দেশে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনার সংক্রমণ : একদিনে মারা গেছেন ২৬ জন শনাক্ত ১৭৭৩

মাস্ক পরা নিয়ে সরকারের ১১ নির্দেশনা : স্বাস্থ্যবিধি না মানলে ইউরোপ-আমেরিকার মতো অবস্থা হবে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
স্টাফ রিপোর্টার: হঠাৎ করে দেশে করোনার সংক্রমণ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। গত তিন মাসের চেয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৮ হাজার ৬৯৫টি নমুনা পরীক্ষার মাধ্যমে রোগী শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৭৭৩জন। ২৪ ঘণ্টার নমুনা পরীক্ষায় রোগী শনাক্তের হার ৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এমন অবস্থায় সংক্রমণ ঠেকাতে সব স্তরে মাস্ক পরা নিশ্চিতে ১১টি নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। গতকাল সোমবার এক সরকারি তথ্য বিবরণীতে এই নির্দেশনা দেয়া হয়। এতে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধ করতে বাড়ির বাইরে সর্বত্র মাস্ক পরিধান ও স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন করতে হবে। মাস্ক পরার ক্ষেত্রে সরকারের ১১টি নির্দেশনা উল্লেখ করে তা প্রতিপালনের জন্য নাগরিকদের অনুরোধ জানানো হয়েছে তথ্য বিবরণীতে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলছেন, হঠাৎ করে করোনায় মৃত্যু ও আক্রান্তের হার বৃদ্ধি পাওয়া স্বাস্থ্যবিধি না মানারই খেসারত। সামনে আরো খারাপ পরিস্থিতির আশঙ্কা রয়েছে। বাঁচতে হলে সবারই মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। অন্যদিকে করোনার চিকিৎসা ম্যানেজমেন্ট প্রোটোকল ঠিক আছে কি না, সেটা দেখা দরকার। কারণ এখন দ্রুত আক্রান্ত হচ্ছে, মারাও যাচ্ছে দ্রুত।
এদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘিত হলে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি ইউরোপ-আমেরিকার মতো হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আমরা দেশকে সেই পর্যায়ে নিতে চাই না। দেশকে ভালো রাখতে মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে আবারও কঠোর হতে হবে। মানুষ যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে, তা নিশ্চিত করতে আবারও ভ্রাম্যমাণ আদালত বসবে; মাস্ক না পরলে জরিমানা করা হবে। এ বিষয়ে জেলা পর্যায়ে কয়েকটি নির্দেশনা দিয়ে ইতিমধ্যে চিঠিও পাঠানো হয়েছে। গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন উপলক্ষ্যে এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
সংক্রমণ ঠেকাতে সব স্তরে মাস্ক পরা নিশ্চিতে ১১টি নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। সোমবার এক সরকারি তথ্য বিবরণীতে এই নির্দেশনা দেয়া হয়। এতে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধ করতে বাড়ির বাইরে সর্বত্র মাস্ক পরিধান ও স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন করতে হবে। সরকারের নির্দেশনাগুলো হলো ১. সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিসে কর্মরত কর্মকর্তা, কর্মচারী ও সংশ্লিষ্ট অফিসে আগত সেবাগ্রহীতারা বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক ব্যবহার করবেন। সংশ্লিষ্ট অফিস কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিশ্চিত করবেন। ২. সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালসহ সব স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে আসা সেবাগ্রহীতারা আবশ্যিকভাবে মাস্ক ব্যবহার করবেন। সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিশ্চিত করবেন। ৩. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির ও গির্জাসহ সব ধর্মীয় উপাসনালয়ে মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট পরিচালনা কমিটি বিষয়টি নিশ্চিত করবেন। ৪. শপিংমল, বিপণিবিতান ও দোকানের ক্রেতা-বিক্রেতারা আবশ্যিকভাবে মাস্ক ব্যবহার করবেন। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ও মার্কেট ব্যবস্থাপনা কমিটি বিষয়টি নিশ্চিত করবেন। ৫. হাট-বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতারা মাস্ক ব্যবহার করবেন। মাস্ক পরা ছাড়া ক্রেতা-বিক্রেতারা কোনো পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করবেন না। স্থানীয় প্রশাসন ও হাট-বাজার কমিটি বিষয়টি নিশ্চিত করবেন। ৬. গণপরিবহনের (সড়ক, নৌ, রেল, আকাশপথ) চালক, চালকের সহকারী ও যাত্রীদের মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। গণপরিবহনে আরোহণের আগে যাত্রীদের মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও মালিক সমিতি বিষয়টি নিশ্চিত করবেন। ৭. গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিসহ সব শিল্পকারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও মালিকরা বিষয়টি নিশ্চিত করবেন। ৮. হকার, রিকশা ও ভ্যানচালকসহ সকল পথচারীর মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। বিষয়টি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিশ্চিত করবেন। ৯. হোটেল ও রেস্টুরেন্টে কর্মরত ব্যক্তি এবং জনসমাবেশ চলাকালীন আবশ্যিকভাবে মাস্ক পরিধান করবেন। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট মালিক সমিতি নিশ্চিত করবেন। ১০. সব সামাজিক অনুষ্ঠানে আগত ব্যক্তিদের মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করতে হবে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধান নিশ্চিত করবেন। ১১. বাড়িতে করোনা উপসর্গসহ কোনো রোগী থাকলে পরিবারের সুস্থ সদস্যরা মাস্ক ব্যবহার করবেন।
অপরদিকে, দেশে করোনার সংক্রমণ আবার বাড়ছে। প্রতিদিন হাসপাতালগুলোয় করোনা রোগীর চাপ বাড়ছে। গত ৯ সপ্তাহ অর্থাৎ ২ মাসের মধ্যে হাসপাতালে রোগী বেড়েছে ৩৪ দশমিক ২৬ শতাংশ। ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা গত ২ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে একদিনে এর চেয়ে বেশি মৃত্যুর খবর এসেছিলো ৭ জানুয়ারি। সেদিন ৩১ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছিলো স্বাস্থ্য অধিদফতর। গতকাল সোমবার স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। দেশে করোনা ভাইরাসের রোগী কমতে শুরু করলে গেলো বছরে আগস্ট মাস থেকে হাসপাতালের চিকিৎসা কমানো শুরু হয়। গেলো বছরের ৩১ আগস্ট দেশে করোনা রোগীর চিকিৎসায় শয্যা ছিলো ১৫ হাজার ৩৯৩টি। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি করোনা রোগীর চিকিৎসায় ১০ হাজার ৩২৩টি সাধারণ শয্যা এবং ৫৮২টি আইসিইউ শয্যাসহ মোট ১০ হাজার ৯০৫টি শয্যা ছিলো। বর্তমানে করোনা রোগীর চিকিৎসায় শয্যা আছে ১০ হাজার ৮৫৯টি। রোগী হ্রাস পাওয়ায় প্রতিনিয়ত কমছে হাসপাতালের শয্যা। কিন্তু রোগী বাড়তে থাকায় দেশের হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দিয়েছে সরকার।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More