নদীতে ঝাঁপ দিয়ে সবজিব্যবসায়ী টোকন নিখোঁজ : আজ আবারও উদ্ধার শুরু

আলমডাঙ্গার ভাংবাড়ীয়ায় তাসের আসরে পুলিশের হানা : আটক দুজন টাকার বিনিময়ে মুক্ত

আলমডাঙ্গা ব্যুরো/হাটবোয়ালিয়া প্রতিনিধি: আলমডাঙ্গায় পুলিশের দাবড় খেয়ে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে এক সবজি ব্যবসায়ী নিখোঁজ হয়েছেন। তাস খেলার সময় স্থানীয় হাটবোয়ালিয়া ফাঁড়ি পুলিশ তাদের দাবড় দেয়। দুজনকে হাতেনাতে আটক করা হলেও অন্য দুজন মাথাভাঙ্গা নদীতে ঝাঁপ দেয়। একজন নদী থেকে সাঁতরে ডাঙায় উঠলেও অন্যজন নদীর স্রোতে ভেসে যান। আলমডাঙ্গা উপজেলার ভাংবাড়ীয়া গ্রামে গতকাল বুধবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। সংবাদ পেয়ে বিকেলে আলমডাঙ্গা ফায়ার সার্ভিসের একটা টিম ঘটনাস্থলে যায়। তারা লাশ উদ্ধার করতে ব্যর্থ হলে খুলনা ফায়ার সার্ভিসের নিকট ডুবুরি চাওয়া হয়েছে। ডুবুরি এসে পৌঁছলে লাশ পুণরায় উদ্ধারে অভিযান চালানো হবে বলে জানান। নিখোঁজ টোকন আলী (৩৮)ওই গ্রামের ওদুছদ্দিনের ছেলে। তিনি পেশায় একজন সবজিব্যবসায়ী। বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনিসুজ্জামান লালন, আলমডাঙ্গা থানার পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত মোহাম্মদ আব্দুল আলিম, পুলিশ পরিদর্শক অপারেশন একরামুল হোসাইন। স্থানীয়দের অভিযোগ গ্রামের নিরীহ চারজন বাঁশবাগানের নিচে বসে তাস খেলছিলেন। পুলিশ টাকা আদায় করার জন্যই তাদেরকে দাবড় দেয়। পুলিশের দাবি ওই চারজন জুয়া খেলছিলো। পুলিশের ভয়ে দুজন পাশের নদীতে ঝাঁপ দেন। এলাকাসূত্রে জানা যায়, আলমডাঙ্গা উপজেলার ভাংবাড়ীয়া ফেরিঘাটপাড়ার আব্দুুর রহমানের ছেলে আকছেদ আলী, ইয়াদুল হকের ছেলে কবিরুল ইসলাম, ছুন্নত আলীর ছেলে নাজিম উদ্দিন ও ওদুছদ্দিনের ছেলে টোকন আলী গ্রামের পার্শ্ববর্তী মাথাভাঙ্গা নদীর তীরবর্তী বাঁশবাগানের নিচে বসে তাস খেলছিলেন। দুপুর ১২টার দিকে স্থানীয় হাটবোয়ালিয়া ক্যাম্প পুলিশের টুআইসি এএসআই জাহিদুল ইসলাম দুজন কনস্টেবলকে সঙ্গে নিয়ে ওই চারজনকে ধাওয়া দেন। এ সময় কবিরুল ইসলাম ও আকছেদ আলীকে হাতেনাতে আটক করে পুলিশ। পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে অপর দুজন নাজিম উদ্দিন ও টোকন আলী মাথাভাঙ্গা নদীতে ঝাঁপ দেন। কিছুক্ষণ পর নাজিম উদ্দিন সাঁতরে ওপারে চলে গেলেও সাঁতার না জানার কারণে টোকন আলী স্রোতের তোড়ে তলিয়ে যান। “নিখোঁজ টোকনের বড় ভাই আকালী দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, পুলিশের তাড়া  খেয়ে আমার ভাই সাঁতার না জানার পরও নদীতে ঝাপ দিতে বাধ্য হয়েছে। আমার ভাই তাস খেলছিলো, জুয়া খেলেনি। পুলিশ আমার নির্দোষ ভাইকে নদীতে ঝাপ দিতে বাধ্য করেছে। পুলিশের কারণে সে মারা গেছে। আমি এর বিচার চাই। আমি আদালতে যাব।” তিনি আরও বলেন, নদীতে অনেক পানি এখন, প্রচুর স্রোত রয়েছে। ভাইকে হন্য হয়ে খুজেছি, গ্রামের লোকজনসহ স্বজনরা আলমডাঙ্গা-চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহের মহেশপুর পর্যন্ত ভাগ ভাগ হয়ে ভাইয়ের জন্য নদীর পাশে বসে আছি আমরা। গ্রামের কয়েকজন জানান, পরবর্তীতে আটক দুজনের কাছ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা নিয়ে আটক দুজনকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। পরবর্তীতে ঘণ্টাখানেক পরে টোকনকে না পেয়ে পরিবারের লোকজন নদীর ধারে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন। ডাকা হয় আলমডাঙ্গা থেকে দমকল বাহিনী। তারা বেলা ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত তল্লাশি চালিয়েও কোনো খোঁজ পাননি টোকনের। আলমডাঙ্গা ফায়ার স্টেশনের লিডার আব্যুল হাসান মোল্লা দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। আমাদের এখানে ডুবুরি দল নেই। খুলনায় জানানো হয়েছে। আগামীকাল (আজ বৃহস্পতিবার) সকালে তারা এসে উদ্ধার কাজ শুরু করবে। এ ব্যাপারে আলমডাঙ্গা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ আব্দুল আলিম দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, ভাংবাড়িয়া গ্রামের নদীর তীরে বাঁশবাগানে জুয়া খেলা চলছে এমন সংবাদ পেয়ে হাটবোয়ালিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ৩জন ঘটনাস্থলে অভিযান চালায়। দুজনকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করে। বাকি দুজন দৌড়ে পালিয়ে যায়। খেলার আলামত না পাওয়ায় আটক দুব্যক্তিকে স্থানীয় মেম্বারের জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে। দৌড়ে পালিয়ে যাওয়া দুজন পাশের নদীতে লাফ দেন। তাদের ভেতর টোকন নামের একজন সাঁতার জানতেন না, তিনি নিখোঁজ আছেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনিছুজ্জামান দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, ‘ঘটনাস্থলে জুয়ার কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। দুজনকে আটক করা হলেও পরে স্থানীয় ইউপি মেম্বার আসমত উল্লাহর জিম্মায় তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।’ এ ঘটনায় এলাকাবাসীও স্বজনদের অসন্তষ্টি এবং ক্ষোভের মুখে পড়ে পুলিশ।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More