ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডুর পল্লি নারায়ণকান্দির সজিব হাসান ঢাকায় খুন

পরকীয়া প্রেমিককে ৫ টুকরো : জবানবন্দিতে যা বললেন শাহানাজ

স্টাফ রিপোর্টার: রাজধানীর ওয়ারীতে সজিব হাসান নামে এক যুবককে পাঁচ টুকরো করে হত্যার ঘটনায় পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া শাহানাজকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। সেই মামলায় তাকে আদালতে হাজির করা হয়েছে। শুক্রবার হত্যাকা-ের কথা স্বীকার করে তিনি আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন তিনি। আদালতে ওই নারীর জবানবন্দির বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সজিব হাসানের সঙ্গে শাহানাজ পারভীন ছাড়াও একাধিক নারীর সম্পর্ক ছিলো। চারদিন আগে শাহানাজ যখন সজিবের বাসায় ওঠেন, তখন তার গয়নাগাটি বিক্রি করে টাকা দিতে চাপ দিচ্ছিলেন সজিব। শাহানাজকে বাসায় একা রেখে তালা লাগিয়ে সজিব বাইরে যেতেন। এসব পুঞ্জীভূত ক্ষোভ থেকেই সজিবকে ছুরি মেরে হত্যার পর লাশ কেটে পাঁচ টুকরো করেন শাহানাজ। পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার শাহ ইফতেখার আহমেদ গণমাধ্যমকে জানান, আদালত শাহানাজের জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়ে দেন। মামলার বাদী নিহত যুবকের খালু নজরুল ইসলাম। তার মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয় শাহানাজকে। তিনিই মামলার একমাত্র আসামি। নিহত সজিব হাসান ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকু-ু থানার নারায়নকান্দি গ্রামের মৃত আতিয়ার রহমানের ছেলে। দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছোট ছিলেন। নিহত সজীব হাসান শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার গ্রামের বাড়িতে স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে।
নিহতের খালু নজরুল ইসলাম দাবি করেন, গত ১১ বছর থেকে ঢাকায় শাহানাজ পারভীন নামে এক নারীকে বিয়ে করে সংসার করছে মাসহ আত্মীয়-স্বজন সবাই এমনটি জানতো। কিন্তু তিনি তার বক্তব্যের স্বপক্ষে বিয়ের কাবিন বা অন্য কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি। তার দাবি, শাহানাজ পারভীনকে বিবাহিত স্ত্রী পরিচয় দিয়ে একাধিকবার নিজ বাড়ি ও গাইবান্ধার মালিকাবাদ খালার বাড়িতে বেড়াতে গেছেন। পরিবারের সবাই শাহানাজকে তাদের ছেলের বৌ হিসেবে জানতেন। গতকালই তারা শাহানাজের অন্য সংসার ও সন্তানের কথা জানতে পারেন বলে জানিয়েছেন।
স্বীকারোক্তিতে শাহনাজ পারভীন জানান, তিনি প্রায় দুই বছর ধরে কে এম দাস লেনের ১৭/১ নম্বর বাড়ির চার তলার বাসায় গিয়ে সজীবের সঙ্গে ড্রেসে পুঁথি বসানোর কাজ করতেন। তার ছেলেমেয়েরা বড় হয়েছে। বড় মেয়ে কলেজে পড়ে আর দুই ছেলে চাকরি করেন। স্বামী ব্যবসা করেন। সজীবের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয় ‘এই সুবাদে পরকীয়া প্রেমিক সজীব তার বাসায় যাতায়াত করতেন। এর মধ্যে তার কলেজ পড়ুয়া মেয়ের সঙ্গে সজীবের প্রেমের সম্পর্ক হয়। বিষয়টি জানতে পেরে তিনি সজীবকে বেশ কয়েকবার সতর্কও করেন। এক পর্যায়ে সজীব তাকে মোবাইল ফোনে তার মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক করার ভিডিও দেখায়। এটা দেখে তিনি লজ্জায় পড়ে সজীবকে খুনের পরিকল্পনা করেন।’
শাহনাজ আরও জানায়, ‘পরে গত ৮ ফেব্রুয়ারি সকালে ব্যাগে কাপড় ভরে তিনি সজীবের বাসায় ওঠেন এবং মেয়ের ভিডিও ডিলিট করতে বলেন। তখন সজীব তাকে জানায় যে যদি তার মেয়েকে ওই বাসায় আনতে পারে তবেই ভিডিও ডিলিট করা হবে এবং সেটা দেখিয়ে সজীব তার (শাহনাজের) স্বামীর কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা এনে দিতে বলে। এসব বিষয় নিয়ে আলাপ করার এক পর্যায়ে সজীব ঘুমিয়ে পড়ে। তখন তিনি রান্নাঘর থেকে বটি এনে ঘুমন্ত সজিবকে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে।’
পুলিশ বলছে, শাহানাজ পারভিনের খোঁজ চেয়ে গত সোমবার ওয়ারী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন তার স্বামী জসিম উদ্দিন মজুমদার। সেখানে ঠিকানা দেয়া হয়েছে ৪৯/২ আর কে মিশন রোড।
এদিকে মামলার জব্দ তালিকায় হত্যাকা-ে ব্যবহৃত চুরি, শিল ও রক্তমাখা কাপড় আলামত হিসেবে দেখানো হলেও শাহানাজ পারভিন স্বামীর বাসা থেকে নিয়ে আসা স্বর্ণালঙ্কার, টাকা-পয়সা ও জামাকাপড় জব্দ তালিকায় দেখানো হয়নি। এসব মালামাল কি করা হয়েছে জানতে চাইলে ওয়ারী থানার পুলিশ পরিদর্শক অপারেশন মো. সাজ্জাদ রোমন বলেন, আসামির আত্মীয় স্বজনকে সকল মালামাল বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওয়ারী থানার এস আই সাইফুল ইসলাম জানান, নিহতের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে আসামির সঙ্গে থাকা স্বর্ণালঙ্কার ও টাকা পয়সার জব্দ তালিকায় দেখানো হয়েছে কি-না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, জব্দ তালিকায় অবশ্যই দেখানো হয়েছে। তবে যা কিছু হচ্ছে, তা আইন মেনে করা হচ্ছে। তবে তদন্তের স্বার্থে সব কিছু বলা যাচ্ছে না।
ওয়ারীর কে এম দাস রোডের ১৭/১ হোল্ডিং এর বাসার চতুর্থ তলার একটিবাসা থেকে বৃহস্পতিবার বিকালে সজিব হাসান (৩৫) নামের এক যুবকের লাশের পাঁচ টুকরা উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় লাশের টুকরার পাশে বসে থাকা শাহানাজ পারভিন (৫০) নামের এক নারীকে আটক করা হয়। ওই বাসাটি দুজনে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে গত কয়েক মাস আগে ভাড়া নিয়েছিলো। তখন থেকে সজিবের বাসায় নিয়মিত থাকতেন শাহানাজ।
শাহানাজ নিহত সজিবের বাসায় বুটিকসের কাজ শিখছেন বলে তার ব্যবসায়ী স্বামীকে বলে যেতেন। ওই সংসারে দুই ছেলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন এবং একমাত্র মেয়ে কলেজে পড়েন বলে জানান স্থানীয়রা।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More