চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহে জাতীয় নাগরিক পার্টির জুলাই পদযাত্রা : পথসভায় নাহিদ ইসলাম শেখ হাসিনা সরকার ১৬ বছরে খুন-গুম করেছে ভারতের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থনে
স্টাফ রিপোর্টার: একটি রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতন হয়েছিলো। আপনারা দেখেছেন গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা নিজেই মারণাস্ত্র দিয়ে গুলি চালানোর অর্ডার দিয়েছিলেন। এ সকল হত্যাকা-ের জন্য ওই খুনি হাসিনা ও তার দল দায়ী। গতকাল বুধবার দুপুর আড়াইটার দিকে চুয়াডাঙ্গা শহরের শহীদ হাসান চত্বরে আয়োজিত পথসভায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি বলেন, এই খুনি হাসিনা এখন ভারতে অবস্থানরত আছে। ভারত সরকার গণহত্যাকারী, সন্ত্রাস, ফ্যাসিস্ট সংগঠনের নেতা-কর্মীদের নিজ দেশে আশ্রয় দিয়েছেন। মুষলধারে বৃষ্টির মধ্যে পথসভায় উপস্থিত হাজারো মানুষের প্রতি এনসিপির কেন্দ্রীয় এই নেতা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। চুয়াডাঙ্গা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি কৃষকের নিহত হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘সীমান্তে গত ৫৪ বছরে হাজারো মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গাতেই হত্যা করা হয়েছে দুই শতাধিক। এখন থেকে বাংলাদেশের জনগণ বাংলাদেশের সীমান্ত, মানচিত্র ও মানুষকে রক্ষা করার দায়িত্ব পালন করবে। সীমান্ত হত্যা কোনোভাবেই মেনে নেবে না।’ গত ৭ দিন আগেও চুয়াডাঙ্গায় সীমান্তে একজনকে হত্যা করা হয়। ৭দিন পর তার লাশ ফেরত দেয়া হয়েছে। বিএসএফ শুধু সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনী নয়, খুনি বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষকে খুন করায় যেন তাদের একমাত্র দায়িত্ব। গত ৫৪ বছর ধরে বাংলাদেশের মানুষদের গোলামির জীবনযাপন করতে হয়েছিল। তাদের মানবিক মর্যাদা, সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা বারবার ক্ষুণœ হয়েছে। পানির ন্যায্য হিস্যা দেয়া হয়নি। আমাদেরকে রাজনৈতিকভাবে, অর্থনৈতিকভাবে বারবার অবদমন করা হয়েছে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা সরকার ১৬ বছরে গুম, খুন মানুষকে হত্যা করেছে এই ভারত সরকারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থনে। দেশের সীমান্ত, মাটি ও মানচিত্রকে রক্ষা করার দায়িত্ব বাংলাদেশের ছাত্র তরুণ যুবদের। সেই দায়িত্ব আমরা নিয়েছি এবং সেই দায়িত্বের ভিত্তিতেই জাতীয় নাগরিক পার্টি কাজ করবে। ভারত যদি বাংলাদেশের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক চাই তাহলে সমতা, ন্যায্যতা ও মর্যাদার ভিত্তিতেই সেই সম্পর্ক করতে হবে। বাংলাদেশ ভারতের ওপর নির্ভরশীল নই, ভারতই বাংলাদেশের ওপর সম্পূর্ণরুপে নির্ভরশীল। ভারতের অখন্ডতা, সার্বভৌমত্য বাংলাদেশের ওপর নির্ভরশীল। এটা যেন ভারত কোনভাবেই ভুলে না যায়। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, গণ-অভ্যুত্থানের পরে আমরা বৈষম্যহীন একটা সম্প্রীতির বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। কিন্তু আমরা দেখছি দেশে নানারকম রাজনৈতিক কোন্দলে অনেকে প্রাণ হারাচ্ছে। চাঁদাবাজ, দুর্নীতি দখলদারিত্বে পুরো বাংলাদেশ ছেয়ে গেছে। আপনাদের এলাকার দুর্নীতি, চাঁদাবাজ ও দখলদারিত্ব নিয়ে কথা বলুন। যেই প্রতিবাদের জোয়ার বাংলাদেশে উঠেছে, সেই জোয়ার বন্ধ করবেন না। ছাত্র-জনতা এই দেশের মানুষের পক্ষে আছে, রাজপথে আছে। যারা দুর্নীতি, চাঁদাবাজ ও দখলদারিত্বের পক্ষে তাদের বয়কট করেন। জাতীয় নাগরিক পার্টি আপনাদের পাশে আছে। তিনি আরও বলেন, আমার ভাইয়েরা চোখ হারিয়েছে, পা হারিয়েছে, শহীদ হয়েছে এই খুনি হাসিনা ও তার দলের কারণে। এই মুজিববাদী ফ্যাসিস্ট দল এ দেশে থাকতে পারে না। বাংলাদেশে এরা কোনভাবেই আসতে পারবে না। আসতে হলে আমাদের বুকের ওপর দিয়ে আসতে হবে। এই ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিচার ও দেশ সংস্কারের পক্ষে আপনাদের দাঁড়াতে হবে। বিচার, সংস্কার, একটি নতুন সংবিধান এবং জুলাই ঘোষণাপত্রের দাবিতে আমরা রাজপথে নেমেছি।
এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা আলমডাঙ্গা উপজেলার হাটবোয়ালিয়া বাজার থেকে চুয়াডাঙ্গা জেলায় আনুষ্ঠানিকভাবে পদযাত্রা শুরু করেন। মেহেরপুরের গাংনী থেকে দুপুর ১টায় হাটবোয়ালিয়া বাজারে পৌঁছালে স্থানীয় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টিতে ভিজেই এনসিপির নেতাদের স্বাগত জানান। নেতারা হাত নেড়ে শুভেচ্ছার জবাব দেন। এরপর দুপুর দেড়টায় আলমডাঙ্গা উপজেলা শহরের আল তায়েবা মোড়ে পৌঁছালে এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে তাদের বরণ করে নেয়া হয়। আলমডাঙ্গায় পদযাত্রা শেষে এসসিপির নেতারা চুয়াডাঙ্গা শহরের পথে রওনা দেন।
চুয়াডাঙ্গা শহীদ হাসান চত্বরের এই পথসভায় দলের মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম বলেন, ‘আমাদের শহীদ ভাইয়েরা যে আকাক্সক্ষা নিয়ে আত্মত্যাগ করেছেন, তা পূরণ হয়নি। সেই আকাক্সক্ষা পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আপনাদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।’
জাতীয় নাগরিক পার্টির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের সঞ্চালনায় পথসভায় আরও বক্তব্য রাখেন দলের মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা, যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ আল আমিন, সদস্য সোহেল রানা, চুয়াডাঙ্গার প্রবীণ নেতা মোল্লা ফারুক, যুবশক্তির কেন্দ্রীয় সংগঠক মুজাহিদুল ইসলাম, এনসিপির চুয়াডাঙ্গা জেলা সমন্বয়কারী খাজা আমিরুল বাশার বিপ্লব, চুয়াডাঙ্গা জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব সাফফাতুল ইসলাম প্রমুখ। এর আগে আলমডাঙ্গার পথসভায় বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সদস্য সচিব আক্তার হোসেন।
এদিকে, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার ঝাঁজাডাঙ্গা সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)-এর গুলিতে নিহত ইব্রাহিম বাবুর পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। গতকাল বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে এনসিপির কেন্দ্রীয়, উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলীয় নেতৃবৃন্দ নিহতের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। এনসিপির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম, উত্তরাঞ্চলীয় আহ্বায়ক সারজিস আলম, দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রতিনিধি হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেনের নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক সদস্যের প্রতিনিধি দল নিহত ইব্রাহিমের বাড়িতে পৌঁছে তার পিতা নুর ইসলাম, মাতা হাজেরা বেগম, স্ত্রী সাহিনা বেগম এবং তিন বছরের কন্যা আয়েশা খাতুনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং ঘটনার বিস্তারিত শোনেন। শোকাবহ পরিবেশে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার আমরা চাই। এই পরিবারটি একা নয়-আমরা আছি, এনসিপি আছে। ইব্রাহিম বাবুর রক্ত বৃথা যেতে দেবো না।’ তিনি সকলকে নিহত পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। পরে এনসিপি নেতারা নিহত ইব্রাহিম বাবুর কবর জিয়ারত করেন এবং কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা জানান। এরপর সীমান্তের দিকে গিয়ে তারা সেøাগান দেন-‘ইব্রাহিমের রক্ত বৃথা যেতে দেবো না!’ এদিন বিকেল ৫টার দিকে দলটি দর্শনা বাসস্ট্যান্ড মোড়ে স্থানীয় জনতার সঙ্গে মতবিনিময় শেষে ঝিনাইদহের উদ্দেশ্যে চুয়াডাঙ্গা ত্যাগ করেন।
আলমডাঙ্গা ব্যুরো জানিয়েছে, ‘বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের মানবিক মর্যাদা ও নাগরিক অধিকার রক্ষায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নতুন রাজনীতির সূচনা করতে চায়’-এমন প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন। গতকাল বুধবার বিকেলে আলমডাঙ্গা শহরের হাইরোডে আব্দুল মজিদ টাওয়ারের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে শহরের হাজী মোড় থেকে শুরু হয়ে আলতায়েবা মোড়ে এসে শেষ হয় ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’। এই কর্মসূচিতে অংশ নেয়া দলটির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাকর্মীরা দীর্ঘ পদযাত্রা শেষে সমবেত হন হাইরোড মোড়ে। সমাবেশে আখতার হোসেন বলেন, ‘আমরা এমন বাংলাদেশ গড়তে চাই, যেখানে ধর্ম, পেশা বা বয়সভিত্তিক কোনো বৈষম্য থাকবে না। নাগরিক সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে থাকবে সমতা। ধর্মীয় অধিকার হরণ করা যাবে না। রাষ্ট্রীয় কাঠামো সংস্কার করে এমন একটি নতুন সংবিধান চাই, যা জনগণের ভাত ও কাপড় নিশ্চিত করবে।’ তিনি বলেন, ‘এই আলমডাঙ্গার একজন ভাইও গণআন্দোলনে জীবন দিয়েছেন। শহীদদের রক্ত বৃথা যাবে না। যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, তাদের বিচারের আওতায় আনতেই হবে।’ এ সময় তিনি বিদেশে আশ্রিত রাজনৈতিক নেতাদের প্রত্যর্পণের দাবি জানান। সমাবেশে দলের যুগ্ম সদস্য সচিব মোল্লা মো. ফারুক এহসান বলেন, ‘আলমডাঙ্গায় এসে শুনি চাঁদাবাজির দৌরাত্ম্য চলছে। মাদক ব্যবসা আর দখলদারিত্বে জড়িয়ে পড়েছে অনেকে। আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলছি-এই মাটিতে এনসিপি এসব বরদাশত করবে না। এখানে নতুন বাংলাদেশ গড়ার লড়াই হবে।’ উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, ‘লুটপাটকারী আর মাদকের কালো হাতগুলো সিস্টেম দখল করে নিয়েছে। আমরা শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করবো না।’ সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. তাসনিম জারা, স্থানীয় নেতা রাজিব হুদা, মোল্লা ফারুক এলাহী ইসলাম, কামরুল হাসান কাজল, পারভেজ প্রমুখ। এর আগে এনসিপি নেতৃবৃন্দ মুক্তিযোদ্ধা মেজর বজলুল হুদার গ্রামের বাড়ি হাটবোয়ালিয়ায় যান। যদিও পূর্বঘোষণা থাকলেও সেখানকার পথসভাটি সময়াভাবে হয়নি। এ বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করে আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘পরবর্তীতে হাটবোয়ালিয়া গ্রামে সময় নিয়ে আসা হবে ইনশাআল্লাহ।’
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্রের কথা বলছি। যেই জুলাই এর প্রেক্ষাপট, শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের অধিকার নিরাপত্তার কথা বলবে। জুলাই সনদ আমরা ঐক্যমতের ভিত্তিতে আদায় করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ। আজ জুলাই অভূত্থানকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে প্রপাগান্ডা চালানো হচ্ছে। আজ ঝিনাইদবাসীর কাছ থেকে অভুতপূর্ভ ভালোবাসা পেয়েছি। এসময় তিনি জুলাই আন্দোলনে নিহতদের পরিবারের প্রতি সম্মান ও সমবেদনা জানান। দ্রুত জুলাই সনদ তৈরির দাবি জানান। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় ঝিনাইদহ শহরের পায়রা চত্তরে আয়োজিত জাতীয় নাগরিক কমিটির জুলাই পদযাত্রা ও পথসভায় দেয়া বক্তব্যে নাহিদ ইসলাম এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, এক সপ্তাহ আগে বিএসএফ একজনকে ধরে নিয়ে গিয়ে চোখ তুলে হত্যা করে লাশ ফেরত দিয়েছে। ২০০০ সাল থেকে ২৫ বছরে সীমান্তে বিএসএফ ১২০০ মানুষকে হত্যা করেছে। বিএসএফ সীমান্তরক্ষী নয়, একটি খুনি বাহিনীতে পরিনত হয়েছে। তারা শুধু খুন করতে চাই। খুন করা তাদের নেশা। বিএসএফ মানবতা বিরোধী বাহিনী। আমরা সীমান্ত হত্যা মেনে নেব না। আমরা ভারত সরকারকে বলতে চায় বাংলাদেশের মানুষের সাথে মর্যাদাশীল আচরণ করুন। তিনি আরো বলেন, ঝিনাইদহের সন্তান তারেক রেজা ঢাকায় প্রথম ছয় শহীদের জানাযা পড়িয়েছিলেন। আমরা তাকে আপনাদের হাতে তুলে দিয়ে গেলাম। তিনি ঝিনাইদহবাসীর জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ উন্নয়নে কাজ করতে চাই। আপনারা এনসিপির সাথে থাকেন। এনসিপি আপনাদের অধিকার আদায়ে কাজ করবে। এনসিপি জনগণের রাজনীতি করবে এবং সব সময় জনগণের পাশে থাকবে বলে উল্লেখ করে মাত্র তিন মিনিটে বক্তব্য শেষ করেন। এর আগে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, ২৪ এ আমরা একটি খুনি শাসকের হাত থেকে মুক্ত হয়েছি কিন্তু শাসন ব্যবস্থা থেকে মুক্ত হতে পারিনি। দেশের সব প্রতিষ্ঠানকে নতুন করে গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছে। পুলিশ ও নির্বাচন কমিশনসহ সকল গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। দেশের সকল প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ করার জন্য সকল ব্যবস্থা করতে হবে। বাংলাদেশের এমন রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে চাই যেখানে ধর্মের নামে কোন হানাহানি বা শত্রুতা থাকবে না।
এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব তারেক রেজা বলেন, স্বৈরচারী, পাগল, খুনি জুলাই হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন। যার প্রমাণ ইতিমেধ্যে বিবিসি পেয়েছে। ফলে খুনি শেখ হাসিনার বিচার না হওয়া পর্যন্ত কোন নির্বাচন হবে না। আমরা কোটা সংস্কারের জন্য মাঠে নেমেছিলাম। যার পথ ধরে আজ স্বৈর সরকারের পথন হয়েছে। সেই সংস্কারের কথা বললে একটি দল এমন ভাব করে মনে হয় তারা কিছুই বোঝে না। সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের লড়াই চলবে। এসময় তিনি ঝিনাইদহবাসী দোয়া ও পরামর্শ চান।
দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আমরা বাংলাদেশের জনগণ। ৫ আগষ্টের পর থেকে দেখছি একটি দল আমাদের প্রশ্ন বিদ্ধ করছে। তারা সংস্কার চায় না। তারা নির্বাচন চায়। আমরা বিচার এবং সংস্কার করেই নির্বাচন চায়। আমরা খুনি হাসিনার বিচার চাই। একটি দল বলছে সংস্কার ও বিচার নির্বাচিত হয়ে এসে করবো, এমন ধোকাবাজি অনেক হয়েছে। আপনারা নির্বাচিত হয়ে সংস্কার ও বিচার করবেন এর নিশ্চয়তা কিভাবে পাবো। সংস্কার দ্রুত করুন না হলে ছাত্ররা আবার রাস্তায় নেমে আসবে। পুলিশ ভায়েরা জুলাই আন্দোলনে দ্বায় আপনাদেরও নিতে হবে। মনে রাখতে হবে সব পুলিশ কিন্তু খারাপ না। আপনার ভাই আমার ভাই পুলিশে চাকরি করেন। যারা আওয়ামী লীগের পুলিশ ছিলেন। যারা ছাত্র জনতার বিপক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন, তাদেরও জুলাই হত্যার দ্বায় নিতে হবে। এখানে যে সাংবাদিকরা উপস্থিত আছেন তাদের অনেকে বেতন পান না। অনেকে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা বেতন পান। অনেকের হাতে আবার বুম ধরিয়ে মাঠে নামিয়ে দেন। আমরা আপনাদের মুক্তির কথা বলছি। আপনারা আর কারো কাছে বিক্রি হবেন না। আপনাদের কথা বলতে হবে, যেভাবে জুলাই আন্দোলনে বলেছিলেন। আমরা আপনাদের ন্যয্য অধিকার আদায় করতে চাই। প্রিয় ঝিনাইদহবাসী আপনাদের সন্তান তারেক রেজাকে আপনাদের কাছে দিয়ে যাচ্ছি। আপনারা তার হাতকে শক্তিশালী করবেন। প্রিয় তরুণ সমাজ আমরা দুর্নীতি চাই না। আমরা চাই একটি সুখি সমৃদ্ধি দেশ।
অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন পার্টির উত্তরাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক সারজিস। এ সময় সারজিস বলেন, আমরা যখন শহীদ পরিবারের পাশে দাঁড়ায়, শহীদের বাবা মা’র পাশে দাঁড়ায় তখন আমরা জুলাই আন্দোলনে ফিরে যায়। এসময় সরজিসের সেøাগানে সেøাগানে সভাস্থল ও তার আশপাশ প্রকম্পিত হয়ে উঠে। তিনি বলেন, ছাত্রজনতার আন্দোলনে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার নির্দেশে ছাত্রজনতাকে হত্যা করা হয়েছিল তার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। সভায় জুলাই আন্দোলনে শহীদ রাকিব হোসেনের মা ও বাবা বক্তব্য রাখেন।
এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসির উদ্দীন পাটুয়ারি বলেন, আমরা রক্তের বিনিময়ে দেশ স্বৈরাচারমুক্ত করেছি। তবে দীর্ঘ সময় পার হলেও হত্যার বিচার ও কাংখিত সংস্কার হয়নি। জুলাই সনদ তৈরি হয়নি। আমরা সংস্কার চায়, হত্যাকারীদের বিচার চাই, জুলাই সনদ চাই। আমরা পুলিশকে ভয় পায়না। আমরা সেনাবাহিনীকে ভয় পায় না। আমরা জনতার ভালোবাসা নিয়ে এগিয়ে যেতে চায়। জনতা আমাদের সাহস, তা প্রমাণ করেছে আজ ঝিনাইদহের মানুষ। আমরা সন্ত্রাস দূর্নীতির কাছে মাথা নত করতে চায় না। আমাদের শক্তি সততা।
পদযাত্রা ও পথসভায় আরো অংশ নেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা ও যুগ্ম সদস্যসচিব মাহিন সরকারসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় যুগ্ন মহাসচিব তারেক রেজা, ঝিনাইদহ জেলা আহবায়ক আবু হুরাইয়া, জেলা সদস্য সচিব সাইদুর রহমান, জেলা যুগ্ম সদস্য সচিব সাহারিয়ার অভিক, সদর উপজেলা আহ্বায়ক সৌরভ আহম্মেদ শুভ, মহেশপুর উপজেলা আহ্বায়ক হামিদুর রহমান রানা ও কোটচাদপুর উপজেলা আহ্বায়ক হৃদয় আহম্মেদসহ জেলা ও উপজেলা নেতৃবৃন্দ।
এর আগে বিকালে জাতীয় নাগরিক পার্টির প্রতিনিধি দলটি চুয়াডাঙ্গা থেকে ঝিনাইদহ জেলা শহরের জোহান পার্কে আসেন। সেখানে তারা শহীদ পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলেন। এরপর বিকাল ৬টার পর পানি উন্নয়ন বোর্ড চত্বর থেকে পদযাত্রা শুরু করেন। পদযাত্রার এসময় রাস্তার দুপাশে দাড়িয়ে হাজার হাজার মানুষ এনসিপি নেতাদের শুভেচ্ছা জানান। পদযাত্রা নিয়ে শহরের পায়রা চত্তরে সমাবেশস্থলে আসেন। মাগরিবের নামাজ পর পথসভার মঞ্চে আসেন নেতারা। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিক্ষার্থী তরুণসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষের উপস্থিতিতে লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠে সভাস্থল।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.