তথ্য জালিয়াতিতে চুয়াডাঙ্গার দুটি সরকারি স্কুলে ২৫৫ জনের ভর্তি অনিশ্চিত

অভিভাবকদের বিরুদ্ধে ভুল তথ্য দিয়ে একজনের নামে একাধিক জন্মনিবন্ধন তৈরি করার অভিযোগ 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার দুটি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ভর্তি কার্যক্রম গত রোববার শুরু হয়েছে। কিন্তু ডিজিটাল লটারিতে নির্বাচিত ৪৮০ শিক্ষার্থীর মধ্যে ২৫৫ জনের ভর্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা পড়েছেন দুশ্চিন্তায়। শিক্ষক-কর্মকর্তাদের অভিযোগ, শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা ভুল তথ্য দিয়ে একজনের নামে একাধিক জন্মনিবন্ধন তৈরি করে লটারিতে অংশ নিতে জন্মনিবন্ধন নম্বর নয়ছয় করে অনলাইনে ইচ্ছেমতো দরখাস্ত জমা দিয়েছেন। এতে লটারিতে এক শিক্ষার্থী দুই থেকে ছয়টি আসনে নির্বাচিত এবং ছেলেদের স্কুলে মেয়ে ও মেয়েদের স্কুলে ছেলের নাম আসায় জটিলতা দেখা দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে রোবাবর জেলা উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটির সভায় আলোচনা হয়। বক্তারা বলেন, শিশুদের পরীক্ষা থেকে মানসিক চাপমুক্ত রাখতে লটারির প্রচলন করা হয়েছিলো। কিন্তু এক শ্রেণির অভিভাবকের জালিয়াতি ও লটারির পুরো প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ায় তা হতাশ করেছে। শিশু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা কেউই শেষ পর্যন্ত চাপমুক্ত থাকতে পারেননি। সভার সভাপতি ও দুটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান বলেন, লটারির পর থেকে প্রতিদিনই বিষয়টি নিয়ে অসংখ্য মানুষের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। লটারির আগে ভুল ও অসম্পূর্ণ তথ্য দিয়ে ফরম পূরণ সফটওয়্যার কীভাবে গ্রহণ করে, একজনের নাম এভাবে ছয় জায়গায় কীভাবে আসে, এর সমাধান জরুরি। জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ‘লটারিপ্রক্রিয়া চালুর পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে পড়াশোনার আগ্রহ অনেকটাই কমে গেছে। সন্তানকে সরকারি বিদ্যালয়ে ভর্তি করতে অভিভাবকেরা নিচ্ছেন জালিয়াতির আশ্রয়। আমরা সুপারিশ করবো, লটারিতে জালিয়াতি বন্ধে গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি চালু অথবা ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি ফিরিয়ে আনা।’ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আতাউর রহমান এ সময় বলেন, ‘এক শিক্ষার্থীর নাম এসেছে ৯ জায়গায়। তৃতীয় শ্রেণির ভর্তি নিয়ে অভিভাবকেরা যে ধরনের জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন, তা রীতিমতো উদ্বেগজনক। এ ব্যাপারে কোনো ছাড় নেই।’ আতাউর রহমান আরও বলেন, ১২ ডিসেম্বর লটারির পর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নেহাল আহমেদ ১৪ ডিসেম্বর ভর্তি কার্যক্রম নিয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন। এতে বলা হয়েছে, নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের কাগজপত্র পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করতে হবে; যাচাইকালীন জন্মসনদের মূল কপি, জন্মসনদের অনলাইন কপি ও মা-বাবার জাতীয় পরিচয়পত্রের মূল কপি ভালো করে দেখতে হবে; মিথ্যা তথ্য দিয়ে কোনো শিক্ষার্থী নির্বাচিত হয়ে থাকলে তাকে ভর্তি করা যাবে না; একই শিক্ষার্থী অনলাইনে জন্মনিবন্ধন বারবার পরিবর্তন করে মিথ্যা তথ্য প্রদানের মাধ্যমে একাধিকবার নির্বাচিত হয়ে থাকলে জালিয়াতির কারণে তাকে ভর্তি করা যাবে না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভিক্টোরিয়া জুবিলী (ভিজে) সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে ২৪০ আসনের বিপরীতে লটারিতে ২ হাজার ২৪৫টি দরখাস্ত জমা পড়ে। লটারিতে নির্বাচিত ২৪০ জনের মধ্যে ১০৩ জনের তথ্য নির্ভুল বলে নিশ্চিত করেছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। অপর দিকে সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে ২৪০টি আসনের বিপরীতে ২ হাজার ১৭৬টি দরখাস্ত জমা পড়ে। নির্বাচিত ২৪০ জনের মধ্যে ১২২ জনের দেয়া তথ্য নির্ভুল বলে শিক্ষকেরা নিশ্চিত করেছেন। অর্থাৎ দুটি বিদ্যালয়ের ৪৮০ আসনের মধ্যে ২২৫ জনের তথ্য নির্ভুল বিবেচনায় তাদের ভর্তি নিশ্চিত হয়েছে। বাকি ২৫৫ জনের ভর্তি ঝুলে গেছে। ভিক্টোরিয়া জুবিলী সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিলাল হোসেন বলেন, লটারির ফলাফলে দেখা যায়, ১৫ জনের দখলে চলে গেছে ৪৩টি আসন। একজন ছাত্রের নাম এসেছে ছয়টি আসনে। একইভাবে এক ছাত্র ৪টি, ৫ জন ৩টি করে ও ৯ জন দুটি করে আসনে সুযোগ পেয়েছে। ছেলেদের স্কুলে এসেছে একজন মেয়ের নাম। এ ছাড়া অনেকেই নিবন্ধন ভুল দিয়ে লটারিতে নির্বাচিত হয়েছে। সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দিল আরা চৌধুরীও অভিন্ন অভিযোগ করেন। প্রধান শিক্ষক বলেন, এ বিদ্যালয়ে লটারির ফলাফলে দেখা গেছে, ১২ জনের দখলে চলে গেছে ৩০টি আসন। দুজন ছাত্রীর নাম এসেছে চারটি করে আসনে। একইভাবে দুজনের নাম এসেছে তিনটি ও আটজনের নাম এসেছে দুটি করে আসনে। মেয়েদের স্কুলে সুযোগ পেয়েছে একটি ছেলে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More