চুয়াডাঙ্গায় ভুট্টা আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে ॥ উৎপাদন হবে ৫ লাখ মেট্রিক টন

বিক্রি করে আয় হবে ৯শ কোটি টাকা ॥ করোনার প্রভাবে দাম কিছুটা কমে গেছে
স্টাফ রিপোর্টার: করোনার প্রভাবে গোটা পৃথিবী যখন লকডাউনে। তখন লকডাউন উপেক্ষা করে চুয়াডাঙ্গা প্রায় আড়াই লাখ ভুট্টা চাষি মাঠে ময়দানে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সরকার ঘোষিত সামাজিক দূরত্ব মেনে ভূট্টা কেটে ঘরে তোলার কাজ সারছেন। ইতোমধ্যে জেলার ৫০ ভাগ ভুট্টা কাটার কাজ শেষ করেছে। বাকি ৫০ শতাংশ চলতি মাসেই শেষ হবে। করোনার প্রভাবে ভুট্টার বাজার কিছুটা কমে গেলেও কৃষক বেশ লাভবান হবে। তবে উৎপাদিত ফসল সংরক্ষণ ও সঠিক সময়ে বিক্রি করা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে কৃষক।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ভুট্টা এখন চুয়াডাঙ্গা কৃষকদের প্রধান আবাদি ফসল। গত ১০ বছর ধরে ধান, গমসহ সব ধরনের আবাদকে ছাপিয়ে ভুট্টার অবস্থান এখন শীর্ষে। জেলার মোট আবাদি জমির পরিমাণ ৯৭ হাজার ৫৮২ হেক্টর। যার অর্ধেক ভুট্টার চাষ হয়। সারাদেশে মোট উৎপাদিত ভুট্টার ৫ ভাগের একভাগ চাষ হয় চুয়াডাঙ্গায়। চুয়াডাঙ্গায় চলতি মরসুমে ৪৬ হাজার ১২১ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিলো। এবার আবাদ হয়েছে ৪৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমি। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে চাষ বেড়েছে ২ হাজার ৩৭৯ হেক্টর। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদরে ১৫ হাজার ১২০ হেক্টর, আলমডাঙ্গায় ১৩ হাজার ৭০০, দামুড়হুদায় ১৪ হাজার ৪৬০ ও জীবননগরে ৫ হাজার ২২০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০.৩২ মেট্রিক টন। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদরে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৩৮ টন, আলমডাঙ্গায় ১ লাখ ৪১ হাজার ৩৮৪, দামুড়হুদায় ১ লাখ ৪৯ হাজার ২২৭ ও জীবননগরে ৫৩ হাজার ৭৬৭ টন। এ হিসাবে জেলায় মোট উৎপাদন হবে ৫ লাখ ৫২০ টন ভুট্টা। যার বাজার মূল্য ৯শ কোটি টাকা।
চলতি রবি মরসুমে ৪৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা আবাদ হয়েছে। সেখানে ২০০২ সালে আবাদকৃত জমির পরিমাণ ছিলো মাত্র ৫৬৫ হেক্টর। অর্থাৎ গত দেড়যুগে জেলায় আবাদ বেড়েছে প্রায় ৮৬ শতাংশ।
কৃষকরা জানান, খরচ বাদ দিয়ে বিঘাপ্রতি ১০-১৫ হাজার টাকা লাভ থাকে। বছরে দুবার ভুট্টা চাষ করা যায়। নভেম্বর-ডিসেম্বর এবং মে-জুন ভুট্টা চাষের উপযোগী সময়। শীতকালে ফলন বেশি, তাই চাষিরা এ সময় আবাদও করে থাকেন বেশি। কৃষকরা জানান, বিঘা প্রতি ধান আবাদ করে গড়ে ২৫-৩০ মণ ফলন পাওয়া যায়। যার বাজার মূল্য ১৪-১৬ হাজার টাকায়। অপর দিকে একই পরিমান জমিতে ভুট্টা আবাদ করে ফলন পাওয়া যায় ৪০-৪৫ মণ। যার বাজার মূল্য কম করে হলেও ২৪ হাজার টাকা। সে কারণে চাষিরা ধান আবাদ কমিয়ে ভুট্টার দিকে ঝুকছে।
চুয়াডাঙ্গার হাতিকাটার ভুট্টা ব্যাবসায়ী হাবিবুর রহমান হাবলু বলেন, এখন ভুট্টা ক্রয়-বিক্রয়ের ভরা মরসুম। কিšুÍ করোনার কারণে আমদানি নেই। কৃষকের খুব বেশি টাকার প্রয়োজন না হলে কেউ ভুট্টা বিক্রি করতে আসছেন না। রয়েছে পরিবহন সংকট। তবে ১ মাস আগে প্রতিমন ভুট্টা ৮‘শ টাকা দরে বিক্রি হলেও , বর্তমানে ৬৮০ হতে ৭২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
জেলা সদরের জালশুকা গ্রামের কৃষক ফারুক হোসেন বলেন, এ বছর করোনার কারণে উৎপাদিক ভুট্টা বিক্রি করতে পারছি না। আবার বাজারে দাম কমে গেছে। বালিয়াকান্দি গ্রামের দেলোয়ার হোসেন বলেন বলেন, চার বিঘা জমিতে ভুট্টা আবাদ করেছি। বীজ, সার ও সেচ বাবদ খরচ হয়েছে ৩৯ হাজার টাকা। ফলন ও দাম ভালো পাওয়া গেলে বিঘাপ্রতি খরচ বাদে ১৪-১৫ হাজার টাকা লাভ হবে বলে আশা করছি। আলুকদিয়ার ব্যবসায়ী ওহাব জোয়ার্দার বলেন, গত মরসুমে প্রতি মণ ভুট্টা ৭০০-৭৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছিলো। বর্তমানে ভুট্টার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক সুফি রফিকুজ্জামান বলেন, ভুট্টা এই জেলার প্রধান অর্থকারী ফসল। এরসাথে প্রায় আড়াই লাখ চাষি জড়িত। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে। তবে কৃষকরা যদি ভুট্টা সংরক্ষণ করতে পারতো তা হলে আর বেশি লাভবান হতো।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More