেজার অপারেশন ও ৫ জন অফিসার রয়েছেন। অপরজন ঢাকা ফেরত জীবননগর মনোহরপুর গ্রামের এক নারী। জীবননগর ইসলামী ব্যাংকের করোনা পজিটিভ ৩ জন নমুনা দিয়ে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যান। ব্যাংকের ৩২ বছর বয়সের একজন জীবননগর বাসস্ট্যান্ড থেকে শাপলা পরিবহনের একটি গাড়িতে করে যশোর যান। সেখান থেকে তিনি নিজ গ্রামের বাড়ি মনিরামপুর গিয়েছেন। তিনি বলেছেন, শরীর সম্পূর্ণ সুস্থ থাকায় বাড়িতে চলে এসেছি। তারপর অফিসও বন্ধ রয়েছে। ব্যাংকের ৩৪ বছর বয়সী একজন অফিসার নমুনা দিয়েই গ্রামের বাড়ি মাগুরা জেলার সাজিআরা গ্রামের নতুন জেলখানাপাড়ায় যান। ব্যাংক বন্ধ থাকায় তিনি পরিবারের কাছে চলে যান। আর একজন অফিসার তিনিও নমুনা দিয়ে গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহ জেলায় চলে যান। তিনিও অফিস বন্ধ থাকায় বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছেন। ব্যাংকের ম্যানেজার (অপারেশন) শহরের বাজারপাড়ার একটি তিনতলা বাড়ির মেসে আছেন। আর একজন সদস্য জীবননগর শহরে ভাড়াবাড়িতে অবস্থান করছেন। ৩৬ বছর বয়সের একজন অফিসার চুয়াডাঙ্গা শহরের বড়বাজার এলাকায় বাড়িতে থাকেন। তিনি প্রতিদিন চুয়াডাঙ্গা থেকে জীবননগরে ব্যাংকে আসা-যাওয়া করতেন। জীবননগর থেকে গ্রামের বাড়িতে চলে যাওয়া করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যাংকের ৩ কর্মকর্তা বলেছেন, নমুনা দিয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে এসেছি। কারণ শরীর সুস্থ রয়েছে। আর ব্যাংক বন্ধ থাকায় বাড়িতে বেড়ানো হলো। নতুন করোনা আক্রান্ত ৭ জন বর্তমানে হোম আইসোলেশনে রয়েছেন।
ইসলামী ব্যাংক জীবননগর শাখার ম্যানেজার নজরুল ইসলাম বলেন, ব্যাংকের শাখায় ৩০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। ১৯ জনের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। বাকিদের পরীক্ষা করানো হবে। ১১ জন আক্রান্ত রোগী হোম আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন রয়েছে। আর একজন মারা গেছেন। নমুনা দিয়ে করোনা পজিটিভ হওয়া তিনজন বাড়ি চলে গিয়েছে, তাদের জীবননগর ছেড়ে যাওয়াটা উচিত হয়নি। তারা অন্যদের ঝুঁকির মধ্যে ফেললো। তাদের সকলকেই গ্রামের বাড়িতে হোম আইসোলেশনে থাকার জন্য বলা হয়েছে।
জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. জুলিয়েট পারউইন বলেন, ব্যাংকের ১৩ জন সদস্য মঙ্গলবার হাসপাতালে নমুনা দেন। তাদের প্রত্যেককে বলা হয় রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে। কিন্তু ৩ জন সদস্য বাড়ি চলে গেছেন। বাড়ি চলে যাওয়ার বিষয়টি দুঃখজনক। এর আগেও নৈশপ্রহরীর মৃত্যুর পর ব্যাংকের অন্যান্য সদস্যদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তখন তাদের অফিস না করার জন্য বলা হয়। বারণ সত্ত্বেও তাদের মধ্যে দুজন গত সোমবার অফিস করেন। সোমবার পাওয়া রিপোর্টে তারা দুজনও আক্রান্ত হয়েছেন।
জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম মুনিম লিংকন জানান, করোনা আক্রান্ত ব্যাংক সদস্যরা যে বাড়িতে থাকতো তা লকডাউন করা হয়েছে। রেড জোন ঘোষণার ব্যাপারে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে। সিভিল সার্জন এএসএম মারুফ হাসান বলেন, ব্যাংকের ৩ জন সদস্য নমুনা দিয়ে বাড়ি চলে গেছে। তারা যে জেলায় বাসিন্দা সংশ্লিষ্ট জেলার সিভিল সার্জনদের অবহিত করব ব্যবস্থা নিতে। স্বাস্থ্য বিধি না মেনে বাড়িতে যাওয়া ঠিক হয়নি। তাদের থেকে অনেকে সংক্রমিত হতে পারে।
এদিকে, একই গ্রামের ৯ জন করোনা আক্রান্ত হওয়ায় আলমডাঙ্গার হাড়োকান্দী গ্রামজুড়ে রীতিমত করোনা আতঙ্ক বিরাজ করছে। গতকাল দুপুরে আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. লিটন আলী, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হাদী জিয়াউদ্দীন আহমেদ, আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ হাড়োকান্দী গ্রামে উপস্থিত হয়ে গ্রামটি লকডাউন ঘোষণা করেন। এ সময় তারা করোনা আক্রান্তদের পরিবারে খাদ্যসহায়তা প্রদান করেন।
চুয়াডাঙ্গার চারটি উপজেলায় এ পর্যন্ত দুই শতাধিক মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে সুস্থ্য হয়েছে ১১০ জন। ৯১ জন রোগি চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন। সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ৩১ জন ও হোম আইসোলেশনে রয়েছে ৬০ জন। করোনা আক্রান্ত হয়ে জেলায় দুই জন মারা গেছেন। এ পর্যন্ত নমুনা প্রেরণ করা হয়েছে ১৯৯০ জনের। নমুনা পরীক্ষায় শতকরা ১০ জন করোনা রোগি শনাক্ত হয়েছে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More