চুয়াডাঙ্গায় পাটের ফলন ও দাম ভালো : জুট মিলগুলো বন্ধ থাকায় পাট নিয়ে বেশ চিন্তা

স্টাফ রিপোর্টার: গত বছরের তুলনায় এ মরসুমে পাটের আবাদ চুয়াডাঙ্গায় বেশি হয়েছে। পাটের দাম ভালো থাকায় কৃষকরা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। কিন্তু এ বছর পাট চাষে খরচ বেশি হওয়ায় কৃষকরা লোকসানে পড়তে পারে। নদী, খাল-বিল ও ডোবায় পানি থাকায় পাট জাগ দিতে সমস্য হচ্ছে না। পানিতে ডুবে যাওয়া এলাকায় আগে পাট কেটে ফেলায় ফলন কম হতে পারে। এ মরসুমে ১ হাজার ৩০৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষ বেশি হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পাটের ফলনও যথেষ্ট ভালো হয়েছে। কৃষকরা বলছেন, বর্তমান পাটের দাম ভালো রয়েছে। জুট মিলগুলো বন্ধ থাকায় পাট নিয়ে বেশ চিন্তায় রয়েছেন কৃষকরা। বাজারে পাট যখন বেশি উঠবে তখন বিক্রি কম হলে অল্প দামেই বিক্রি করতে হবে। পাট উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪১ হাজার ৩২৫ মেট্রিক টন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, এ মরসুমে কৃষকরা চুয়াডাঙ্গার চারটি উপজেলায় ১৬ হাজার ৫৩০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করছেন কৃষকরা। গত বছর ১৫২২৫ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছিলো। এ মরসুমে ১ হাজার ৩০৫ হেক্টর জমিতে বেশি পাটের আবাদ হচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ৮১০ হেক্টর, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৮ হাজার ২৬০ হেক্টর, দামুড়হুদা উপজেলায় ৫ হাজার ৮৩০ হেক্টর ও জীবননগর উপজেলায় ১ হাজার ৬৩০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হচ্ছে। গত বছর সদর উপজেলায় ৫৯০ হেক্টর, আলমডাঙ্গায় উপজেলায় ৬ হাজার ২০০ হেক্টর, দামুড়হুদায় উপজেলায় ৬ হাজার ২৮৫ হেক্টর ও জীবননগর উপজেলায় ২ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ হয়েছিলো। এ মরসুমে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১৫ হাজার ২২৫ হেক্টর জমিতে। আর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪১ হাজার ৩২৫ মেট্রিক টন।
এ বছর পাটের রঙ ভালো হওয়ায় যে কোনো বছরের তুলনায় দাম অনেক বেশি। শুক্রবার সকাল থেকে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার সরোজগঞ্জ বাজারে কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা পাট নিয়ে আসেন বিক্রির জন্য। হাটে প্রায় ৫শ মণ পাট কেনা-বেচা হয়েছে শুক্রবার। প্রতি মণ পাট বিক্রি হচ্ছে হাটে ১৭শ টাকা থেকে ১৮শ টাকা পর্যন্ত। ভিজা পাটগুলো ১ হাজার টাকা থেকে ১২শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। হাটে তুলনামূলক কম পাট আসছে।
বৃষ্টির পানিতে ভরে গেছে নদী, খাল-বিল ও ডোবা। পাট জাগ দিতে কোনো সমস্য নেই। কিন্তু কিছু এলাকায় পাট পানিতে ডুবে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে কেটে ফেলতে হচ্ছে কৃষকদের। কাঁচা পাট কেটে ফেলায় ফলন কম হতে পারে। পাটের দাম শুরুতেই ভালো থাকায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। পাটের রঙ এ মরসুমে ভালো। প্রতি বিঘায় ১৪-১৬ মণ পাট পাওয়া যায়। কৃষকরা রবি-৮ ও জিআরও-৫২৪ জাতের পাট চাষ করছেন। গত বছর পাট জাগ দেয়ার জন্য যথেষ্ট পানি ছিলো না। পাট জাগ দেয়ার জন্য পুকুর ভাড়া করতে হয়েছিলো। অনেকে শুকিয়ে খড়ি হিসেবে ব্যবহার করেছেন। অল্প পানিতে পাট জাগ দেয়ার কারণে পাটের রঙ কালো হয়েছিলো।
দামুড়হুদা নাতিপোতা গ্রামের কৃষক মোমিন হোসেন বলেন, গত বছর পাট নিয়ে নানা সমস্যায় ছিলাম। এবার সব জায়গায় পানি রয়েছে। জাগ দিতে কোনো সমস্যা নেই। আমি দশ মণ পাট বিক্রি করেছি। প্রতি মণ পাটের দাম ১৬৫০ টাকা পেয়েছি। বাজার ভালো আছে। চার বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি এবার।
জীবননগর উপজেলার মনোহরপুর গ্রামের কৃষক আকিমুল ইসলাম জানান, পাটের ফলন ভালো হয়েছে। প্রতি বিঘায় ১৪-১৬ মণ পর্যন্ত পাট পাওয়া যাচ্ছে। পাট চাষে বিঘায় খরচ হয় ৮-৯ হাজার টাকা। পাট কলগুলো বন্ধ থাকায় বাজারে দামের প্রভাব পড়তে পাড়ে।
চুয়াডাঙ্গা সরোজগঞ্জ বাজারের পাটের আড়তদার শেখ মো. আব্দুল্লাহ বলেন, হাটে পাট আসতে শুরু হয়েছে। দাম গত বছরের তুলনায় বেশ ভালো। পাটের মানের ওপর নির্ভর করছে দাম। ভিজা পাটের দাম কম। কয়েক দিনের মধ্যে প্রচুর পাটের আমদানি হবে। দাম এভাবে থাকলে কৃষকরা লাভবান হবেন।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক সুফি মো. রফিকুজ্জামান বলেন, জেলায় পাট চাষ বাড়ছে। কৃষকরা দাম ভালো পাচ্ছেন। কৃষকদের উন্নত মানের বীজ সরবরাহ করা হচ্ছে। পাটের মান অনেক ভালো।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More