দামুড়হুদার ঠাকুরপুর সীমান্তে বিএসএফ’র গুলিতে বাংলাদেশী যুবক ওমিদুল নিহত

ভারতীয় পুলিশ হেফাজতে লাশ ॥ লাশ ফেরত পেতে বিজিবির পত্র প্রেরণ : আজ পতাকা বৈঠক

দর্শনা অফিস/কুড়–লগাছি প্রতিনিধি: দামুড়হুদার ঠাকুরপুর সীমান্তে গুলি করে বাংলাদেশী যুবক ওমিদুলকে হত্যা করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। গতকাল রোববার ভোরে ঠাকুরপুর সীমান্তের ৮৯ নম্বর পিলারের কাছে ভারতীয় অংশে এ গুলির ঘটনা ঘটে। নিহত ওমিদুল কুড়–লগাছি ইউনিয়নের ঠাকুরপুর গ্রামের স্কুলপাড়ার শহিদুল ইসলামের ছেলে। নিহত ওমিদুলের লাশ ভারতে বিএসএফের হেফাজতে রয়েছে বলে জানাগেছে। সীমান্তে গুলির ঘটনায় কড়া প্রতিবাদসহ লাশ ফেরত চেয়ে বিএসএফকে চিঠি দিয়েছে বিজিবি। আজ সকালে অনুষ্ঠিত হতে পারে বিজিবি-বিএসএফ’র পতাকা বৈঠক।

নিহত ওমিদুলের পিতা শহিদুল ইসলামের বরাত দিয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) জানায়, ওমিদুল সম্প্রতি বন্ধুদের প্ররোচনায় গরু ব্যবসায় যোগ দেন। ভারত থেকে গরু আনার জন্য শনিবার রাতে বাড়ি থেকে বের হয়ে তিনি আর ঘরে ফেরেননি। রোববার সকালে তিনি বিজিবির মাধ্যমে ছেলের মৃত্যুর খবর পান।

এলাকাবাসী আরও জানিয়েছে, বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে দামুড়হুদার ঠাকুরপুর সীমান্ত দীর্ঘদিন ধরেই গরু পাচারের নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে চোরাকারবারীদের জন্য। গরু পাচারকালে প্রাণ হারানোর ঘটনাও কম ঘটেনি। তবুও থামেনি গরু পাচার। অভিযোগ রয়েছে এক শ্রেনির প্রভাবশালী গরু চোরাকারবারী অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যমে খেটে খাওয়া দিনমজুরদের রাতের আধারে সীমান্তে বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে গরু আনতে পাঠিয়ে থাকে ভারতে। এবারো প্রভাবশালী অভিযুক্ত কয়েকজন চোরাকারবারীর জন হাজিরায় ভারতে গরু আনতে গিয়ে প্রাণ দিতে হলো দামুড়হুদার কুড়ুলগাছি ইউনিয়নের ঠাকুরপুর গ্রামের শফিকুল ইসলাম শহীদের ছেলে ওমিদুল ইসলামকে (২২)।

পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ওমিদুল দীর্ঘদিন ধরেই এলাকার চিহ্নিত গরু চোরাকারবারী ঠাকুরপুরের মান্দার মোল্লার ছেলে আসাদুল মোল্লা, নস্করের ছেলে ইস্রাফিল, আব্বাসের ছেলে তাজমুল ও চাঁদ মিয়ার ছেলে সাইদুরের জন হাজিরায় ভারত গরু পাচার করে আনতেন। এক জোড়া গরু ভারত থেকে আনার জন্য ওমিদুল হাজিরা পেয়ে থাকতো ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। গত শনিবার রাতেও ঠাকুরপুর সীমান্ত পথে গরু আনতে ভারতে যায় ওমিদুলসহ ৭/৮ জন। ভোর ৪টার দিকে সীমান্তের ৮৯ নং মেইন পিলারের ভারতের অভ্যান্তরে গরু চোরাকারবারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে মালোপাড়া বিএসএফ সদস্য। অন্যরা পালিয়ে রক্ষা পেলেও বিএসএফর গুলিবিদ্ধ হয় ওমিদুল।

জানা গেছে, ওমিদুলের লাশ সীমান্ত থেকে উদ্ধার করে ভারতীয় পুলিশ হাসপাতালে নিয়েছে ময়নাতদন্তের জন্য। সকালেই ওমিদুলের লাশের ছবি ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিএসএফর পক্ষ থেকে ঠাকুরপুর বিজিবি ক্যাম্পে পাঠানো হয়। ছবি দেখে পরিবারের সদস্যরা ওমিদুলের লাশ শনাক্ত করেছে। এ ঘটনায় ঠাকুরপুর কোম্পানী কমান্ডার আজাদুল ইসলাম সীমান্তে গুলিবর্ষণ, বাংলাদেশী নাগরিক হত্যার কড়া প্রতিবাদ ও লাশ ফেরত চেয়ে বিএসএফ’র কাছে চিঠি দিয়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত চিঠির কোনো জবাব বিএসএফ না দিলেও শোনা গেছে আজ সোমবার সকালে ঠাকুরপুর সীমান্তের যেকোনো পয়েন্টে বিজিবি-বিএসএফ’র পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে পারে। এদিকে ওমিদুলের পরিবারে চলছে কান্নার মাতম। লাশ ফেরতের অপেক্ষার প্রহর গুনছে ওমিদুলের পরিবারের সদস্যরা। এছাড়া সীমান্তে গুলি বর্ষণের ঘটনায় সীমান্ত ঘেষা গ্রামগুলোতে বিরাজ করছে আতঙ্ক। বিজিবির টহল করা হয়েছে জোরদার। পাশাপাশি এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেছে বরাবরের মতো এবারো কি গরু পাচার মহাজনেরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাবে। কেউ কেউ বলেছে, আসাদুল, ইস্রাফিল, তাজমুল ও সাইদুরের গরু আনতে গিয়ে যদি ওমিদুলের প্রাণ হারাতে হয়, সীমান্তে হত্যা বন্ধ করতে হলে তদন্তপূর্বক তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরী। তবে ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্ত ওই ৪ মহাজন গা ঢাকা দিয়েছে বলেও উঠেছে অভিযোগ।

এলাকায় বেশকিছু সচেতন ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ঠাকুরপুর ও চাকুলিয়া গ্রাম থেকে যারা অবৈধভাবে রাতের আধারে ভারতে ঢুকে গরু আনার কাজ করে তারা পাচিংম্যান চুক্তিতে গরু আনতে যায়। এসব পাচিংম্যান কাজ করে চাকুলিয়া গ্রামের সালাউদ্দিন হালসোনার ছেলে নেপালের অধীনে। নেপাল মোটা অংকের টাকার প্রলোভন দেখিয়ে উঠতি যুবকদের দিয়ে গরুর পাচিংম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়।

চুয়াডাঙ্গা বিজিবি-৬ ব্যাটালিয়নের পরিচালক লে. কর্নেল খালেকুজ্জামান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, বিএসএফ ওমিদুলের লাশ ঘটনাস্থল থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে। এ ঘটনার কড়া প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি লাশ ফেরত চেয়ে বিএসএফের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More