চুয়াডাঙ্গায় সাপের কামড়ে তিনজন হাসপাতালে ভর্তি : এন্টিস্নেক ভেনম সঙ্কট

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা শহর ও গ্রাম-গঞ্জে বৃষ্টিতে খেলার মাঠ, বসতবাড়ি কিংবা বাড়ির উঠোনে পানি জমা হচ্ছে। ফলে নানা রকম বিষধর সাপের প্রাদুর্ভাব বেড়ে গেছে। এতে সাপের কামড়ানো রোগীর সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। গতকাল শুক্রবার চুয়াডাঙ্গায় একদিনেই তিনজন সাপের কামড়ে আহত হয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি আছে। এতে গ্রাম-গঞ্জে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সেই সাথে সদর হাসপাতালে এন্টিস্নেক ভেনম ইনজেকশনের মজুদ ফুরিয়ে এসেছে। বর্তমানে মাত্র দুই থেকে তিনজনের দেয়ার মতো এন্টিভেনম ইনজেকশন (সাপে কাটা রোগীর বিশেষ ভ্যাকসিন) মজুদ আছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। পাশাপাশি দ্রুত অ্যান্টিভেনম মজুদের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছে সিভিল সার্জন।
গতকাল শুক্রবার সাপের কামড়ে যে তিনজন আহত হয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তারা হলেন, মেহেরপুর জেলার বাড়াদী ইউনিয়নের মোমিনপুর গ্রামের শাহাবুদ্দিনের ছেলে শাহপরান (১৪), চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার মাধবপুর গ্রামের রাকিবের ছেলে আব্দুল্লাহ (১৫) এবং চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার সুমুরদিয়া গ্রামের রেলপাড়ার সাজ্জাদ হোসেনের ছেলে আরিফুল রহমান (৩৫)। আহতরা সদর হাসপাতালের, পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর মধ্যে সবার শারীরিক অবস্থা শঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
চুয়াডাঙ্গায় বৃষ্টির কারণে সাপের উপদ্রপ বেড়ে যাওয়া আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। বিশেষ করে যারা গ্রামাঞ্জলে বসবাস করেন তাদের সাপ ভীতি প্রকট হয়েছে। রাতে চলাফেরা করতে হচ্ছে মেপে মেপে। অপরদিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে এন্টিভেনম সংকট হওয়ায় উদ্যোগ প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য সচেতন মহল। সরকারিভাবে সাপ্লাই না থাকলে বাইরে থেকে কিনতে হলে এন্টিস্নেক ভেনমের একটি ইনজেকশনের মূল্য ১ হাজার টাকা করে। চিকিৎসকদের মতে সাপে কামড়ানো রোগীর শারীরিক পরিস্থিতি অনুযায়ী ৪০টি ইনজেকশনও দিতে হয়। যা ইতঃপূর্বে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে এক রোগীকে ৪০টি ইনজেকশন পুশ করা হয়েছিল। এরপর তিনি সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফেরেন। এ সময় গরিব অসহায় ব্যক্তিরা সরকারিভাবে সাপ্লাই না পেলে সামর্থ অনুযায়ী বাইরে থেকে কিনতে না পেরে দুর্ঘটনার শিকার হতে পারেন বলে মন্তব্য করে স্বাস্থ্য সচেতনমহল। বিষয়টি স্বাস্থ্য বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারা।
সে বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা.এএসএম ফাতেহ আকরাম প্রাথমিক পরামর্শ দিয়ে বলেন, (১). সাপে কামড়ালে দ্রুত রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। (২). সাপ যদি হাতে বা পায়ে কামড় দেয় তাহলে বাঁধন দিতে হবে। রোগীকে ওই স্থানেই শুইয়ে দিন। রোগীর নড়াচড়া সম্পূর্ণ বন্ধ রাখতে হবে, যাতে বিষ তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে না পড়ে। কামড়ের স্থানের কিছুটা ওপরে দড়ি বা হাতের কাছে যা পান, তা দিয়েই বেঁধে ফেলুন। মনে রাখবেন বাঁধনটা যেন অস্থিসন্ধিতে যেমন কনুই, কব্জি বা গোড়ালি এবং গলা বা মাথায় না হয়। যে দড়ি বা কাপড় দিয়ে বাঁধবেন তা যেন চওড়ায় দেড় ইঞ্চি হয়, কখনো তা যেন সরু সুতোর মতো বা রাবার ব্যান্ডের মতো না হয়। বাঁধনটি যেন খুব বেশি শক্ত না হয়। বাঁধনটি এমনভাবে দিতে হবে যেন একটা আঙুল ওই বাঁধনের মধ্যদিয়ে যেতে পারে। যদি বাঁধনটি শক্ত হয়, তাহলে ঢিলা করে দেবেন, তবে কখনোই তা খুলে ফেলবেন না। বাঁধনটি দেয়ার উদ্দেশ্য হলো রক্ত চলাচল বন্ধ রাখা। তবে বাঁধনটি একটানা ২০ মিনিটের বেশি একভাবে রাখবেন না। প্রতি ১০ মিনিট অন্তর তা আলগা করে দিতে হবে। (৩). দংশিত স্থানটি পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। (৪). প্রাথমিক চিকিৎসার পর রোগীকে দ্রুত নিকটতম হাসপাতালে কিংবা স্বাস্থকেন্দ্রে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে, যেখানে অ্যান্টিভেনম সিরাম বা সর্পবিষনাশী সিরাম মজুদ রয়েছে। প্রয়োজনে রোগীকে টিটেনাস বা ধনুষ্টঙ্কারের প্রতিষেধক দিতে হবে। (৫). রোগী যেন কোনোভাবেই ভয় না পাই; সেদিকে খেয়াল রেখে তাকে সাহস দিতে হবে। (৬). বিষধর সাপের কামড়ের আধুনিক চিকিৎসা আছে। তাই ঝাড়ফুঁক, তাবিজকবজ আর কবিরাজি চিকিৎসার ওপর নির্ভর না করে নিকটস্থ হাসপাতালে যেতে হবে। (৭). সাপের কামড়ের পর রোগীর কথা বলতে অসুবিধা হলে, চোখের পাতা ভারী হলে, মুখ থেকে লালা ঝরলে বা রোগীর বমি হতে থাকলে বুঝতে হবে তাকে বিষধর সাপ কামড় দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব রোগীকে ডাক্তারের কাছে নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, এখন বৃষ্টির কারণে মাঠে, ঘাটে, বসতবাড়িতে পানি জমছে। এ সময় গর্ত থেকে সাপ বেরিয়ে আসছে। যে কারণে এ সময় মানুষ অনেক বেশি সাপের কামড়ে হয়ে আক্রান্ত থাকে। সাপে কামড়ে দেয়া রোগীকে ওঝা বা কবিরাজের নিকট না নিয়ে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি হয়ে এন্টিস্নেক ভেনম নিতে হবে। এ সময় তিনি মানুষের বাড়ির আশপাশে কার্বলিক অ্যাসিড ছিটিয়ে রাখাসহ সতর্ক হয়ে রাতে চলাফেরার পরামর্শ দিয়েছেন।
চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. এএসএম মারুফ হাসান বলেন, হাসপাতালে এন্টিস্নেক ভেনম প্রায় শেষের দিকে। ইতিমধ্যে চাহিদা চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। আশা করি খুব দ্রুত এন্টিস্নেক ভেমন পেয়ে যাবো।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More