চুয়াডাঙ্গায় প্রতিবেশীর হেঁসোর কোপে যুবক খুন : অভিযুক্ত গ্রেফতার

ডিঙ্গেদহ প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রতিবেশীর ধারালো অস্ত্রের কোপে আপন হোসেন নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন তার পিতা মোতালেব হোসেন। বাড়িতে ঢোকার রাস্তায় গরুর গোবর ও চুনা ফেলাকে কেন্দ্র করে বাগবিত-ার এক পর্যায়ে সদর উপজেলার ফুলবাড়ি গ্রামে এ খুনের ঘটনা ঘটে। মোতালেবকে গুরুতর জখম অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে। এ ঘটনায় প্রতিবেশী অভিযুক্ত খুনি আবুল কালামকে ধারালো অস্ত্রসহ গ্রেফতার করা হয়েছে। থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়নের স্থানীয় ইউপি মেম্বার সাদেক আলী জানান, ‘ফুলবাড়ি গ্রামের পশ্চিমপাড়ার মোতালেব হোসেনের পরিবারের সাথে প্রতিবেশী আবুল কালামের পরিবারের বিরোধ চলে আসছিলো। মৃত রানাত আলীর ছেলে আবুল কালাম প্রতিদিন ওপর গরুর গা ধোয়ায় এবং গরুর গোবর ও চুনা ফেলে রাখে মোতালেবের বাড়ি ঢোকার রাস্তায়। এতে মোতালেবের ছেলে ইজিবাইক চালক আপন হোসেনের ইজিবাইক ময়লা কাদায় আটকে যায়। আপন এর প্রতিবাদ করেন এবং পরবর্তীতে রাস্তার ওপর এসব না ফেলার জন্য বলেন। এ নিয়ে গতকাল রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে দুই পরিবারের মধ্যে বাগবিত-া শুরু হয়। এক পর্যায়ে আবুল কালাম ও তার পরিবারের লোকজন আপনের ওপর হামলে পড়ে এবং আপনকে (২২) ধারালো হেঁসো দিয়ে কুপিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে। এ সময় ছেলে আপনকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসেন পিতা মোতালেব হোসেন (৪৫)। মোতালেবকেও এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে আবুল কালাম।
পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় পিতা-পুত্র দুজনকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাত ৮টার দিকে আপন মারা যান। উন্নত চিকিৎসার জন্য মোতালেবকে ঢাকায় রেফার করা হয়। এদিকে ঘটনার পরপরই স্থানীয় সরোজগঞ্জ ক্যাম্প পুলিশ ধারালো হোঁসোসহ অভিযুক্ত খুনি আবুল কালামকে গ্রেফতার করে। আপনের মৃতদেহ উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। আজ সোমবার তার লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হবে।’
দগ্রামবাসী জানায়, ‘এঘটনায় ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিলে সরোজগঞ্জ ক্যাম্পের এসআই তাইফুজ্জামান ঘটনাস্থল হতে অভিযুক্ত ঘাতক আবুল কালামকে গ্রেফতার করে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় সোপর্দ করেন। নিহত আপন বছরখানেক আগে বিয়ে করেন এবং তার স্ত্রী বর্তমানে পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। আপনের মৃত্যুর খবর শুনে সন্তান সম্ভাবা স্ত্রী মোর্ছা যেতে থাকেন। মহল্লাবাসী জানায়, ঘাতক আবুল কালাম একজন অসামাজিক মানুষ। মহল্লায় প্রায় ১২০ পরিবার বসবাস করে কিন্তু কারো সাথে কালামের সুসম্পর্ক নেই। আবুল কালাম ও তার স্ত্রী জাহির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে মহল্লাবাসী। আজ সোমবার ময়নাতদন্ত শেষে গ্রামের কবরস্থানে আপনকে দাফন করা হবে।’
নিহত আপনের মা কমেলা বেগম ঘটনার বর্ণনা দিয়ে জানান, ‘ঝগড়া বাধার পর আমার ছেলেকে আবুল কালাম, তার স্ত্রী জাহিরন খাতুন, ছেলে রাজিবুল হক, মেয়ে নাজমা খাতুন ও শিমলা খাতুন হেঁসো ও বটি দিয়ে কুপিয়ে জখম করে। ছেলে আপনকে বাঁচাতে গেলে আমার স্বামী মোতালেব হোসেনকেও কুপিয়ে জখম করে তারা। আমাদের চিৎকারে অন্য প্রতিবেশীরা ছুটে এলে তারা পালিয়ে যায়। পরে আমার ছেলে ও স্বামীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক আপনকে মৃত ঘোষণা করেন।’ চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মাহবুবুর রহমান জানান, ‘আপনের হাত ও মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে কোপের ক্ষত চিহ্ন রয়েছে। তার শরীর থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তির কিছুক্ষণ পর মারা যান তিনি। আহত মোতালেবের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।’
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) জাহাঙ্গীর আলম জানান, ‘নিহতের মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িত আবুল কালামকে গ্রেফতার করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে খুনে ব্যবহৃত ধারালো একটি হেঁসো। ওই ঘটনায় থানায় মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More