জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়া চূড়ান্ত : প্রকাশ করা হবে আগামী ৫ আগস্ট

স্টাফ রিপোর্টার: জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের এক বছরের মাথায় জুলাই ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করেছে সরকার। আগামী ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেয়া সকল পক্ষের উপস্থিতিতে এই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। ২৬ দফার এই ঘোষণাপত্র নিয়ে সব রাজনৈতিক দলের মতামত নেয়া হয়নি বলে দাবি করা হচ্ছে। এই ঘোষণাপত্রের জন্য বিএনপি, জামায়াত এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি মতামত দিয়েছে বলে নেতারা জানিয়েছেন। অন্যান্য অনেক দলের নেতারা অভিযোগ করেছেন তাদের কাছে কোনো মতামত চাওয়া হয়নি। জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশের তারিখ ঘোষণা করা হলেও গণ-অভ্যুত্থানের শক্তিগুলোর অন্যতম দাবি জুলাই সনদ নিয়ে গতকাল পর্যন্ত স্পষ্ট কোনোকিছু বলা হয়নি। এই সনদ কবে কীভাবে প্রকাশ করা হবে তার কোনো ঘোষণা দেয়নি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। রাজনৈতিক দলগুলো ৫ই আগস্টের মধ্যেই এই সনদ ঘোষণার দাবি জানিয়ে আসছে। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগামী মঙ্গলবার বিকাল ৫টায় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ জাতির সামনে উপস্থাপন করা হবে। রাজনৈতিক দলের নেতারা বলছেন, কয়েকটি দলীয় প্রস্তাবনাকেই ‘জাতীয় ঘোষণাপত্র’ হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। ফ্যাসিবাদবিরোধী সবগুলো দলের পূর্ণ মতামত ছাড়া ঘোষণাপত্র প্রকাশের উদ্যোগ নিলে তা ‘জাতীয় দলিল’ না হয়ে কেবল সরকার পক্ষের অবস্থান হিসেবেই পরিগণিত হবে। যা ভবিষ্যতে রাজনীতির জন্য বিতর্ক তৈরি করবে। এই জুলাই ঘোষণাপত্রের কোনো তাৎপর্য ও গুরুত্ব থাকবে না। সরকারের উচিত সকল রাজনৈতিক দলের মতামত নেয়া। একইসঙ্গে জুলাই সনদে সবগুলো দল যেন স্বাক্ষর করতে পারেন এজন্য সকলের মতামতের ভিত্তিতে খসড়া চূড়ান্ত করা।
এ বিষয়ে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্রের বিষয়ে এ বছরের জানুয়ারির শেষদিকে একটি ড্রাফট দেয়া হয়েছিল সরকারের তরফে। সেখানে মতামতসহ আমরা ১২ ফেব্রুয়ারি জমা দিয়েছিলাম। ৫ মাসেরও বেশি সময় এটার ওপরে তারা (সরকার) কোনো ফিডব্যাক দেয় নাই। জুলাই মাসের ৭ তারিখে একটি ড্রাফট দেয়া হয়। মতামতসহ সেটা ৯ জুলাই জমা দিয়েছি। এরপর ২৭ জুলাই তারা আবার এটা দিয়েছে আমাদের কাছে। ২৯ জুলাই আমরা জমা দিয়ে বলেছি, এর বাইরে আর আমাদের কোনো বক্তব্য নাই। জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, বিষয়টা যেহেতু সরকারের ঘোষণার বিষয়। সেহেতু সরকার ঘোষণার আগে আমরা এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাই না। তিনি বলেন, সরকার আগে ঘোষণা করুক। তারপর আমরা দেখেশুনে এ বিষয়ে মতামত দেবো।এ বিষয়ে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক মানবজমিনকে বলেন, আমরা জুলাই ঘোষণাপত্রের বিষয়ে কিছু পাইনি। গণতন্ত্র মঞ্চের কারও মতামত নেয়া হয়নি এ বিষয়ে। সকল দলের মতামত ছাড়া এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সরকার ঘোষণা করলে, তা সরকারের ঘোষণাপত্র হিসেবেই বিবেচিত হবে। এর কোনো তাৎপর্য বা গুরুত্ব থাকবে না। গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ফেব্রুয়ারিতে আমাদের কাছ থেকে প্রাথমিকভাবে মতামত নেয়া হয়েছিল। চূড়ান্ত মতামত নেয়া হয়নি। তবে সরকারের উচিত সকল দলের মতামত নেয়া।গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. মিজানুর রহমান বলেন, ঘোষণাপত্রে আমাদের মতামত নেয়নি সরকার। ফ্যাসিবাদী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সকলের মতামত নেয়া দরকার জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করার আগে। সরকারের উচিত ছোট-বড় সব দলকেই গুরুত্ব সহকারে দেখা ও মতামতকে গুরুত্ব দেয়া। সকলের মতামতের ভিত্তিতে এই ঘোষণাপত্র দেয়া না হলে তা ভবিষ্যতে বিতর্কের জন্ম দেবে। গণ-অধিকার পরিষদের উচ্চ পরিষদ সদস্য শাকিল-উজ জামান বলেন, ঘোষণাপত্র নিয়ে আমাদের মতামত নেয়া হয়নি। এ বিষয়ে রোববার সংবাদ সম্মেলন করে দলীয় অবস্থান জানানো হবে। ওদিকে, জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, সরকারের পক্ষ থেকে আমরা জেনেছি, আগামী ৫ আগস্ট ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশ করা হবে। ওইদিনের মধ্যেই জুলাই সনদ প্রকাশের দাবি জানিয়ে আসছি আমরা। তবে ঐকমত্য কমিশন এখনো নোট অব ডিসেন্ট সম্পর্কিত বিষয়গুলোর সমাধান জানায়নি। তিনি বলেন, ৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদের সুরাহা করা আমাদের এবং দেশবাসীর দাবি।ওদিকে, শনিবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট দিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়া চূড়ান্ত করেছে। আগামী মঙ্গলবার, ৫ আগস্ট, ২০২৫ বিকাল ৫টায় গণ-অভ্যুত্থানের সকল পক্ষের উপস্থিতিতে জুলাই ঘোষণাপত্র জাতির সামনে উপস্থাপন করা হবে। এ বিষয়ে বিস্তারিত অবিলম্বে ঘোষণা করা হবে।’ এর আগে, জুলাই ঘোষণাপত্র ৫ই আগস্টের মধ্যে ঘোষণা করা হবে বলে জানান তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে মাহফুজ আলম লেখেন, ‘জুলাই ঘোষণাপত্র এখন বাস্তবতা। ৫ আগস্টের মধ্যেই ঘোষিত হবে ঘোষণাপত্র। ঘোষণাপত্র ইস্যুকে গণ-আকাঙ্ক্ষায় বাঁচিয়ে রেখে এটা বাস্তবায়নের পথ সুগম করার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।’ গত বছর জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে রাজনৈতিক অঙ্গনে অন্যতম আলোচিত বিষয় এই জুলাই ঘোষণাপত্র। অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি সামনে রেখে সম্প্রতি জুলাই ঘোষণাপত্রের চূড়ান্ত খসড়া কয়েকটি দলের কাছে পাঠায় অন্তর্বর্তী সরকার। এর আগে অবশ্য সব দলের কাছ থেকে প্রাথমিক মতামত নেয়া হয়েছিল। দলগুলোর কাছে পাঠানো ঘোষণাপত্রের খসড়ায় ২৬টি দফা রয়েছে। প্রথম ২১ দফায় মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বাংলাদেশের মানুষের অতীতের বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও গণতান্ত্রিক সংগ্রাম থেকে শুরু করে জুলাই অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করা হয়েছে। পরের পাঁচটি দফায় রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা, আওয়ামী লীগ শাসনামলে গুম-খুন, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও সবধরনের নির্যাতন-নিপীড়ন এবং রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি লুণ্ঠনের অপরাধের দ্রুত উপযুক্ত বিচার, আইনের শাসন ও মানবাধিকার, দুর্নীতি, শোষণমুক্ত বৈষম্যহীন সমাজ এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে একটি ঘোষণাপত্র প্রকাশের ঘোষণা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে সামনে আনেন তারা। বছরের শেষ দিন ৩১ ডিসেম্বর ওই ঘোষণাপত্র প্রকাশের কর্মসূচি দেয়া হয়। এ বিষয়ে ২৯ ডিসেম্বর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এই ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে নাৎসি বাহিনীর মতো অপ্রাসঙ্গিক এবং ১৯৭২ সালের সংবিধানের ‘কবর’ রচনা করা হবে।প্রথমে সরকার এর সঙ্গে যুক্ত না হলেও পরে সরকারের তরফ থেকেই ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগের কথা বলা হয়।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More