পিতার দোকানে বসে অপদস্থ মাদরাসা ছাত্রী মনের ঘৃণায় নেভালো জীবন প্রদীপ

চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের মাছপট্টির লেবার কালামের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সোচ্চার সচেতনমহল

স্টাফ রিপোর্টার: চরম অন্যায়ের প্রতিকার না পেয়ে মনের ঘৃণায় নিজের জীবন প্রদীপটাই নিভিয়ে দিলো ১৭ বছরের কিশোরী মাসুমা আক্তার। গতকাল রোববার বিকেলে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের হকপাড়াস্থ নিজবাড়িতেই গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে সে।
চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনের অদূরবর্তী গমপট্টির নিকটস্থ পিতার চা দোকানে বসে মাছপট্টির শ্রমিক আরামপাড়ার কালাম কর্তৃক লাঞ্ছিত হওয়ার দুদিনের মাথায় মাসুমার আত্মহত্যার ঘটনা এলাকাবাসীকে কিংকর্তব্য বিমুঢ় করেছে। সচেতনমহল অভিযুক্ত উত্যাক্তকারী কালামের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে। যদিও পরবর্তি নিরাপত্তার কথা ভেবে পুলিশে নালিশ করতেও ভয়পাচ্ছিলেন মাসুমার পিতা চা দোকানি আমিনুল ইসলাম।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের হকপাড়ার আমিনুল ইসলামের ৪ কন্যার মধ্যে ছোট ছিলো মাসুমা। মাসুমার বড় বোনদের বিয়ে হয়ে গেছে। সে স্থানীয় মাদরাসার একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী। লেখাপড়ার পাশাপাশি পিতার ব্যবসায় সহযোগিতা করতো। অন্যান্য দিনের মত গত ১৮ মার্চ শুক্রবার সকালে চা দোকানে বসে দোকানদারি করছিলো মাসুমা। সকাল আনুমানিক ৮টার দিকে দোকানের বেঞ্চে বসে একজন চায়ের অডার দেন। এ সময় মাছপট্টির লেবার আরামপাড়ার বাসিন্দা কালাম ছুটে গিয়ে দোকানে বসে চা পান করা ব্যক্তির সাথে বাকবিত-া শুরু করে। এক পর্যায়ে চা পানকারীকে মারধর শুরু করে। দোকানি মাসুমা দোকানের মধ্যে মারামারি করতে বারণ করে। এক পর্যায়ে কালাম দোকানি মাসুমাকে চড় থাপ্পড় মারে। ঘটনাটি প্রথমে চালের আড়ৎ মালিক সমিতির সভাপতিকে জানানো হয়। তিনি মাছ ব্যবসায়ী কমিটির নেতৃবৃন্দকে জানানোর জন্য বলেন। ঘটনার দুদিন অতিবাহিত হলেও প্রতিকার মেলেনি। স্থানীয় অনেকে কালামের বিরুদ্ধে পুলিশে নালিশ করার পরামর্শ দিলেও মাসুমার পিতা সহাস করেনি। এরই এক পর্যায়ে গতকাল রোববার বিকেলে নিজেদের বাড়ির নিজ ঘরে উড়না দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে। বিকেল ৫টার দিকে মাসুমাকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা দেন। মেয়ের লাশ দেখে হতদরিদ্র পিতা কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, মেয়েকে মারলো। মারের বিচার হলো না। মনের ঘৃণায় মেয়ে চলে গেলো। এখন ওদের বিরুদ্ধে মামলা করতে গেলে আমারও প্রাণে মেরে ফেলবে।
পরিবারের সদস্যরা জানায়, চার বোনের মধ্যে মাসুমা আক্তার ছিল সবার ছোট। দীর্ঘদিন যাবত মাসুমা আক্তারকে উত্ত্যক্ত করে আসছিল কালাম। এর আগে এসিড মারার হুমকিও দিয়েছিল। গত শুক্রবার দোকানের মধ্যে কালামসহ দুজন মারামারি করে। এতে প্রতিবাদ করে মাসুমা আক্তার। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে মাসুমাকে চড়-ঘুষি মারে কালাম। সবার অজান্তে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে।
চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনিছুজ্জামান লালন বলেন, বাবা অসুস্থ হওয়ার মাসুমা আক্তার পড়াশোনার পাশাপাশি দোকান দেখাশোনা করত। শুক্রবার দোকানের মধ্যে স্থানীয় এক যুবক তাকে চড়-ঘুষি মারে। এতে লোকলজ্জায় মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে। সুরতহাল প্রতিবেদন শেষে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। আমরা ঘটনাটি তদন্ত করছি। অভিযুক্তকে আটকের জন্য অভিযান চালাচ্ছি।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More