দেশে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ : সর্বোচ্চ শনাক্তের দিনে ৩৭ জনের মৃত্যু

স্টাফ রিপোর্টার: দেশে করোনায় সর্বোচ্চ সংক্রমণের দিনে আক্রান্তের সংখ্যা অর্ধলাখ ছাড়ালো। গত চব্বিশ ঘণ্টায় নতুন করে আরও দুই হাজার ৯১১ জনের শরীরে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়েছে। প্রাণ হারিয়েছেন ৩৭ জন। এক দিনে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা। এর আগে গত রোববার ৪০ জন মারা যান। গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হওয়ার পর এক দিনে এটিই সর্বোচ্চ সংক্রমণ। এ নিয়ে মোট আক্রান্ত হলো ৫২ হাজার ৪৪৫ জন। মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ৭০৯ জনে পৌঁছাল। এর বিপরীতে গত চব্বিশ ঘণ্টায় আরও ৫২৩ জন সুস্থ হয়ে উঠেছে। এ নিয়ে মোট ১১ হাজার ১২০ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলো। করোনা পরিস্থিতি বিশ্নেষণ করে দেখা যায়, প্রথম দিকে শনাক্তের হার কম ছিলো। নমুনা পরীক্ষাও ছিলো একটি প্রতিষ্ঠানের হাতে। এপ্রিলের শুরুতে নমুনা পরীক্ষার আওতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। সংক্রমণের ৩৭ দিনে ১৪ এপ্রিল আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার ছাড়ায়। ৫৭ দিনের মাথায় আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজারে পৌঁছায়। এক হাজার থেকে ১০ হাজারে যেতে সময় লাগে ২০ দিন। এরপর ১১ দিনে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ২০ হাজার, পরের সাত দিনে ৩০ হাজার এবং তার ছয় দিনের মাথায় ২৮ মে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৪০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। শেষ পরের ১০ হাজার রোগী শনাক্ত হতে সময় লাগলো মাত্র পাঁচ দিন। গতকাল মঙ্গলবার দেশে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৫২ হাজার ৪৪৫ জনে পৌঁছালো।

করোনা পরিস্থিতি নিয়ে নিয়মিত ভার্চুয়াল বুলেটিনে গতকাল মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বিস্তারিত তুলে ধরে বলেন, গত চব্বিশ ঘণ্টায় যারা মারা গেছেন, তাদের মধ্যে ৩৩ জন পুরুষ ও চারজন নারী। এর মধ্যে হাসপাতালে মারা গেছে ২৮ জন, বাড়িতে ৯ জন। মৃতদের মধ্যে ১০ জন ঢাকা, ১৫ জন চট্টগ্রাম, তিনজন বরিশাল, চারজন সিলেট, দুজন রাজশাহী, দুজন রংপুর ও একজন ময়মনসিংহ বিভাগের বাসিন্দা। বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে দু’জন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ১০ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ৯ জন, ৪০ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে একজন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১০ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে চারজন, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে একজন মারা গেছেন।

রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় সংক্রমণ পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে উল্লেখ করে ডা. নাসিমা জানান, রাজধানী ঢাকার ছয়টি এলাকায় সংক্রমণের সংখ্যা তিন হাজার ছাড়িয়েছে। এগুলোর মধ্যে মহাখালীতে ৪০৮, মিরপুরে ৩৬৯, যাত্রাবাড়ীতে ৩৫৪, মোহাম্মদপুরে ৩৩৯, মুগদায় ৩৩০ ও উত্তরায় ৩১৫ জন আক্রান্ত হয়েছে।

দেশের ৫২টি ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরীক্ষার তথ্য তুলে ধরে তিনি জানান, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত চব্বিশ ঘণ্টায় আরও ১৪ হাজার ৯০৫টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয় ১২ হাজার ৭০৪টি। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো তিন লাখ ৩৩ হাজার ৭৩টি। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ২২ দশমিক ৯১ শতাংশ। আর শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বিবেচনায় সুস্থতার হার ২১ শতাংশ, মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩৫ শতাংশ।

আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টাইনের বিস্তারিত তুলে ধরে অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, গত চব্বিশ ঘণ্টায় আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে ৩৮৮ জনকে। বর্তমানে আইসোলেশনে রয়েছে ছয় হাজার ২৪০ জন। গত চব্বিশ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড়া পেয়েছে ১৬৯ জন এবং এ পর্যন্ত ছাড়া পেয়েছে তিন হাজার ৪০৭ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে দুই হাজার ৫০৬ জনকে। এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে দুই লাখ ৯০ হাজার ৩৮৫ জনকে। গত চব্বিশ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টাইন থেকে ছাড়া পেয়েছে তিন হাজার ৯৭ জন। এ পর্যন্ত মোট ছাড়া পেয়েছে দুই লাখ ৩১ হাজার ৮৪০ জন। বর্তমানে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছে ৫৮ হাজার ৫৪৫ জন।

করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে ডা. নাসিমা বলেন, বাইরে বের হলে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। নিরাপদ সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার পরামর্শও দেন তিনি।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More