দল ও দেশের স্বার্থে কর্মীদের মধ্যে কোনো প্রতিহিংসা চলবে না -বিএম মোজাম্মেল হক

জীবননগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল লতিফ অমল নির্বাচিত

এমআর বাবু ও সালাউদ্দীন কাজল, জীবননগর:

জীবননগর উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে উপাধ্যক্ষ মো. নজরুল ইসলাম সভাপতি এবং আবু মো. আব্দুল লতিফ অমল সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। গতকাল সোমবার বেলা ১১টার সময় জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্যদিয়ে জীবননগর উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের প্রথমার্ধের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। শুরুতেই জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। এরপর উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপি। জীবননগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মোর্ত‚জার সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক উপাধ্যক্ষ মো. নজরুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বি.এম মোজাম্মেল হক। প্রধান অতিথির তিনি বলেন, ‘দল ও দেশের স্বার্থে কর্মীদের মধ্যে কোনো প্রতিহিংসা চলবে না। সকলের মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকবে। সুস্থ প্রতিযোগিতা। কে বেশি মানুষের সমর্থন পাবে, কে বেশি দলের জন্য ত্যাগী থাকবে সে প্রতিযোগিতা স্বাভাবিক। কিন্তু নিজেদের মধ্যে প্রতিহিংসা ধ্বংস ডেকে আনে।’ তিনি বলেন, চুয়াডাঙ্গার মানুষ বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগকে ভালোবাসে বলেই এখানে বারবার নৌকা জয়লাভ করে। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা নানা প্রকার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ সকল অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধ থেকে ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে হবে। তিনি আরও বলেন, বিশ্বের সব দেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বাংলাদেশ তথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনুসরণ করে। কারণ শেখ হাসিনা সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে উন্নয়নের মাধ্যমে বিশ্বে বাংলাদেশকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন। বাংলাদেশ এখন আর গরিবের দেশ নয়। উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় লিপিবদ্ধ হয়েছে বাংলাদেশের নাম। দেশে মেট্রোরেলসহ যোগাযোগ ব্যবস্থার অভ‚তপ‚র্ব উন্নয়ন, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ ও বিভিন্ন ধরনের ভাতার বিষয়টি শেখ হাসিনা ক্ষমতায় না এলে সম্ভব ছিলো না।

এরপর দ্বিতীয় অধিবেশনে উপজেলা আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্ব ঘোষণা করা হয়। এতে সভাপতি নিবাচিত করা হয় উপাধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল লতিফ অমলকে। নেতৃত্বের এ পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে তৃণম‚ল পর্যায়ে কর্মীদের সাংগঠনিক তৎপরতা বাড়বে বলে জানান দলীয় কর্মীরা।

বিএনপির সমালোচনা করে বিএম মোজাম্মেল হক বলেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাজাপ্রাপ্ত আসামি অশিক্ষিত তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার কথা বার বার বলেন। যার যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে। সে (তারেক রহমান) দেশে ফিরে আসলেও তো জেলে যেতে হবে তিনি বলেন, আমরাও চাই সে (তারেক রহমান) দেশে ফিরে আসুক, আইনের কাঠামোতে আসুক। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিশ্বে টানা পাঁচবার এক নম্বর দুর্নীতিবাজ হিসেবে পরিচিত পেয়েছিল বাংলাদেশ। যে জাতি মুক্তিযুদ্ধে রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিল সেই জাতির কপালে বেগম খালেদা জিয়া ঢেলে দিলেন এক নম্বর দুর্নীতিবাজ তকমা। তার সরকারের বিদ্যুতের জন্য বরাদ্দ ২২ হাজার কোটি টাকা কই গেল। তার ছেলে তারেক জিয়া সেই টাকা বিদেশে পাচার করে দিলেন, এটা প্রমাণিত। তারেক জিয়ার রায় ঘোষণা হয়েছে। বেগম জিয়ার আরেক পুত্র কোকোও বিদেশে টাকা পাচার করেছে। সরকার কিছু টাকা দেশে ফেরত এনেছে। আর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০০৯ সালে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পরে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছিয়ে দিয়েছেন। এই চুয়াডাঙ্গার মানুষেরাই বলুন, আপনাদের ৯৯ শতাংশ ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ গেছে কী না? বিদ্যুৎ গিয়েছে। তিনি আরও বলেন, এখন স্বাধীনতা বিরোধীদের একটি চক্র আছে যারা মিথ্যা কথা বলে। ধর্মের নামে যারা ব্যবসা করে, রাজনীতি করে। যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা, উন্নয়ন, সমৃদ্ধিকে বিশ্বাস করে না। প্রতিনিয়ত মিথ্যাচার করে, তাদেরকে দাঁতভাঙ্গা জবাব দিতে হবে। আজকের বাংলাদেশ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সকল সেক্টরে বাংলাদেশ উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে এগিয়ে গেছে। তখন ওরা বলে বাংলাদেশে দুর্নীতি হয়েছে। উন্নয়ন- অর্থনীতিতে কিছু মিস ইউজ হয়, হতে পারে। কিন্তু কেউ কি বলতে পারবে যে অমুক এতো টাকা দুর্নীতি করেছে? আর সেটা কী কোর্টে প্রমাণিত হয়েছে? আওয়ামী লীগের এই সাংগঠনিক সম্পাদক আরো বলেন, বিএনপি শুধু ষড়যন্ত্র করে, ১৯৭১ মুক্তিযুদ্ধের সময় ষড়যন্ত্র করেছেন, ১৯৭৫ বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার জন্য ষড়যন্ত্র করেছে, ২০০৪ সালে বেগম জিয়া ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় তারেক জিয়া শেখ হাসিনাকে গ্রেনেড দিয়ে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র করেছেন। ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব, ক্ষমতা থেকে বিরোধী দলীয় নেতাকে মেরে ফেলতে চান, আপনারা মিথ্যাচার করেন। তিনি আরো বলেন, আজকে নতুন করে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। বাংলাদেশ যখন মাথাউচু করে দাঁড়িয়েছে; তখন এই দেশের প্রতি অনেকের নজর পড়েছে। আর সেই ষড়যন্ত্রের অংশীদার হয়েছে স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াত চক্র। সততা, নিষ্ঠা আর আদর্শের মধ্যদিয়ে লড়াই করতে হবে। প্রতিটি মানুষের কাছে শেখ হাসিনার উন্নয়নের কথা বলতে হবে।

এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য পারভীন জামান কল্পনা, চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আজাদুুল ইসলাম আজাদ, চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হাজি মো. আলী আজগার টগর এমপি। এছাড়া আরও বক্তব্য দেন, চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. মোশাররফ হোসেন মিয়া, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সী আলমগীর হান্নান, উথলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আব্দুল হান্নান, আন্দুলবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ শফিকুল ইসলাম মোক্তার, রায়পুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহিনুর রহমান, জীবননগর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম ঈশা, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও পৌর কাউন্সিলর সোয়েব আহম্মেদ অঞ্জন। বিকেল ৪টার সময় সম্মেলনের দ্বিতীয়ার্ধে উপাধ্যক্ষ মো. নজরুল ইসলামকে জীবননগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং আবু মো. আব্দুল লতিফ অমলকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। দীর্ঘ ১৮ বছর পর জীবননগর উপজেলা আওয়ামী লীগের এটি ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন। জীবননগর পৌরসভার ইক্ষু ক্রয় কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয় এই সম্মেলন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে দু’জন করে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেছেন। সবশেষ ২০০৫ সালে জীবননগর উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন হয়। ওই সম্মেলনে মো. গোলাম মোর্ত‚জা সভাপতি ও মো. শরিফ উদ্দীন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরে শরিফ উদ্দীন মারা যাওয়ায় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক উপাধ্যক্ষ মো. নজরুল ইসলাম দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More