পদ্মানদীতে নিখোঁজ আলমডাঙ্গার ৩ দিনমজুরের পরিবারে শোকের মাতম

সাঁতরে জীবন নিয়ে তিনজন ফিরলেও বাকি ৩ জনের সন্ধান না পেয়ে গ্রামে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত
আলমডাঙ্গা ব্যুরো: ফরিদপুরে পদ্মানদীতে ট্রলারডুবির ঘটনায় নিখোঁজ আলমডাঙ্গার হোসেনপুর গ্রামের তিন দিনমজুরের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। ট্রলারডুবির ঘটনার পাঁচদিন পেরিয়ে গেলেও এখনও তাদের সন্ধান পাওয়া যায়নি। ফলে গতকাল গ্রামবাসী ৩ দিনমজুরের গায়েবানা জানাজা করেছেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছে তিন পরিবার। এছাড়া, সাঁতরে জীবন নিয়ে ফিরেছেন একই গ্রামের আরও ৩ দিনমজুর।
সাঁতরে জীবন নিয়ে ফেরা দিনমজুরদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আলমডাঙ্গা উপজেলার হোসেনপুর গ্রামের ৬ দিনমজুর গত ৩১ মে কাজের সন্ধানে ফরিদপুর জেলার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান। ফরিদপুর পৌঁছে তারা সকলে ফরিদপুর বাইপাস সড়কের আদমহাটে উপস্থিত হন। সেখানে ফরিদপুর সদর উপজেলার মোহাম্মদপুর খার কান্দি গ্রামের লালন ফকির নামের এক ব্যক্তি তাদেরকে দৈনিক ৬শ’ টাকা হিসেবে বাদাম তুলতে শ্রমিক নিয়োগ করেন। লালন ফকিরের জমি পদ্মা নদীর ওপারে অবস্থিত। প্রতিদিন ছোট ট্রলারে করে লালন ফকিরের ছেলে শাকিল ফকির শ্রমিকদের পদ্মার ওপারে বাদাম ক্ষেতে নিয়ে যাওয়া আসা করতেন। গত ৫ মে মোট ২৭ জন দিনমজুর ট্রলারে তুলে নিয়ে শাকিল ফকির পদ্মার ওপারে নিয়ে যাচ্ছিলেন। ছোট ট্রলারে অতিরিক্ত যাত্রী তোলায় নদীর মাঝামাঝি শয়তানখালির ঘাট বরাবর ট্রলারটি পানিতে ডুবে যায়। কিছুক্ষণের ব্যবধানে ঘটনাস্থলে আরেকটি ট্রলার উপস্থিত হলে অনেকে সাঁতরে সে ট্রলারে উঠে জীবন বাঁচান। তাদের মধ্যে আলমডাঙ্গার হোসেনপুরের ৩ যুবক জীবন নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। কিন্তু ¯্রােতের তীব্র তোড়ে পানিতে ডুবে হারিয়ে গেছেন হোসেনপুরের ৩ জনসহ ৫ দিনমজুর। নিখোঁজ হোসেনপুরের তিন দিনমজুর হলেন নূরুল হকের ছেলে দুই সন্তানের জনক শাহাবুল হক (৩২), আয়নাল হকের ছেলে শিলন (২৫) ও তারাচাঁদ ম-লের ছেলে দুই সন্তানের জনক আব্দুর রাজ্জাক (৫০)। এছাড়া জীবন বাঁচিয়ে বাড়ি ফিরেছেন একই গ্রামের আজিজুল হকের ছেলে একরামুল হক (৩৮), হানেফ ম-লের ছেলে মোমেন হক (২৫) ও লস্কর ম-লের ছেলে আমজেদ আলী (৩৫)। ¯্রােতের তোড়ে হারিয়ে যাওয়া ৩ দিনমজুরের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। গতকাল গ্রামবাসী ৩ দিনমজুরের গায়েবানা জানাজা করেছে।
এদিকে, যার ক্ষেতে কাজ করতে গিয়ে এই দুর্ঘটনা ঘটে ফরিদপুর জেলার সেই লালন ফকির নিখোঁজদের কোনো আর্থিক সহযোগিতা করেননি বলে তাদের পরিবার জানায়। অতিরিক্ত যাত্রী ট্রলারে ওঠানোর ফলে ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটলেও ট্রলারের মালিক ও চালক শাকিল ফকিরও কোনো দায় নেননি। তিনিও নিহতদের পরিবারের কোনো খোঁজ নেননি বলে জানা যায়। মোবাইলফোনে কথা হয় ফরিদপুর জেলার চরনাসিরপুর ইউনিয়নের সংশ্লিষ্ট মেম্বার রিপন ফকিরের সাথে। তিনি জানান, ট্রলারডুবির সংবাদ পেয়ে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছিলেন। সে সময় পুলিশ লালন ফকিরকে আটক করে জেলহাজতে প্রেরণ করেছে।
সরেজমিন হোসেনপুর গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, নিখোঁজ ৩ হতদরিদ্র দিনমজুরের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। শাহাবুল হকের দেড় বছরের শিশুকন্যা ক্রন্দনরত মা ও দাদাদাদির মুখের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখা গেছে। এখনও এ অবুঝ শিশুটি বুঝতে শেখেনি কী মূল্যমান সম্পদ সে হারিয়েছে। শাহাবুল হকের বৃদ্ধ বাপ-মায়ের আহাজারিতে বাড়ির বাতাস ভারি হয়ে আছে। নিখোঁজ যুবক শিলনের স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা। তিনি এখনও মাঝে মধ্যেই মুর্ছা যাচ্ছেন। তিনি নিজের ও অনাগত সন্তানের ভবিষ্যতের আশঙ্কায় ডুকরে ডুকরে কাঁদছেন। কাদঁছেন তার মা-বাপ ও ভাইবোন। অনুরূপে, বিলাপ করতে দেখা গেছে দিনমজুর আব্দুর রাজ্জাকের স্ত্রী ও মা-বাপকে। ঘরের ভেতর থেকে ফুঁফিয়ে ফুঁফিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বের হয় আব্দুর রাজ্জাকের একমাত্র ছেলে। নিখোঁজ ৩ দিনমজুরের পরিবারে শুধু তারাই ছিলেন একমাত্র উপার্জনক্ষম। ফলে অভাবের সংসারে অজানা ভবিষ্যতের আতঙ্কের ছায়া ছিলো সবার চোখে মুখে।
আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার লিটন আলী নিখোঁজ ৩ দিনমজুরের পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছেন। তিনি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সাধ্যমত আর্থিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধা প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করতেও চেষ্টা করবেন বলে জানান।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More