ঝিনাইদহেরর একটি পুকুর থেকে ভাই-বোনের লাশ উদ্ধার : মা আটক

মায়ের বিরুদ্ধে ২ সন্তানকে ডুবিয়ে হত্যার অভিযোগ
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের বানিয়াকান্দর গ্রামের একটি পুকুর থেকে সাফিয়া খাতুন ও মাহিদ হোসেন নামে দুই শিশুর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাদেরকে পানিতে ডুবিয়ে হত্যা করা হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করছে পুলিশ। পুলিশ নিহত দুই শিশুর মা মনিরাকে গ্রেফতার করেছে। সাফিয়া ও মাহিদ বানিয়াকান্দর গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম ও মনিরা খাতুন দম্পতির ছেলে-মেয়ে।
স্থানীয় গৃহবধূ রাবেয়া খাতুন জানান, সকালে দুই সন্তান মাহিদ ও সাফিয়াকে গোসল করতে গিয়ে বাড়ির পার্শ্ববর্তী একটি পুকুরে নিয়ে যান মা মনিরা বেগম। পরে দুপুর ১২টার দিকে বাড়িতে এসে আমাদের কাছে বলছে আমার এই দুই সন্তান থাকলে খুবই ভালো হতো, কোনো কষ্ট থাকতো না। তখন আমরা বলছিলাম তাদের কি হয়েছে, তখন মনিরা বলে ওদের পানিতে ডুবিয়ে রেখেছি। তখন আমরা সবাই ছুটে গিয়ে দেখি পুকুরের ভেতরে কাদায় তাদের মুখ গাদা রয়েছে। সে অবস্থায় মাহিদ ও সাফিয়াকে উদ্ধার করে আনি।
প্রতিবেশী সুফিয়া খাতুন জানান, মনিরা খাতুন তাকে বলে, আগের সন্তানদের মানুষ করতে কষ্ট হয়নি। এ দুটোর মানুষ করতে কষ্ট হচ্ছে। তাই ওদের পানিতে ফেলে দিয়েছি। পরে তাকে সঙ্গে নিয়ে পুকুরে যান প্রতিবেশীরা। অনেক খোঁজাখুঁজির পর পুকুর থেকে শিশু দুটির লাশ উদ্ধার করা হয়।
ওই গ্রামের বাসিন্দা অ্যাড. মনজুরুল হাসান জানান, ইতোপূর্বে প্রায় এক বছর আগে মা তার সন্তান আবু সালেহ মাহিদকে জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায় জনৈক ব্যক্তির কাছে বিক্রিও করে দিয়েছিলো। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে। মা মনিরা বেগম এই দুই সন্তান এবং স্বামীকে দেখতে পারতো না বলেই এমনটি হয়েছে। স্থানীয় ইউপি মেম্বার সুজন জানান, রোববার সকালে সাফিয়া ও মাহিদকে নিয়ে গোসল করতে যান তার মা মনিরা খাতুন। বাড়ি ফিরে মনিরা প্রতিবেশী রাবেয়া খাতুন নামে এক নারীকে জানান তার দুই সন্তানকে সে পুকুরে রেখে এসেছে। মনিরার অসংলগ্ন কথাবর্তার পর রাবেয়া খাতুনসহ লোকজন পুকুরের কাদায় পুতে রাখা অবস্থায় দুই ভাই-বোনের মরদেহ উদ্ধার করে। গ্রামবাসীর অভিযোগ মনিরা খাতুনের মানসিক সমস্যার পাশাপাশি সে বদরাগী নারী হিসেবে মহল্লায় পরিচিত। দুই বছর আগে সে তার এক সন্তানকে বিক্রি করে দেয় বলে অভিযোগ করেন সুজন মেম্বার।
ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি মিজানুর রহমান জানান, সকালে মায়ের সঙ্গে আবু সালেহ মাহিদ (৫) ও সাফিয়া খাতুন (৭) বাড়ির পাশের পুকুরে গোসল করতে যায়। গোসল শেষে মা মনিরা বেগম বাড়িতে ফিরে আসেন। সন্তানদের না পেয়ে পাশের বাড়ির রাবেয়া খাতুনকে সঙ্গে নিয়ে পুকুরে খুঁজতে যান মা। খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে শিশু দুটির মরদেহ পাওয়া যায়। পরে পুলিশ তাদের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে।
ওসি বলেন, মা মনিরা খাতুন পুলিশকে বলেছেন, তিনি দুই ছেলে-মেয়েকে পুকুর পাড়ে রেখে নিজে পানিতে গোসল করতে নামেন। পরে পেছন ফিরে দেখেন ছেলে-মেয়ে দুটি আর নেই। তবে তার কথাবার্তা অসংলগ্ন। যে কারণে মা মনিরা খাতুনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গ্রেফতার করা হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, মনিরা খাতুন নিজেই তার সন্তানকে হত্যা করেছেন। তিনি জানান, এটি হত্যা নাকি পানিতে ডুবে মৃত্যু তা সঠিকভাবে জানা যায়নি। ময়নাতদন্তের পর জানা যাবে।
উল্লেখ্য, এর আগে শনিবার জেলার মহেশপুর উপজেলার বাকোসপোতা গ্রামে একমাত্র শিশুপুত্র রাব্বীকে (৫) শ্বাসরোধ করে হত্যার পরে মা রিফা খাতুন গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More