চুয়াডাঙ্গায় বাবার বন্ধুর লালসার শিকার স্কুলছাত্রীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় পিতার বন্ধুর লালসার শিকার এক কিশোরী স্কুলছাত্রীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। শুক্রবার ভোর রাতে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার মাখালডাঙ্গা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। শ্লীলতাহানির শিকার ওই কিশোরী আত্মহত্যা করেছে বলে পুলিশের ধারণা। নিহত কিশোরী সুমাইয়া খাতুন (১৩) মাখালডাঙ্গা গ্রামের দরিদ্র মুদি দোকানি সিদ্দিক আলীর মেয়ে এবং স্থানীয় মাখালডাঙ্গা-দীননাথপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্রী ছিলো। অভিযুক্ত ধর্ষণচেষ্টাকারী লোকমান হোসেন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার হালসা নওদাপাড়ার জামাল হোসেনের ছেলে। বাউলপন্থি লোকমান আলী ওই স্কুলছাত্রীর পিতার বন্ধু।
ঘটনার রাতে লোকমান ওই স্কুলছাত্রীর বিছানায় গিয়ে জোরপূর্বক শ্লীলতাহানি করে এবং ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। এর পরপরই গোয়ালঘরে ঝুলন্ত অবস্থায় সুমাইয়া খাতুনকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। পরদিন অর্থাৎ গতকাল শুক্রবার সকাল ৭টার দিকে তার মৃত্যু হয়। বিকেলে ময়নাতদন্ত শেষে গ্রাম্য কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছে অভিযুক্ত লোকমান হোসেন। এদিকে অভিযুক্তের বিচারের দাবিতে এলাকার লোকজন ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে। অবিলম্বে তাকে গ্রেফতারের দাবিও জানিয়েছে স্থানীয়রা।
এলাকাবাসীরা জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে মাখালডাঙ্গা গ্রামের বাগানপাড়ার সাইরা খাতুনের উদ্যোগে সাধুসঙ্গের আয়োজনে বাউল গান চলছিল। গানের আসরে অংশ নেয় কিশোরী সুমাইয়া খাতুনের বাবার বন্ধু কুষ্টিয়ার মিরপুর থানার হালসা নওদাপাড়ার বাউল অনুসারী লোকমান আলী। এছাড়াও মাঝেমধ্যেই লোকমান তাদের বাড়িতে আসা-যাওয়া করতো। বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে মা-বাবা ঘরে না থাকার সুযোগে ওই কিশোরীর সঙ্গে ধস্তাধস্তি করে লোকমান। বিষয়টি প্রতিবেশী আনারুল দেখে ফেলেন। তিনি বিষয়টি জানিয়ে ওই কিশোরীর মাকে গানের আসর থেকে ডেকে নিয়ে আসেন। তারা বাড়িতে এসে খোঁজাখুঁজির পর গোয়ালঘরে ঝুলন্ত অবস্থায় মেয়েটিকে দেখতে পান। তাকে দ্রুত উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করলে সকাল ৭টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনার পর অভিযুক্ত লোকমান পালিয়ে যায়।
এদিকে, বিষয়টি প্রথমে ধামাচাপা দিয়ে লোকমানকে বাঁচানোর চেষ্টা করে এলাকার কিছু মানুষ। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে লোকমানের বিচার দাবিতে এলাকার লোকজন ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে। অবিলম্বে তাকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে তারা।
এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মাছ ব্যবসায়ী আনারুল ‘দৈনিক মাথাভাঙ্গা’কে বলেন, বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে গানের আসর থেকে বাড়ি ফেরার পথে কিশোরীর বাড়ির বারান্দায় লোকমানের সঙ্গে ওই কিশোরীর ধস্তাধস্তি দেখতে পাই। পরে তার মাকে গানের আসর থেকে ডেকে নিয়ে বাড়িতে আসি। এ সময় গোয়ালঘরে ওই কিশোরীকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পাই আমরা। তিনি আরও বলেন, গত পাঁচদিন আগেও ওই কিশোরীর হাত ধরে টানাটানি করা অবস্থায় লোকমানকে স্থানীয় কয়েকজন দেখে ফেলে। সে সময় বিষয়টি তার মামাকে জানানো হয়।
কিশোরীর পিতা সিদ্দিক আলী জানান, ১২ বছর আগে তাদের এলাকায় সাধুসঙ্গের আসর চলার সময় কুষ্টিয়া হালসার লোকমানের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এরপর থেকে লোকমান তার বাড়িতে যাতায়াত করতো। ঘটনার রাতে তিনি বাড়ি ছিলেন না। সেই সুযোগে তার মেয়েকে ধর্ষণের চেষ্টা করে ওই যুবক। তিনি আরও জানান, এ ঘটনার পর তার মেয়ে ঘরের আড়ার সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে।
ওই কিশোরীর মা বলেন, আমি রাতে গানের আসরে ছিলাম। আমার স্বামী দোকানদারি করছিলেন। আমার মেয়েকে একা পেয়ে লোকমান জড়িয়ে ধরে কোন খারাপ উদ্দেশ্যে ধস্তাধস্তি করে বলে জানায় প্রতিবেশী আনারুল। আমি দ্রুত বাড়ি ফিরে মেয়েকে খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে দেখি গোয়ালঘরের বাঁশের সঙ্গে গলায় ওড়না দিয়ে ঝুলে আছে। পরে চেঁচামেচি করলে প্রতিবেশীরা ছুটে এসে মেয়েকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে দ্রুত চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করি। সকালে আমার মেয়ে মারা যায়। তিনি আরও বলেন, আমার দুই মেয়ে এক ছেলের মধ্যে সুমাইয়া মেজ। আমি আমার মেয়ের মৃত্যুর বিচার চাই।
এদিকে গতকাল দুপুরেই ময়নাতদন্ত শেষে কিশোরীর মরদেহ পরিবারের নিকট হস্তান্তর করে সদর থানা পুলিশ। পরে বাদ আছর জানাজার নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। স্থানীয় ইউপি সদস্য আশরাফুল হক ঠা-ু বলেন, রাতে মেয়েটির বাবার বন্ধুর হাতে ধর্ষণ হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। অভিযুক্ত লোকমানের বিরুদ্ধে বিচারের দাবিতে এলাকার লোকজন ফুঁসে উঠেছে। অভিযুক্তকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তিনি। এ ঘটনায় লোকমান আলী ও আলমডাঙ্গার খাদিমপুর গ্রামের ইয়াজ উদ্দিনের ছেলে শান্তিকে আসামি করে মামলা করেছেন কিশোরীর পিতা আবু সিদ্দিক। সুমাইয়াকে ধর্ষণচেষ্টার সময় শান্তি সহায়তা করছিলো বলেও মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি আবু জিহাদ খান বলেন, বাবার বন্ধু লোকমানের অসংলগ্ন আচরণে মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি। আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কিছু আলামত জব্দ করেছি। এ ঘটনার পর অভিযুক্ত লোকমান পলাতক রয়েছেন। এ বিষয়ে নিহতের পিতা আবু সিদ্দিক বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় প্রধান আসামি কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার নওদাপাড়া গ্রামের মৃত জামাল হোসেনের ছেলে লোকমান হোসেন। মামলার অপর আসামি হলেন আলমডাঙ্গার খাদিমপুর গ্রামের ইয়াজ উদ্দিনের ছেলে শান্তি। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আসামিদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More