নৌকার প্রার্থী খালেকের প্রার্থিতা বাতিল : তিন এমপিকে হুঁশিয়ারি

ঝিনাইদহে পৌর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর প্রচার-প্রচারণায় বাধা

স্টাফ রিপোর্টার: ভোট নিয়ে কঠোর অবস্থানে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় বাতিল করা হয়েছে ঝিনাইদহ পৌরসভার আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মো. আব্দুল খালেকের প্রার্থিতা। গতকাল বৃহস্পতিবার ইসি সচিবালয়ের উপসচিব (নির্বাচন প্রশাসন) মো. মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়। বিগত কয়েক বছরে আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে প্রার্থিতা বাতিলের ঘটনা ঘটেনি। এ ছাড়া আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে একই দিন তিন সংসদ-সদস্যকে হুঁশিয়ার করে চিঠি দিয়েছে ইসি। তারা হলেন, ঝিনাইদহ-১ আসনের সংসদ-সদস্য মো. আব্দুল হাই, ঝিনাইদহ-২ আসনের সংসদ-সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দীকি ও শরীয়তপুর-১ আসনের সংসদ-সদস্য ইকবাল হোসেন অপু। আগামী ১৫ জুন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন, ছয়টি পৌরসভা ও ১৩৫টি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নতুন নির্বাচন কমিশন শপথ নেয়ার পর তাদের অধীনে এটা প্রথম নির্বাচন। নির্বাচন কমিশনের এমন কঠোর অবস্থানে সাধারণ ভোটার ও মানুষের মধ্যে কমিশন সম্পর্কে একটা ইতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ধরনের সিদ্ধান্ত বিগত সময়ের ভোটের সংস্কৃতিকে পালটে দেবে।

কমিশনের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ১৫ জুন ঝিনাইদহ পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে আব্দুল খালেক একজন প্রার্থী। তার সমর্থকরা মিছিল-শোভাযাত্রা করে ১৮ মে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কাইয়ুম শাহরিয়ার জাহিদী হিজলের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর করে। এ ছাড়া আব্দুল খালেক প্রতিদ্বন্দ্বী কাইয়ুম শাহরিয়ার জাহিদী হিজলের প্রচারাভিযানে বাধা প্রদান করেন যা ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া এবং বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে আরও উল্লেখ করা হয়, একজন নির্বাচন কমিশনারের উপস্থিতিতে ২৯ মে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে সব প্রার্থী নির্বাচনি আচরণবিধি মেনে চলতে মৌখিকভাবে অঙ্গীকার করেন। এর পরও আব্দুল খালেকের সমর্থকরা ১ জুন অপর প্রার্থী কাইয়ুম শাহরিয়ার জাহিদী ও তার সমর্থকদের আক্রমণ করে আহত করেছেন। এতে পৌরসভা (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা ২০১৫ এর বিধান লঙ্ঘন হয়েছে। এ কারণে আব্দুল খালেকের প্রার্থিতা বাতিল করা হলো।

এদিকে আব্দুল খালেকের প্রার্থিতা বাতিলের খবর শুনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হতাশায় ভেঙে পড়েছেন। দলের মধ্যে শুরু হয়েছে তোলপাড়। বিকেলে স্থানীয় পায়রা চত্বরে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই এমপির সভাপতিত্বে নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ এবং প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী কাইয়ুম শাহরিয়ার জাহিদীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ চলাকালে আব্দুল খালেকের প্রার্থিতা বাতিলের এ খবর আসে। বিষয়টি নিয়ে রাত ৭টার দিকে জেলা আওয়ামী লীগ নেতারা বৈঠক করেন। বৈঠক থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান জানান, নির্বাচন কমিশনের আদেশের বিরুদ্ধে রোববার উচ্চ আদালতে আপিল করবেন আব্দুল খালেক।

এদিকে বৃহস্পতিবার তিন সংসদ-সদস্যকে হুঁশিয়ারি করে ইসির উপসচিব মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদ সাধারণ নির্বাচন চলমান রয়েছে। নির্বাচনে অনুসরণের জন্য নির্বাচনি আচরণবিধিমালা কার্যকর রয়েছে। এতে নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সমান অধিকারের বিষয় বর্ণিত আছে। কিন্তু লক্ষ্য করা যাচ্ছে কোনো কোনো এলাকায় আচরণবিধির ব্যত্যয় ঘটানো হচ্ছে বা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের প্রচারের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। বিশেষ করে সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির অন্তর্ভুক্ত স্থানীয় সংসদ-সদস্য নির্বাচনি প্রচারে অংশগ্রহণ করছেন, যা আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। আচরণবিধি লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলসহ অর্থদ- ও কারাদ-ের বিধান রয়েছে। এতে আরও বলা হয়, আইনপ্রণেতা বা সংসদ সদস্যগণের মাধ্যমে বা তাদের সংশ্লিষ্টতার কারণে আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা অনাকাক্সিক্ষত। এরূপ ঘটনার ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট সংসদ-সদস্য এড়াতে পারেন না। এ ধরনের ঘটনা ঘটবে না বলে নির্বাচন কমিশন অত্যন্ত আশাবাদী। এ ক্ষেত্রে কমিশন সংসদ-সদস্যগণের ঐকান্তিক সহযোগিতা প্রত্যাশা করছে। তার পরও কোনো কোনো ক্ষেত্রে এরূপ পরিস্থিতির উদ্ভব হলে, সে ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকে কঠোর অবস্থানে যেতে হতে পারে। সরকারি সুবিধাভোগী অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসাবে সংসদ-সদস্যরা সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি এলাকার ভোটার হলে তিনি কেবল তার ভোট প্রদানের জন্য নির্ধারিত ভোটকেন্দ্রে গমন করতে পারবেন। ভোট শেষে ভোটকেন্দ্র ত্যাগ করবেন। এ অবস্থায় তিনি নির্বাচনি আচরণবিধি প্রতিপালন করবেন বলে নির্বাচন কমিশন আশা করে।

স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী কাইয়ুম শাহরিয়ার জাহিদী হিজলের ওপর হামলার ঘটনায় সদর থানায় মামলা হয়েছে। প্রার্থীর ছোট ভাই এমএ লতিফ শাহরিয়ার জাহিদী প্রজ্জল এ মামলাটি করেন। আসামি করা হয়েছে জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আসফাক মাহমুদ জন, ছাত্রলীগ নেতা আল এমরানসহ ২৩ জনকে। ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি সোহেল রানা বৃহস্পতিবার বিকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

পুলিশ জানায়, বুধবার সন্ধ্যায় নারিকেল গাছ প্রতীকের মেয়র প্রার্থী হিজলের ওপর অপর প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র প্রার্থী আব্দুল খালেকের সমর্থকরা হামলা করেন। এতে প্রার্থী হিজলসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। এ ঘটনায় মামলাটি করা হয়েছে। তবে আসামিদের কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি।

প্রসঙ্গত, গত বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে জেলা শহরের ধুপাঘাটা নতুন ব্রিজ এলাকায় ঝিনাইদহ পৌরসভা নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী ও আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সর্মথকদের মধ্যে ধাওয়াপালটা-ধাওয়া এবং সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় স্বতন্ত্র প্রার্থীর গাড়িও ভাঙচুর করা হয়েছে। এতে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী কাইয়ুম শাহরিয়ার জাহেদী হিজল ও তার বড় ভাই পিপুলসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন।

আহতদের মধ্যে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী ও তার বড় ভাইসহ তিনজনের অবস্থা গুরুতর। তাদের সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনার পর জেলা শহরে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন করা হয়েছে। হামলার সঙ্গে জড়িতদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

মেয়র প্রার্থী হিজল অভিযোগ করেন, পৌর এলাকার উদয়পুর গ্রামে জনসংযোগ করে গোবিন্দপুর এলাকায় আসা মাত্র আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আব্দুল খালেকের সর্মথকরা হঠাৎ করে হামলা শুরু করে। এ সময় ইাটপাটকেল নিক্ষেপসহ বেধড়ক মারধর করা হয় তাদের। একপর্যায়ে ধারাল অস্ত্র দিয়ে মাথায় আঘাত করলে গুরুতর আহত হন তিনি। একই সময় তার বড় ভাই পিপুলকেও পিটিয়ে আহত করে হামলাকারীরা। তিনি আরও অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সর্মথকদের হামলায় আরও অন্তত ১৫/১৬ জন আহত হয়েছেন। নির্বাচনে পরাজয় ঠেকাতে এ ধরনের হামলার ঘটনা ঘটনানো হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। সংঘর্ষের একপর্যায়ে নিজের লাইসেন্স করা পিস্তল দিয়ে দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলি বর্ষণের কথা স্বীকার করেন মেয়র প্রার্থী হিজল।

উল্লেখ্য, ১৫ জুন ঝিনাইদহ পৌরসভার নির্বাচন। এ নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী চারজন। নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন মো. আব্দুল খালেক, স্বতন্ত্র কাইয়ুম শাহারিয়ার জাহেদী হিজল, মিজানুর রহমান মাসুম এবং ইসলামী অন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মো. সিরাজুল ইসলাম।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More