চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্সের সেই যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত চালক জামির হোসেনের ইন্তেকাল

ঢাকা থেকে মৃতদেহ চুয়াডাঙ্গায় নেয়ার চেষ্টা চলছে

শামসুজ্জোহা রানা: চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স পরিবহনের যাবজ্জীবন কারাদ-াদেশ প্রাপ্ত সেই বাস চালক জামির হোসেন মারা গেছেন। ঈদের দিন সকালে কাশিমপুর কারাগার খেকে তাকে ঢাকার শহীদ সোহওয়ার্দী হাসপাতালে নেয়া হয়। চিকিৎসক মৃতঘোষণা করেন। নিকটজনদের জানানো হয়, হাসপাতালে নেয়ার পর তিনি মারা গেছেন। তার একমাত্র জামাতা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মৃতদেহ তার নিজ গ্রাম চুয়াডাঙ্গার দৌলাতদিয়াড় নেয়ার প্রক্রিয়া করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ঠসূত্র।

চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের দৌলাতদিয়াড় স্কুলপাড়ার মৃত আব্দুর রহিম ও মরহুমা সফুরা বেগমের ছেলে জামির হোসেন ছোটবেলা থেকেই পরিবহনের সাথে যুক্ত। তিনি দক্ষ চালক হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। দীর্ঘদিন চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স পরিবহনের মেহেরপুর-ঢাকা কোচের চালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। ২০১১ সালের ১৩ আগষ্ট ঘটে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। গাবতলি-পাটুরিয়া সড়কের মানিকগঞ্জ ঘিওরে মাইক্রোবাসের সাথে লাগ ধাক্কা। ঘটনাস্থলে তারেক মাসুদ ও মিশুক মনিরসহ মোট ৫ জন মারা যান। এরাসহ ওই মাইক্রোবাসে মোট ১০ জন আরোহীর মধ্যে তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদসহ অন্য আরোহীরা বেঁচে যান। তারেক মাসুদ ছিলেন একজন স্বাধীন চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, চিত্র নাট্যকার, লেখক এবং গীতিকার। অন্যদিকে মিশুর মনির ছিলেন দেশের অন্যতম সাংবাদিক, সম্প্রচার কিংবদন্তী, টেলিভিশন সাংবাদিকতার পথিকৃত ও বিশিষ্ট চিত্র গ্রাহক। মিশুক মনির ছিলেন শহীদ বুদ্ধিজীবী ও নাট্যকার মুনির চৌধুরীর ছেলে এবং এ.টি.এন নিউজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। এ দুই গুণী সৃজনশীল মানুষের মৃত্যুতে মিডিয়া জগতে গভীর শোক নেমে আসে। এ দুইজন গুণী ব্যক্তি ছাড়াও আরো তিনজন ঘটনাস্থলেই মারা যান। মামলা হয়। ঘটনার কয়েকদিনের মাথায় মেহেরপুর গাংনীর চৌগাছা থেকে গ্রেফতার করা হয় ড্রাইভার জামির হোসেনকে। নেয়া হয় ঢাকায়। পরে তাকে মানিকগঞ্জে রুজুকৃত মামলায় সোপর্দ করা হয়। মামলার তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র পেশ করে পুলিশ। বিচারে চালক জামির হোসেনের যাবজ্জীবন কারাদ-সহ পরিবহন সংস্থার মোটা অংকের অর্থ জরিমনা হয়। জামির হোসেন কারাগারেই ছিলেন। ঈদের দিন মারা গেলেন তিনি।
চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স পরিবহনের অন্যতম স্বত্বাধিকারী মুজিবুল হক খোকন জানান, জামির হোসেন দীর্ঘদিন আমাদের সাথে ছিলেন। ঘটনার পর তার জামিনে মুক্ত করার জন্য হৃদরোগ বিষয়ক যাবতীয় কাগজপত্র নিয়ে আদালতে ছোটাছুটিও করেছি। চেষ্টায় কমতি ছিরো না। কিন্তু করোনার কারণে লকডাউনসহ নানা কারণেই সে চেষ্টা সফল করতে পারিনি। এরই মাঝে সকালে তার জামাতা জানালেন তার শ্বশুর জামির হোসেন ঢাকা শহীদ সোহওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। ঈদের দিন এই খবর আমাদের শুধু শোকার্তই করেনি, কিংকতর্ব্য বিমুঢ় করেছে। জামির হোসেনকে মুক্ত করতে না পারার কষ্ট আমাকে সারাজীবন কুরে কুরে খাবে। তার মৃত্যুর খবর ইতোমধ্যেই পরিবহন বিভাগের মালিক ও শ্রমিক নেতৃবৃন্দকে জানানো হয়েছে। মৃতদেহ চুয়াডাঙ্গায় নেয়ার চেষ্টা চলছে। তবে কখন তা সম্ভব হবে তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

দুর্ঘটনায় নিজত মিশু মনির
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More