চুয়াডাঙ্গায় সাংবাদিকের ওপর নৃশংস হামলা : রাজুকে আটক করেছে পুলিশ

তুচ্ছ ঘটনার জেরে সড়কে ছুরিকাঘতের পর হাসপাতালের জরুরী বিভাগেও মধ্যযুগীয় বর্ববর কায়দায় আক্রমণ
স্টাফ রিপোর্টার: মোটরসাইকেলে ধাক্কা লাগাকে কেন্দ্র করে সাংবাদিক সোহেল রানা ডালিম নৃশংস হামলার শিকার হয়েছেন। দু দফা হামলা চালিয়ে বুকে পিঠে হাতেসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের প্যোচে ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে। গতকাল সোমবার রাতা ােয়া ৮টার দিকে জেলা শহরের ইমার্জেন্সি সড়কে পিঠে ধারালো অস্ত্রের প্যোচ মারা হয়। সোহেল রানা ডালিম চিকিৎসার জন্য সদর হাসপাতালে গেলে হাসপাতালের জরুরী বিভাগে চিকিৎসকের সামনেই হামলা চালায় ওই চক্রের কয়েক সদস্য। জীবন বাঁচাতে হাসপাতালের এদিক ওদিন দৌড়ে ছোটা ছুটি করতে থাকেন। পিছু ধাওয়া করে বুকে ও হাতেসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধঅরালো অস্ত্রের আঘাত করা হয়। ক্ষতবিক্ষত সাংবাদিককে পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে জরুরী বিভাগে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়। শরীরে কয়েকশ সেলাই দিতে হয়েছে। অপরদিকে পুলিশ রাজু নামের একজনকে আটক করেছে। আটক রাজু অঅহমেদ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক। তার সহযোগিদের ধরতে গতরাতে পুলিশ একাধীক স্থানে অভিযান চালিয়েছে।
ধারালো অস্ত্রের কোপে ক্ষত বিক্ষত সাংবাদিক সোহেল রানা ডালিম অভিযোগ তুলে বলেছেন, হত্যার জন্যই ওরা একের পর এক আঘাত করেছে। ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেছেন, সন্ধ্যার পর একাডেমি মোড় থেকে কর্মস্থল পত্রিকা সময়ের সমিকরণ অফিসের উদ্দেশে মোটরসাইকেল যোগে রওনা হয়ে ইর্মাজেন্সি সড়কের আব্দুল্লাহ সিটি মার্কেটের পশে পৌছুলে একটি মোটরসাইকেলের সাথে ধাক্কা লাগে। মোটরসাইকেলে ধাক্কা লাগাকে কেন্দ্র করে উগ্র আচরণ করে রাজু আহমেদ। রাস্তা চলতে গেলে এরকম একটু আধটু হতে পারে বলি। এসময় পেছন থেকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। রক্তাক্ত জখম হয়ে প্রাণরক্ষার্থে হাতে থাকা হেলমেট দিয়ে প্রতিরোধের চেষ্টা করি। এক পর্যায়ে অটোতে উঠে হাসপাতালে আসি। হাসপাতালের জরুরী বিভাগে চিকিৎসক ট্রেসারের ওপর সুয়ে চিকিৎসা দিতে শুরু করেন। এমন সময় কয়েকজন হামলাকারী গালিগালাজ করতে করতে জরুরী বিভাগের মধ্যে ঢুকে আবারও ধারো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। হাত দিয়ে ঠেকাতে গেলে হাত ক্ষতবিক্ষত হয়। বুক চাকু মারে। প্রাণ রক্ষার্থে দৌড়ে হাসপাতালের গোলচত্ত্বরের কাছে আসি। ওরাও পিছু নিয়ে একের পর এক আঘাত করতে থাকে। এক পর্যায়ে হামলাকারীরা সরে যায়। স্থানীয়দের সহযোগিতায় হাসাপতালের জরুরী বিভাগে নেয়। চিকিৎসক চিকিৎসা দেন। কয়েকশ সেলাই দিতে হয়েছে। রক্তক্ষরণের কারনে রক্তি দিতে হচ্ছে। হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। রেফার্ডও করা হতে পারে। এদিকে খবর পেয়ে ঘটনার পরপরই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম, সদর থানার অফিসার ইনচাজ ইন্সপেক্টর আবু জিহাদ খান, চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব সভাপতি সরদার আল আমিন, সময়ের সমিকরণ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক নাজমুল হক স্বপন, প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফাইজার চৌধুরী, সাবেক পৌর মেয়র ওবাইদুর রহমান চৌধুরী জিপু, জেলা ছাত্রলীগ সেক্রেটারি মো. জানিফসহ অনেকেই হাসপাতালে ছুটে আসেন। চিকিৎসার খোঁজখবর নেন এবং হামলার বর্ণনা শুনে বিস্ময় প্রকাশ করে হামলাকারীদের ধৃষ্ঠতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এক পর্যায়ে হাসপাতাল এলাকা থেকেই গ্রেফতার করা হয় রাজু আহমদকে। তিনি সাতভাই পুকুরপাড়ার বাসিন্দা। এই রাজু ইতোপূর্বে একাধীক অভিযোগে অভিয়ুক্ত। পূর্বে হামলারও শিকার হয়ে একটি চোখও হারাতে হয়েছে তাকে।
এক প্রত্যক্ষদর্শি বলেছেন, সাংবাদিক সোহেল রানা ডালিম আব্দুল্লাহ সিটির পাশে পুকুরের গলির চা দোকানের সামনে দিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় রাজুসহ ৩ জন ওই রাস্তা দিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় সাংবাদিকের মোটরসাইকেলের সাথে রাজুদের মোটরসাইকেলের পেছনে ধাক্কা লাগে। ব্যাক লাইট ভেঙে যায়। রাজুসহ তার সাথে থাকা যুবকেরা মোটরসাইকেল থেকে নেমে ধাক্কা মারলি কেনো প্রশ্ন তোলে। সাংবাদিক ডালিম বলেন, আচমকা ব্রেক কষেছেন বলেই তো ধাক্কা লাগলো। তাছাড়া রাস্তায় চলতে গেলে এরকম কিছুতো হতেই পারে। রাজুর সহযোগিরা সাংবাদিকের মোটরসাইকেলের চাবি নিয়ে নেয়। শুরু হয় বাগবিত-া। এক পর্যায়ে সাংবাদিকের পেছন থেকে পিঠে চাকু মারা যায়। হাতে হাতে থাকা হেলমেটি দিয়ে সাংবাদিকও আঘাত করে। পরিস্থিতি বেশামাল হয়ে ওঠে। সাংবাদিককে দ্রুত সরিয়ে দেয়ার জন্য তুলে দেয়া হয় অটোতে। তিনি হাসপাতালে যান। হাসপাতালেও নৃশংসভাবে হামলা চালানো হয়েছে। এ হামলার বর্ণনা দিতে গিয়ে প্রত্যক্ষদর্শিরা বলেছেন, হাসপাতালে চিকিৎাধীন ব্যক্তির ওপর হামলা চালিয়ে মধ্যযুগীয় বর্বরাতেও যেনো হার মানিয়েছে।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আশঙ্কাজনক অবস্থায় সাংবাদিক ডালিম হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছিলেন।
অপরদিকে, সাংবাদিক সোহেল রানা ডালিমের ওপর হামলার খবর শুনে সেলফানে নিয়মিত খোঁজ খবর নিয়েছেন চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম,
চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন, চুয়াডাঙ্গা আওয়ামী যুবলীগের আহ্বায়ক নঈম হাসান জোয়ার্দ্দারসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও সাংবাদিক নেতারা। সাংবাদিক সোহেল রানা ডালিমের ওপর হামলার খবর পেয়ে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এফবিসিসিআই এর পরিচালক, বাংলাদেশ জুয়েলারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও তারা দেবি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান দিলিপ কুমার আগরওয়ালা। তিনি প্রতিবাদ বিবৃতিতে জানিয়েছেন, সাংবাদিকরা সমাজের দর্পণ। সেই সাংবাদিকের ওপর হামলা সত্যিই ন্যাক্কারজনক। তিনি অতিদ্রুত হামলাকারীদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More