নির্যাতনের ঘটনা না জানাতে শিক্ষার্থীদের মাথায় কুরআন রাখতেন শিক্ষক

চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় নূরানী কিন্ডারগার্টেন মাদরাসায় শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের বর্ণনা

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় একটি মাদরাসায় কুরআন শরিফ নির্ভুলভাবে মুখস্থ বলতে না পারায় শিশু শিক্ষার্থীদের বেধড়ক মারধরের ঘটনা প্রকাশ্যে উঠে এসেছে। এছাড়াও তাদেরকে চড়-ঘুষি দিয়ে নির্মম নির্যাতন করা হতো। নির্যাতনের ঘটনা কাউকে না জানাতে তাদেরকে পবিত্র কুরআন শরিফ মাথায় রেখে করানো হতো ওয়াদা। কোমলমতি ছাত্ররাও কুরআন শপথের কারণে কাউকে বলতো না। ঘটনাটি ঘটেছে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা পৌর এলাকার মোহাম্মদপুর গ্রামে অবস্থিত।

নূরানী কিন্ডারগার্টেন মাদরাসায়। সম্প্রতি শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখে পরিবারের চাপের মুখে পড়ে খালিদ হাসান (১০) নামে এক হেফজ বিভাগের ছাত্র নির্যাতনের ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। এরপর আস্তে আস্তে অন্য শিক্ষার্থীরাও নির্যাতনের বিষয়ে মুখ খুলতে শুরু করে। এছাড়াও অত্র মাদরাসার পরিচালকের ছেলেকে নির্যাতনের পর পবিত্র কুরআন শরিফ মাথায় রেখে ওয়াদার বিষয়টি উঠে আসে। এরপরই অভিভাবকদের চাপের মুখে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসে। মঙ্গলবার (৮ মার্চ) দুপুরে অভিযুক্ত মাদরাসা শিক্ষক হুসাইনকে বরখাস্ত করে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ।

মাদরাসার পরিচালক মাওলানা আব্দুল মালেকের ছেলে মাহমুদুল হাসান (৮) বলেন, ছয় পারার মুখস্থ হয়েছে আমার। গত তিনদিন আগে সকালে সাতসবক শুনানোর সময় একটি লোকমা (ভুল) যায়। এতে আমাকে লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করে শিক্ষক হুসাইন। মারধরের পর আমার মাথায় কুরআন শরিফ রেখে ওয়াদা করায় আমি যেনো কাউকে না বলি। শিক্ষার্থী খালিদ হাসান বলেন, গত রোববার ভোরে সবক (নতুন মুখস্থ পড়া) না হওয়ায় আমাকে বেধড়ক মারধর করে চড়-ঘুষি মারে হুজুর। এরপর আমাকে মারধরের কথা কাউকে না বলতে মাথায় কুরআন শরিফ রেখে ওয়াদা করা হয়। পরের দিন আমি বাড়িতে যায়। আমার মা শরীরে আঘাতের চিহ্নের কারণ জানতে চাপাচাপি করলে আমি ঘটনাটি জানায়।

মাদরাসার পরিচালক মাওলানা আব্দুল মালেক বলেন, আমিও ঘটনাটি জানতাম না। বিষয়টি অন্য এক ছাত্রের অভিভাবকের মাধ্যমে জানতে পেরে ছাত্রদের জিজ্ঞাসা করি। তখন অধিকাংশ ছাত্রই তাদের নির্যাতনের বিষয়ে মুখ খোলে এবং কুরআন শরিফ মাথায় রেখে ওয়াদার কথা বলে। এর মধ্যে আমার ছেলেও আছে। তবে আমার ছেলে আমাকে কিছুই জানায়নি। সকল শিক্ষার্থীদের মনে ভয়ভীতি ঢুকে যাওয়ায় মাদরাসার পরিচালনা কমিটির বৈঠক শেষে অভিযুক্ত শিক্ষক হুসাইনকে বরখাস্ত করে বিদায় দেয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, সাতসবক হলো: পবিত্র কুরআন শরিফের যে পারা থেকে সাত দিনে যত পৃষ্টা মুখস্ত করা হয় সবটাই সাতসবক হিসেবে গণ্য হয় অর্থাৎ নতুন পৃষ্ঠার আগ পর্যন্ত। প্রতিদিন সকালে প্রত্যেক ছাত্রকে সাতসবক মুখস্থ শোনাতে হয় হুজুরকে।

 

উজ্জ্বল মাসুদ/ডিএসকে/আফজালুল হক

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More