তাপমাত্রা কিছুটা বাড়লেও চুয়াডাঙ্গায় কমেনি শীতের তীব্রতা

শীতজনিত রোগের প্রকোপ : বিভিন্ন স্থানে শীতবস্ত্র বিতরণ অব্যাহত

মাথাভাঙ্গা ডেস্ক: চুয়াডাঙ্গায় গত তিনদিন দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করার পর কিছুটা উন্নতি হয়েছে তাপমাত্রার। গতকাল রোববার সকাল ৯টায় ১৩ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। তবে তাপমাত্রা কিছুটা বাড়লেও কমেনি শীতের দাপট। দিনের বেলায় সূর্যের দেখা মিললেও তাতে নেই কোনো উত্তাপ। ফলে উত্তরের হিমেল হাওয়ায় শীতের তীব্রতা বেড়ে গেছে কয়েকগুণে। শীতে জড়োসড়ো হয়ে পড়েছে এ অঞ্চলের জনজীবন। শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষ। এদিকে, চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুরের বিভিন্ন স্থানে শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র অব্যাহত রয়েছে। গতকালও চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা, দামুড়হুদা, জীবননগর ও মেহেরপুরের মুজিবনগরে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে।

আসমানখালী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, আলমডাঙ্গা উপজেলার নান্দবারে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে সিনেস ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে গতকাল রোববার বেলা ৩টার দিকে নান্দবার গ্রামের বসতিপাড়ায় সুবিধাবঞ্চিত শীতার্তদের মাঝে ৩শ’ পিস শীতবস্ত্র বিতরণ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন গাংনী ইউপি চেয়ারম্যান মুন্সী মো. এমদাদুল হক। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিনেস ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মো. সামসুজ্জামান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির সদস্য সচিব মো. মনিরুজ্জামান, গাংনী ইউপি ওয়ার্ড সদস্য ও যুবলীগ নেতা সাঈদুর রহমান মাস্টার, আসমানখালী পুলিশ ক্যাম্পর এএসআই সবুজ কান্তি বিশ্বাস, আফরোজা খাতুন, মাসকুরা পারভীন লিপি, মাহমুদা রিনি, কামরুজ্জামান, হোসনে আরা বানি, ওহিদুজ্জামান প্রমুখ। 

দামুড়হুদা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দামুড়হুদার ফকিরপাড়ায় সনাতন ধর্মাবলম্বী দলিত সম্প্রদায়ের মাঝে সরকারি কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল রোববার রাত ৯টার দিকে দামুড়হুদা উপজেলার ফকিরপাড়া গ্রামের দলিত সম্প্রদায়ের মাঝে এই কম্বল বিতরণ করেন দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা বেগম। দামুড়হুদা উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে এসময় উপস্থিত ছিলেন দামুড়হুদা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হযরত আলী, দামুড়হুদা সদর ইউপি সদস্য লিয়াকত আলী, দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসের নাজির ওমর ফারুক সহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। এ সময় দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএন) সানজিদা বেগম বলেন, বর্তমান সরকার সব সময় জণগণের কথা ভাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার জণগণের কল্যাণে সব সময় বদ্ধ পরিকর। বর্তমান সরকার সুবিধা বঞ্চিত মানুষের কথা ভেবে শীত নিবরণে ঘরে ঘরে কম্বল পৌঁছে দিচ্ছেন।

জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, চুয়াডাঙ্গা জেলায় শীতের প্রকোপ বেড়েই চলেছে। সেই সাথে তাপমাত্রার পারদও কমছে। গতকাল  রোববার তাপমাত্রার পারদ একটু বৃদ্ধি পেলেও গত ৩ দিন ধরে দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এ জেলায় রেকর্ড করা হয়।  রোববার এ জেলায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শীতের পারদ কিছুটা উঠলেও তীব্রতা বাড়ছে। শীতের কারণে কোল্ড ডায়রিয়া, সর্দ্দি, হাচি-কাশি ও নিমোনিয়াসহ শীত জনিত রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ দিকে অসহায় মানুষের মাঝে ৪ হাজার ৪শ’ পিছ কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। শীতের প্রকোপে পড়া জীবননগর উপজেলার হতদরিদ্র, ছিন্নমূল ও শীতার্ত মানুষের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে ইউএনও মো. রোকুনুজ্জামান উপজেলার ছিন্নমূল মানুষের মধ্যে শীতবস্ত্র কম্বল বিতরণ করেন। এ সময় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মিজানুর রহমান তার সঙ্গে ছিলেন। এদিকে চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানায়,  রোববার সকালে জেলার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর পূর্বে শনিবার ৯ দশমিক ৩ ডিগ্রি, শুক্রবার ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও বৃহস্পতিবার ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। যা পর পর ৩ দিন ছিলো দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। শীতের কারণে দুর্ভোগে পড়েছে ছিন্নমূল মানুষ। কষ্টে পড়েছে বৃদ্ধ ও শিশুর পাশাপাশি গোবাদি পশু-পাখিও। শীতের কারণে কোল্ড ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসনালির প্রদাহ ও সর্দি-জ্বরসহ বিভিন্ন শীতজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে বলে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মোস্তাফিজুর রহমান সুজন জানিয়েছেন। কনকনে শীতে সন্ধ্যায় বাজারঘাট প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়ছে। এলাকার ছিন্নমূল মানুষ শীত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য খড়কুটা জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা চালাচ্ছে। বাজারের পুরাতন কাপড়ের দোকানগুলোতে শীতবস্ত্র কেনার জন্য নিম্ন আয়ের মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে ইতিমধ্যে ৪ হাজার ৪শ’ পিছ কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। আরও শীতবস্ত্রের চাহিদাপত্র দেয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। আন্দুলবাড়িয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, জীবননগর উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শীতার্ত দুস্থ, অসহায় ও হতদরিদ্র নারী-পুরুষের মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র কম্বল বিতারণ করা হয়েছে। গতকাল রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে উপজেলার বাজদিয়া আদিবাসীপাড়ায় এ কম্বল বিতারণ করা হয়। বিতারণে উপজেলা চেয়ারম্যান হাজি হাফিজুর রহমান, উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মো. রোকনুজ্জামান, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তিথি মিত্র, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান, উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাবেক সভাপতি বিজয় হালদার উপস্থিত ছিলেন।

মুজিবনগর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শুভ বড়দিন, এই উপলক্ষ্যে অসহায় দরিদ্র শীতার্থদের মাঝে শীতবস্ত্র কম্বল বিতরণ করেছেন বাগোয়ান ইউনিয়ন পরিষদের ৬নং ওয়ার্ড সদস্য মি. বাবুল মল্লিক ও তার পরিবার।  গতকাল রোববার বিকেলে সেলফ প্রজেক্ট বল্লভপুরের আয়োজনে এবং ইউপি সদস্য মি. বাবুল মল্লিক ও তার পরিবারের সহযোগীতায় অত্র সেলফ প্রজেক্টের অফিস চত্তেরে বল্লভপুর ডিনারির ডিন মৃত্যুঞ্জয় মন্ডলের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনিমেষ বিশ্বাস। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ও বক্তব্য রাখেন মুজিবনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম তোতা, বাগোয়ান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আয়ূব হোসেন, সেলফ প্রজেক্ট বল্লভপুর এর নির্বাহী পরিচালক অশোক মল্লিক, ওয়ার্ড আ. লীগের সভাপতি মারিও সুসিত মন্ডল, সাধারণ সম্পাদক মাইকেল মন্ডল টুইস, চার্চ সম্পাদক মেরি সুখী মল্লিক, মহিলা নেত্রী তৃপ্তি মন্ডল, রতনপুর মহিলা নেতৃকুমারি খান প্রমুখ। ইউপি সদস্য বাবুল মল্লিক জানান, প্রথম পর্যায়ে ৩শ’ অসহায় শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয় এবং পরবর্তীতে  ৫শ’ কম্বল বিতরণ করা হবে। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিলেন ইউপি সদস্য মি. বাবুল মল্লিক।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More