পাচারের ৪৫ বছর পর পাকিস্তান থেকে নিজ পরিবারে ফিরতে চান আলমডাঙ্গা বাবুপাড়ার কোমো খাতুন

রহমান মুকুল: মাত্র ৮-১০ বছর বয়সে পাচার করে পাকিস্তানে নিয়ে বিক্রি করা হয়েছিলো আলমডাঙ্গা বাবুপাড়ার দরিদ্র পরিবারের শিশুকন্যা কোমো খাতুনকে। পাকিস্তানের করাচিতে বসবাসকারী কোমো খাতুনের এখন বয়স ৫৫-৫৭ বছর। তিনি চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা শহরের বাবুপাড়ার মৃত শেখ মনির উদ্দীনের মেয়ে। ১৯৭৫-৭৬ সালের দিকে তাকে পাচার করে পাকিস্তানে নিয়ে করাচির (ইসলামাবাদ) এক ব্যক্তির নিকট ৫৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়া হয়। পরে ওই ক্রেতা তার প্রতিবন্ধী ছেলের সাথে কোমো খাতুনের বিয়ে দেন।
কয়েক দিন পূর্বে পাকিস্তানের এক ইউটিউব চ্যানেলে সাক্ষাতকারের সময় এসব তথ্য জানিয়ে কোমো খাতুন জীবনে একবারের জন্য হলেও বাংলাদেশে তার পরিবারের কাছে ফেরার আকুতি প্রকাশ করেন। গত ৩ দিন পূর্বে পাকিস্তান টুডে নামক ইউটিউব চ্যানেলে উর্দু ভাষায় পাকিস্তানি যুবক ওয়ালিউল্লাহ মারুফকে এক সাক্ষাতকার দেন তিনি। ওই সাক্ষাতকারে তিনি উল্লেখ করেন, কোমো খাতুনের বয়স যখন ৮ বছর তখন পাকিস্তানে নিয়ে গিয়ে তাকে বিক্রি করে দেয়া হয় ৫৫ হাজার টাকায়। যে ব্যক্তি তাকে ক্রয় করেন তিনি তার প্রতিবন্ধী ছেলের সাথে বিয়ে দেন। ( সাক্ষাৎকারের ভিডিওতে কোমো খাতুনের পাশে তার প্রতিবন্ধী স্বামীকে বসে থাকতে দেখা গেছে।) যখন বিয়ে হয় তখন কোমোর বয়স ছিলো মাত্র ১১-১২ বছর এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিটির বয়স ৩০ বছর। তিনি গত ৪৫ বছর ধরে প্রতিবন্ধী স্বামীর সংসার করছেন।
সাক্ষাৎকারে কোমো খাতুন আরও জানান, তার ভাইয়ের সাথে শত্রুতার জের ধরে বাংলাদেশি এক মহিলা তাকে ফুঁসলিয়ে সাথে নিয়ে ভারত হয়ে সড়কপথে পাকিস্তানের করাচীতে চলে যান। সেখানে ৩ বছর যাবৎ নানাভাবে নির্যাতনের পর তাকে বিক্রি করে দেয়া হয়। শুধু তিনি একা নন, সেই সময়ে আরও অনেক বাংলাদেশি মেয়ে একসাথে এভাবে অপহরণের শিকার হন। কোমো খাতুন উল্লেখ করেন, তারা ৫ বোন ও ২ ভাই। যাদের মধ্যে ৪ বোন ও ২ ভাই আলমডাঙ্গা বাবুপাড়ায় থাকেন। তিনি মেজো বোনের নাম বলেছেন আমিরন।
এদিকে, উর্দু ভাষায় এ সাক্ষাতকারের ভিডিওটি কয়েক দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। ভিডিওটি আলমডাঙ্গা পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর বাবুপাড়ার আলী আজগর সাচ্চুর নজরে আসে। তিনি খুঁজে বের করেন পাচার হওয়া কোমো খাতুনের পরিবারকে। গতকাল ১১ অক্টোবর বিকেলে কোমো খাতুনের বোনদের খুঁজে বের করেন তিনি।
ইতোমধ্যে কোমো খাতুনের পিতা শেখ মনির উদ্দীন মারা গেছেন। মারা গেছেন তার দু ভাইয়ের মধ্যে এক ভাই ও ৫ বোনের এক বোন। বেঁচে থাকা একমাত্র ভাই মজিবর রহমান। এদিকে বোনের এ সংবাদ পেয়ে কাজী সাচ্চুর বাড়ি ছুটে আসেন সাজেদা খাতুন ও শুকুরন নেছা। আনু নামের আরেক বোন বাইরে ছিলেন। এ সময় দু বোন হারিয়ে যাওয়া বোন কোমো খাতুনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, কোমো ছিলেন সুন্দরী ও মাথায় বড় চুল ছিল বলেও উল্লেখ করেন। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও তাকে না পেয়ে পরিবারের লোকজন ভেবেছিল মারা গেছেন তিনি। অবশেষে কোমোর সংবাদ জানতে পেরে দু’বোন ভীষণ খুশি। তারা হারানো বোনকে ফিরে পেতে সকলের সহযোগিতা চেয়েছেন।
আলমডাঙ্গা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাড সালমুন আহমেদ ডন জানান, এ ব্যাপারে স্থানীয়ভাবে যদি সহযোগিতা করতে হয় তা করা হবে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার বলেন, পাকিস্তান টুডে নামক ইউটিউব চ্যানেলের ওয়ালিউল্লাহ মারুফ সহযোগিতা করলে সহজে কোমো খাতুন বাংলাদেশে আসতে পারবেন। পাকিস্তানস্থ বাংলদেশ দূতাবাসে তিনি যোগাযোগ করলে সহজেই সম্ভব হবে। তাছাড়া, আমাদের সহযোগিতার প্রয়োজন হলে তা করা হবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More