চুয়াডাঙ্গায় ৪৩ জন ক্রেতা-বিক্রেতাকে ৭২ হাজার ৬৫০ টাকা জরিমানা

ঝুঁকিপূর্ণভাবে দোকান খুলে পণ্য বেচাবিক্রি : মার্কেটের তালা ভেঙে নামানো হলো নির্দেশ অমান্যকারীদের
ভ্রাম্যমাণ আদালত :

স্টাফ রিপোর্টার: করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারি নির্দেশ না মেনে চুয়াডাঙ্গায় ঝুঁকিপূর্ণভাবে দোকান খুলে পণ্য কেনাবেচার অভিযোগে ৪৩ জন ক্রেতা-বিক্রেতাকে জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল শনিবার পরিচালিত পৃথক পাঁচটি ভ্রাম্যমাণ আদালতে দ-িত ৪৩ জনের কাছ থেকে ৭২ হাজার ৬৫০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৩১ জনকে ৬২ হাজার ৪৫০ টাকা, দামুড়হুদা উপজেলায় ৪ জনকে ১ হাজার টাকা এবং জীবননগর উপজেলায় ৮ জনকে ৯ হাজার ২০০ টাকা জরিমানা করা হয়।
চুয়াডাঙ্গা শহরে ঝুঁকিপূর্ণভাবে দোকান খুলে পণ্য কেনাবেচার অভিযোগে ৩১ জন ক্রেতা-বিক্রেতাকে জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। তাদের কাছ থেকে ৬২ হাজার ৪৫০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল থেকে শহরের পুরাতন গলির মার্কেটে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. হাবিবুর রহমান ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জান্নাতুল ফেরদৌস পুলিশের সহায়তায় এ অভিযান পরিচালনা করেন।
গত শুক্রবার থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত জেলার সব ধরনের শপিংমল, বিপণী বিতান ও দোকান পাট বন্ধ রাখার জন্য চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেন। কিন্তু গতকাল শনিবার সকাল থেকে জেলা প্রশাসকের সেই নির্দেশনা অমান্য করে গোপনে বিভিন্ন বিপণী বিতান ও অন্যান্য দোকান পাট খোলা রাখায় দোকানগুলোতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়। তাদের মুখে মাস্ক থাকলেও দোকানগুলোতে গায়ে গা লাগিয়ে গাদাগাদি করে নিজের প্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয় করছেন তারা। এ অবস্থায় বেলা বাড়ার সাথে সাথে ক্রেতাদের ভিড় বাড়তে থাকে।
দোকান ও মার্কেট খোলার সংবাদ পেয়ে জেলা প্রশাসনের তিনটি দল ও পুলিশের একটি দল শহরের গলির মার্কেটে অভিযান চালায়। এসময় বাইরে থেকে দোকান তালাবন্ধ থাকলেও ভেতরে পণ্য ক্রয় বিক্রয় চলছিলো। দোকানের ছাদেও চলছিলো ক্রেতা-বিক্রেতাদের কেনাবেচা। পুলিশ তালা ভেঙে ও ছাদ থেকে এসব বিক্রেতা ও ক্রেতাদের বাইরে বের করে আনে। সকাল থেকে শহরের সুগন্ধা প্লাজায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত হন। তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে মেইন গেটে তালা ঝুলিয়ে দেয় দোকান মালিকেরা। পরে পুলিশ সদস্যরা ভেতরে থাকা সকলকে বাইরে আসার জন্য অনুরোধ করে মাইকিং করেন। কেউ না আসার পরে মার্কেটের গেটের তালা ভেঙে সকলকে বের করা হয়। এসময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইনে ৩১ জনকে ৬২ হাজার ৪৫০ টাকা জরিমানা করেন। ভ্রাম্যমাণ আদারতে সহযোগিতা করেন চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. কলিমুল্লাহ ও সদর থানার অফিসার ইনচার্জ আবু জিহাদসহ পুলিশ সদস্যরা।
এসময় হাজী গার্মেন্টেসের আমজাদ হাজীকে ২০ হাজার, তারিক গার্মেন্টেসের রুবেল আলীকে ১০ হাজার, আল মদিনা গার্মেন্টেসের সালামকে ১০ হাজার, নিউ নন্দলালের দিনবন্ধু সরকারের ৪ হাজার, নাজমুল টুপি হাউজের ওবায়দুর রহমানকে ২ হাজার, ওরনা হাউজের তুষার আহমেদকে ২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া হেলমেট না থাকায় হাফিজুর রহমানকে ১ হাজার, আব্দুল আজিজকে ৫শ’ টাকা জরিমানা করা হয়।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. হাবিবুর রহমান ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে নিত্যপ্রয়োজনী দোকান (ফার্মেসি, কাঁচামাল ও মুদি) ব্যতীত অন্যান্য সকল প্রকার দোকান বন্ধের জন্য জেলা প্রশাসক একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেন। কিন্তু, সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখায় এ আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়। এ ধরনের অপরাধ কাউকে করতে দেয়া হবে না।
অপরদিকে, গতকাল শনিবার চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ডিঙ্গেদহ ও চারমাইল বাজার এলাকায় দুই প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালনা করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। সেখান থেকে ৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এসময় মূল্যতালিকা যথাযথভাবে প্রদর্শন না করা, পণ্যের মোড়কীকরণ বিধি বহির্ভূত পণ্য বিক্রয় ও মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রয়ের অপরাধে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ অনুযায়ী দুটি প্রতিষ্ঠানকে ৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। একইসাথে বেশ কিছু মেয়াদোত্তীর্ণ কোমল পানীয় ও পণ্য জব্দ করে নষ্ট করা হয়। এসময় ক্রয় রশিদ যাচাই করা হয় ও মূল্য তালিকা সর্বদা দৃশ্যমান স্থানে প্রদর্শন ও প্রতিদিন হালনাগাদ করার নির্দেশনা দেয়া হয়। পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের ন্যায্য মূল্যে পণ্যসামগ্রী বিক্রয় করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
সরোজগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন: সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে দোকান খোলা রাখার অপরাধে জিহাদ বস্ত্রালয় অ্যান্ড শাড়ি হাউজের মালিক নাসির উদ্দীনকে ১ হাজার টাকা জনিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল শনিবার দুপুর ১২টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইসরাত জাহান এ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। এসময় আদালতকে সহয়োগিতা করেন কুতুবপুর ইউপি চেয়ারম্যান আলি আহম্মদ হাসানুজ্জামান মানিক, সরোজগঞ্জ ক্যাম্পের টুআইসি এসআই শহিদুল ইসলাম, বদরগঞ্জ বাজার কমিটির সভাপতি এএনএম আশিব।
দর্শনা অফিস জানিয়েছে, পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে চুয়াডাঙ্গায় লডকাউন শিথিল করা হয়েছিলো শর্তসাপেক্ষে। স্বাস্থ্য বিধি মেনে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা বাজার ও শপিংমলগুলো খোলার অনুমতি দেয়া হলেও তা অমান্য করেছে ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা। সরকারের স্বাস্থ্য বিধি নিষেধ অমান্য করায় শিথিল করা লকডাউন প্রত্যাহার করে পূর্ণ লকডাউন বলবৎ করার ঘোষণা দেয়া হয়। প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। বর্তমান প্রেক্ষাপটে চরম ঝুকিতে চুয়াডাঙ্গা। করোনা প্রতিরোধে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ইউএনও, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, সেনাবাহিনী ও পুলিশসহ আইনশৃংখলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে মাঠে নেমেছেন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শুরাইয়া মমতাজের নেতৃত্বে গতকাল শনিবার দর্শনা রেলবাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়েছে। এসময় সরকারের বিধি-নিষেধ অমান্য করার অপরাধে দোকানি ৫ ক্রেতাকে জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক শুরাইয়া মমতাজ।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More