দর্শনা চেকপোস্টে দীর্ঘ দু’বছর ভারতীয় ভিসা ইস্যু বন্ধ

চিকিৎসা ও ট্যুরিস্টসহ ভিসাধারীদের বেড়েছে ভোগান্তি

বিশেষ প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গার দর্শনা জয়নগর চেকপোস্ট দিয়ে দীর্ঘ ২ বছর ভারতীয় হাইকমিশন ভিসা ইস্যু বন্ধ রেখেছে। ফলে চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহসহ উত্তরাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলায় ক্যান্সারসহ দূরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত মানুষ চিকিৎসার প্রয়োজনে ভারতে যেতে পারছেন না। ট্যুরিস্টসহ অন্যান্য ভিসাধারীদেরও ঘুরো পথে বেনাপোল হয়ে ভারতে যেতে হচ্ছে। এ কারণে সময় ও অর্থের অপচয় বেড়েছে।

দর্শনা ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা গেছে, বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে গত ২০২০ সালের ২৬ মার্চ দর্শনা আন্তর্জাতিক রেলবন্দরের মাধ্যমে ভারতীয় মালামাল আমদানী ও স্থলপথে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সব ধরণের ভিসার পাসপোর্টধারী যাত্রীদের যাতায়াত স্থগিত করে ভারতীয় হাইকমিশন। কিছুদিন পর মাস্ক বাধ্যতামূলক ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে দর্শনা আন্তর্জাতিক রেলপথে ভারত থেকে মালামাল আমদানি শুরু হয়। ২০২১ সালের ১৭ মে থেকে ভারতে আটকা পড়া বাংলাদেশীদের দর্শনা আন্তর্জাতিক স্থলপথের মাধ্যমে দেশে ফেরত আনার একটি নির্দেশনা জারি করা হয়। একই বছরের সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে শুধুমাত্র মেডিক্যাল ও বিজনেস ভিসায় দর্শনার জয়নগর থেকে ভারতের গেদে হয়ে পাসপোর্টধারী যাত্রীদের যাতায়াত করার অনুমতি দেয়া হয়। পরবর্তীতে ২০২১ সালে ৫ ডিসেম্বর তাও বন্ধ করে দেয়া হয়। সর্বশেষ গত ২৯ মে ঢাকা-কলকাতা মৈত্রী এক্সপ্রেস দর্শনা আন্তর্জাতিক রেলস্টেশন দিয়ে চলাচল শুরু হলেও অদ্যবদি দর্শনা-গেদে স্থলপথে কোনো ভিসায় চালু করা হয়নি।

চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বিশিষ্ট ঠিকাদার খুসতার জামিল জানান, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মাগুরা, মেহেরপুর, রাজবাড়ী, চুয়াডাঙ্গাসহ এ অঞ্চলের ৭-৮টি জেলার মানুষ বিভিন্ন ভিসায় দর্শনা-গেদে স্থলপথে যাতায়াত করতে না পেরে বাধ্য হয়ে বেনাপোল-হরিদাসপুর দিয়ে ভারত যেতে হচ্ছে। এতে ৭ থেকে ৮ ঘন্টা গরমে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে। যাতায়াত খরচ হচ্ছে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ।

মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর গ্রামের মিজানুর রহমান নামে এক বাংলাদেশি যাত্রী বলেন, কুষ্টিয়া, মাগুরা, মেহেরপুরসহ আশপাশের জেলা থেকে দর্শনা চেকপোস্টে আসতে খরচ হয় মাত্র ৫০ থেকে ৮০ টাকা। আর দর্শনা থেকে ভারতের  গেদে রেলস্টেশনে পায়ে হেটেই যাওয়া যায়। সে হিসেবে মেহেরপুর থেকে যশোরের ভাড়া ১৫০-১৮০ টাকা, যশোর  থেকে বেনাপোলের ভাড়া ৫০ টাকা, বেনাপোল থেকে ভারতের বনগাঁও রেলস্টেশনে পৌঁছাতে জনপ্রতি খরচ দেড়শো টাকা। দর্শনা জয়নগর চেকপোস্ট থেকে ভারতের শিয়ালদহের দূরত্ব ১১৮ কিলোমিটার। অথচ বেনাপোল হয়ে গেলে শিয়ালদহের দুরুত্ব ১৮৮ কিলোমিটার।

দর্শনা ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা মো. আবু নাঈম জানান, ভারতীয় নাগরিকরা যেকোনো ভিসায় গেদে হয়ে দর্শনা জয়নগর চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারছে। তবে বাংলাদেশিদের এ পথে কোনো ভিসা দেয়া হচ্ছে না।

দর্শনা সিএন্ডএফ অ্যাসোসিয়েসনের সাধারণ সম্পাদক আতিয়ার রহমান হাবু জানান, দর্শনা-গেদে স্থলপথ দিয়ে ভিসা চালু করা হলে সরকার যেমন হাজার হাজার টাকা রাজস্ব পাবে, সাথে সাথে বেনাপোল স্থলবন্দরের ওপর যাত্রীর চাপ কমে আসবে। তাছাড়া দর্শনা থেকে কলকাতার দূরত্ব মাত্র ১১৮ কিলোমিটার।

দর্শনা কাস্টমস সুপারিনটেনডেন্ট শুভাশীষ কুন্ডু জানান, কোভিডের আগে এ পথে প্রতিদিন প্রায় দেড়-দুই হাজারের ওপরে পাসপোর্টধারী যাত্রী যাতায়াত করেছে। ভিসা চালু হলে আগের মতো পাসপোর্ট যাত্রী যাতায়াত করবে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ চেকপোস্টে একজন যাত্রীর জন্যেও কাস্টমস, ইমিগ্রেশন ও বিজিবির ফুলটাইম কাজ করে। ফলে প্রতিদিন যা খরচ তাতো হয়েই যাচ্ছে।

দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সানজিদা বেগম জানান, দর্শনা-গেদে আন্তর্জাতিক স্থলপথে ভিসা চালু সংক্রান্ত বিষয়ে আমার দফতরে এ পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা আসেনি।

বাংলাদেশস্থ ভারতীয় হাইকমিশন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ভারতের নয়াদিল্লি থেকে এখনো গেদে-জয়নগর সীমান্ত পথে ভিসা দেয়ার কোনো নির্দেশনা আসেনি।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More