দামুড়হুদার গ্রামীন জনপদে মাঠ পর্যায়ে নির্মাণ হচ্ছে ‘বজ্র সেন্টার’

দুর্যোগকালীন সময়ে মাঠের কর্মঠ চাষীরা এর সুফল ভোগ করবে

তাছির আহমেদ/ আব্দুস সালাম: বিশ্বব্যাপী জলবায়ুর পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে দেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ বজ্রপাত কেড়ে নেয় গ্রামের মাঠে কাজ করা অবস্থায় চাষীদের জীবন। বর্ষা মরসুম সামনে রেখে বজ্রাঘাতে চাষীর মৃত্যুর ঘটনা সবাইকে করে উদ্বিগ্ন। এ বজ্রপাত থেকে চাষীর জীবন পরিত্রান পেতে নিজ উদ্যেগে দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গ্রামের চাষীদের বজ্রাঘাতে মৃত্যু ঠেকাতে ‘বজ্র সেন্টার’ নামের নিরাপদ বলয় তৈরীর পরিকল্পনা গ্রহন করেছে। এই পরিকল্পনাকে বাস্তবায়নের জন্য তিনি ইতোমধ্যে গ্রামীণ জনপদের মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করেছেন। প্রতিটি ইউনিয়নে এটি বাস্তবায়ন হলে মাঠে কর্মরত চাষীরা হঠাৎ দুর্যোগকালীন সময়ে এর সুফল ভোগ করবে।
জানা গেছে, বিগত কয়েক বছর ধরে বজ্রাঘাতে চাষীর মৃত্যুর ঘটনা দেশে বেড়েই চলেছে। বজ্রপাতের কবল থেকে চাষীর মৃত্যু ঠেকাতে চুযাডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলা কৃষিবিদ ও কৃষি কর্মকর্তা ‘বজ্র সেন্টার’ নামের একটি নিরাপদ বলয় তৈরীর পরিকল্পনা গ্রহন করেছেন। মাস দুয়েক আগে উপজেলার চাকুলিয়া গ্রামের নান্নু ও মদনা গ্রামের অপর এক চাষী মাঠে কর্মরত অবস্থায় বজ্রাঘাতে মারা যাওয়ার পর মুলত জন্ম নেয় এ পরিকল্পনা। এই পরিকল্পনাকে বাস্তবায়নের জন্য ইতোমধ্যে উপজেলার গ্রামীণ জনপদের ছুটিপুর, জয়রামপুর, কুড়–লগাছি, হৈবতপুর ও নাপিতখালী মাঠে বজ্র সেন্টার নির্মাণের প্রাথমিক পর্যায়ে পরিকল্পনা গ্রহন করে মাঠ পর্যায়ের কাজ চলমান। এটি দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য উপজেলার ছুটিপুর গ্রামের ফেদামারি মাঠে বজ্র সেন্টারের প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ শেষ হয়েছে। উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে বজ্র সেন্টারের কাজ শেষ হলে গ্রামের চাষীরা মাঠে কাজ করা অবস্থায় হঠাৎ দুর্যোগকালীন সময়ে আকাশে মেঘ ও বিদ্যুৎ চমকাতে দেখলে দ্রুত নিরাপদ বজ্র সেন্টারে আশ্রয় নিয়ে জীবন রক্ষা করতে সক্ষম হবে। এই বজ্র সেন্টার’ সিমেন্টের খুঁিটর ওপর সিমেন্টের তৈরী টিন ছাউনী হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। চারিদিকে বেষ্টনী হিসেবে থাকবে বাঁশের রেলিং আর বসার জন্য বাঁশের মাচা। মাঠের উক্ত বজ্র সেন্টারে লাইটেনিং এরেসটার দিয়ে তৈরী হবে নিরাপদ বলয়। বজ্রপাতের মত প্রাকৃতিক দূর্যোগের সময় বজ্র সেন্টারের ১ কিলোমিটারের মধ্যে লাইটেনিং এরেসটারটি বজ্র প্রতিরোধে কাজ করবে। বজ্র সেন্টারের পাশাপাশি থাকবে বিশুদ্ধ পানীয় জলের টিউবয়েলসহ একটি ডাষ্টবিন। মাঠে ব্যবহৃত নানা ধরনের বীজ প্যাকেট, সারের পলিথিন ও অব্যবহৃত বোতল জাতীয় প্লাস্টিক এই ডাষ্টবিনে জমা হবে। পরে তা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে কৃষি জমি পলিথিন মুক্ত করা হবে। গ্রামীন জনপদের এসকল মাঠের কর্মরত চাষীরা এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছে।
উপজেলার নতিপোতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: আজিজুল হক বলেন, এলাকার চাষীরা মাঠে কাজ করা অবস্থায় হঠাৎ করে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে। সেসময় চাষীদের মাথার ওপর থাকে না কোন সুরক্ষা ছাউনী। নিরাপদ আশ্রয় খুঁজতে লেগে যায় অনেক সময়। ঝড় বৃষ্টির কবলে পড়ে বজ্রাঘাতে চাষীর মৃত্যু হয়। দিনদিন বজ্রপাতের প্রবনতা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে প্রানহানির ঘটনা ঘটছে অহরহ। মাঠে কাজ করা অবস্থায় হঠাৎ দুর্যোগকালে চাষীদের জীবন বজ্রপাতের কবল থেকে বাঁচাতে উপজেলা কৃষি বিভাগের ’বজ্র সেন্টার’ তৈরীর পরিকল্পনাকে এলাকার কৃষকসহ সাধারণ মানুষ সাধুবাদ জানিয়েছে। সেই সাথে আশ্বাস দিয়েছেন সার্বিক সহযোগিতার। প্রতিটি ইউনিয়নের মাঠে এটি বাস্তবায়ন হলে মাঠের কর্মরত চাষীরা দুর্যোগকালীন সময়ে এর সুফল ভোগ করতে পারবে।
উপজেলা কৃষিবিদ ও কৃষি কর্মকর্তা মো: মনিরুজামান বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বজ্রপাত কেড়ে নিচ্ছে গ্রামের মাঠে কাজ করাবস্থায় সহজ-সরল চাষীদের জীবন। মাঠ পর্যায়ে খোলা আকাশের নিচে বজ্রপাত থেকে জীবন রক্ষার্থে কাছাকাছি কোনো নিরাপদ স্থাপনা না থাকায় চাষীরা অরক্ষিত হয়ে পড়ে। প্রাকৃতিক এ দুর্যোগময় মুহুর্তে মাঠে অবস্থানরত চাষীদের বজ্রপাত থেকে জীবন বাঁচাতে ‘বজ্র সেন্টার’ তৈরীর পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। বজ্রপাতের সময় বজ্র সেন্টারের ১ কিলোমিটারের মধ্যে লাইটেনিং এরেসটারটি বজ্র প্রতিরোধে কাজ করবে। প্রাথমিক পর্যায়ে উপজেলার কয়েকটি গ্রামের মাঠে বজ্র সেন্টার নির্মানের পরিকল্পনা গ্রহন করে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ছুটিপুর গ্রামের ফেদামারি মাঠে বজ্র সেন্টার নির্মাণের কাজ প্রাথমিক পর্যায়ে শেষ হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে বজ্র সেন্টারগুলোর নির্মাণ কাজ শেষ হলে চাষাবাদের নানা পরামর্শসহ চাষীদের কল্যাণে ব্যবহার করা হবে বিশুদ্ধ পানীয় জলের টিঊবয়েল ও ডাষ্টবিন। ‘বজ্র থেকে বাঁচি’ এই প্রতিপাদ্যকে বাস্তবায়নের জন্য চাষীদের কল্যাণে প্রাথমিক ভাবে নিজস্ব অর্থায়নে এটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বিষয়টি জেলা প্রশাসক মহোদয়, উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ উপজেলা চেয়ারম্যান সাহেবের নজরদারিতে রয়েছে এবং এই বিষয়ে সার্বিক সহয়োগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। এটি বাস্তবায়ন হলে মাঠের কৃষক, জেলেসহ অন্যান্য পেশাজীবিরাও প্রাকৃতিক দুর্যোগময় মুহুর্তে বজ্রপাত থেকে সুরক্ষার জন্য নিরাপদে থাকবে।
দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতে, মাঠে কর্মরত চাষীরা প্রতিবছর বর্ষার আগে ও পরে বজ্রাঘাতে মারা যায়। বজ্রাঘাতে মৃত্যু ঠেকাতে বজ্রপাত বেশি হয় এমন এলাকা সুনির্দিষ্ট করে সেখানে নিরাপদ বলয় তৈরি করতে হবে। বজ্রপাত সংকুলন এলাকায় লাইটেনিং এরেসটার লাগিয়ে সেটি করা সম্ভব। গত কয়েক বছর ধরে বজ্রপাতের হার এবং বজ্রপাতের সময়সীমা বেড়েছে। ফলে বেড়েছে বজ্রাঘাতে মৃতের সংখ্যা। বজ্র ধরতে তালগাছকে একটি উপায় ধরে তালবীজ লাগানোর পরিকল্পনা তো চলছে। সরকারের উদ্যোগে তালগাছ লাগানোর যে প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে সেগুলো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ। কেননা একটি তালগাছ পরিপূর্ণ হতে অন্তত দুই দশক সময় লাগে। সে পর্যন্ত মৃত্যুর মিছিল বাড়বে। ফলে সেই দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের ভেতর একটি আশু সমাধানের রাস্তা বের করে মৃত্যুরহার কমানো যেতে পারে। এসকল চাষীদের সুরক্ষার জন্য মাঠে জীবন রক্ষাকারী নিরাপদ বলয়ে আশ্রয় নেওয়ার ব্যবস্থা থাকলে বজ্রাঘাতে চাষীর মৃত্যুর সংখ্যা একেবারে কমে যাবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More